নববর্ষের আগে হস্তশিল্পের খোঁজ

প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৮

নববর্ষের আগে হস্তশিল্পের খোঁজ

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : চার বন্ধু মিলে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের একটি বাসায় থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়তি হাওলাদার। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাঙালি ঢঙে বাসা সাজাবেন তাঁরা। ক্লাস শেষে এসেছেন দোয়েল চত্বরে। দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে কিনছেন মাটির পটারি, বেতের ঝুড়িসহ আরো কিছু পণ্য।

বললেন, হাতে তৈরি তৈজস ছাড়া বাসায় নববর্ষের মুড আসে না। এখানকার পণ্যের দামগুলো হাতের নাগালে। তাই এখানে আসা।

প্রিয়তির মতো অনেকেই ভিড় করেছেন দোয়েল চত্বরের ফুটপাতের এই বাজারে। ঘুরে ঘুরে কিনছেন বাঁশ, বেত, ছন, কাশফুল, তালপাতা, মাটি, তামা-পিতল ও পাটের তৈরি তৈজস। পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে ভিড় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ব্যস্ততার মধ্যেও দোকানিদের মুখে তাই হাসি

 

মাটির পণ্য

দোয়েল চত্বরের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেল, মাটির হাঁড়িতে রং করছেন মৃিশল্পীরা। দোকানিদের একজন শাহিদুল ইসলাম জানান, মাটির তৈরি পণ্যগুলোর রং সহজে হারায় না, টেকসইও। দাম কম হওয়ায় চাহিদাও বেশি।

আরো কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেল, হাঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ২৫০ টাকায়। হারিকেন রয়েছে তিন থেকে চার ধরনের। ছোটগুলো ৮০ টাকা, মাঝারি ১২০ ও ১৫০ টাকা।

সবচেয়ে বড়টা ২০০ টাকা। বিভিন্ন ধরনের মাটির ল্যাম্প ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে, কাপ-পিরিচ ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ঘোড়ার গাড়ি ২০০ টাকা, ব্যাংক ৫০ থেকে দেড় শ টাকা, কলমদানি ৩০ থেকে ৮০ টাকা, তৈরি হাতি, ঘোড়া, খরগোশ ৫০ থেকে শুরু করে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষভাবে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ট্যাপা পুতুল ৫০ থেকে ১৫০, প্যাঁচার মুখোশ ৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, টেরাকোটা ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফল, পাখি, বিভিন্ন খেলনাও রয়েছে বিভিন্ন দোকানে।

 

তামা-পিতল

হস্তশিল্পের মধ্যে তামা ও পিতলের তৈরি পণ্যগুলোর দাম কিছুটা বেশি। তামা-পিতল ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম জানান, এসব পণ্য তৈরি করতে বিভিন্ন সাঁচ তৈরি করতে হয়। তামা বা পিতল গলিয়ে এসব সাঁচে ঢেলে কয়েক স্তরে পণ্যগুলো তৈরি হয়। খাটুনি ও সময় বেশি লাগায় মজুরিও পড়ে বেশি। তাই দামটাও একটু বেশি হয়।

ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পিতলের প্রদীপ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ছোট আকারের বাঘ ও হাতি ৬০০ থেকে শুরু, ঘোড়া আকারভেদে ২০০ থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং পাখি ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া মোমদানি সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা, হারিকেন আকারভেদে ৪০০ থেকে ছয় হাজার টাকা, বক ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার শোপিস হাজার টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

 

পাটপণ্য

দোয়েল চত্বর থেকে পাটের তৈরি ডাইনিং টেবিল ম্যাট, ব্যাগ ও দোলনা কিনেছেন মায়িশা তাবাসসুম। বললেন, ‘ঘর-গেরস্তালির কাজে প্লাস্টিকের তুলনায় পাটের তৈরি ছোটখাটো জিনিস ব্যবহার করি বেশি। ঘর সাজাতেও পাটপণ্য আমার পছন্দ। এসব পণ্যের দামও নাগালের মধ্যে।’

দোকান ঘুরে তাঁর কথার প্রমাণও মিলল। ছয়টি ছোট টেবিল ম্যাটের সেট বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, বড়গুলো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। শিকা ২০ থেকে ৮০ টাকা, দোলনা ৯৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, পাটের খাবার নেওয়ার ব্যাগ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, ভ্যানিটি ব্যাগ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাটের তৈরি টেবিল ল্যাম্প ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া আকারভেদে পুতুল ৩০ টাকা ও ফলের ঝুড়ির দাম ১৫০ থেকে শুরু।

 

বেত ও বাঁশ

বেতের তৈরি পণ্য বেশ টেকসই হয়। চাহিদাও রয়েছে বেশ।

বেতের তৈরি ছোট মোড়া সাড়ে তিন শ থেকে ৮০০, ফলের ঝুড়ি ১৫০ থেকে দেড় হাজার, কাপড় রাখার ঝুড়ি ৮০০ থেকে দুই হাজার, ফুলদানি ৩০০ থেকে এক হাজার, দোলনা দেড় হাজার থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাঁশের তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে এখন চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মাথাল, পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকায়। এ ছাড়া চালুনি ১৫০ থেকে ২৫০, ডালা ১০০, মাছ ধরার পলো ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট শোপিস হিসেবে রাথার পলো ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

এ ছাড়া বাঁশের টেবিল ল্যাম্প ৩৫০ থেকে শুরু করে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

 

নকশিকাঁথা

দীর্ঘদিন ধরেই শহুরে মানুষের মনজুড়ে রয়েছে নকশি ফোঁড়ের সূক্ষ্ম সৌন্দর্য। তবে এর বেশির ভাগই তৈরি হয় গ্রামে। শুধু কাঁথায় নয়, বিছানার চাদর কিংবা বালিশের খোলেও নকশার আলপনা তোলা হয়।

আড়ংয়ের এক বিক্রয়কর্মী জানান, সিঙ্গেল,  সেমি ডাবল, কুইন বা ডাবল এবং থ্রিইন—এই চার ধরনের নকশিকাঁথা বিক্রি করেন তাঁরা। সাধারণত চার হাজার টাকা থেকে শুরু হলেও কাজের ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারিত হয়।

হাতে বুনে নকশা করা ব্যাগ পাওয়া যায়। এগুলোর দাম ১২৫ টাকা থেকে শুরু। রয়েছে বেবি কাঁথা, কুশনকভার, ওয়ালম্যাট, ঘরে পরার স্যান্ডেল, পেনসিল বক্স ও বিভিন্ন ফ্রেম। ১০০ থেকে শুরু করে এগুলোর দাম কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত।

 

কোথায় পাওয়া যায়

হ্যান্ডিক্রাফটের জন্য রাজধানীর সুপরিচিত জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর। এখানে মাটি, পাট, বাঁশ, কাঠের তৈরি পণ্য পাওয়া যায় বেশি।

এ ছাড়া রাজধানীতে ছড়িয়ে থাকা আড়ং, প্রবর্তনা, দেশীদশ, স্বপ্নসহ বিভিন্ন দোকানে হাতে তৈরি মাটি, কাঠ, বেত, বাঁশ, পাটের বিভিন্ন নকশা করা পণ্য পাওয়া যায়।

মাটির তৈরি পণ্যগুলো মিরপুর-২ নম্বরে রাস্তার পাশে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশে ৩০০ ফুট রাস্তায়, মহাখালী, আসাদগেট ও ধানমণ্ডি লেকের পাশে পাওয়া যায়। পাটপণ্যের জন্য ফার্মগেটের মণিপুরি পাড়ায় বড় একটি প্রদর্শন ও বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে পাট এবং পাটজাত বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়।

পুরান ঢাকার ঠাঁটারি বাজারেও হাতে তৈরি পণ্যের দোকান রয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..