সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৪২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে জেলায় ১১ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে চারটি জোড়া খুন—দুটি জোড়া সিলেট নগরে এবং দুটি জোড়া দুই উপজেলায়। এ ছাড়া ছিনতাইকারীদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার নগরে খুন হয় মা ও ছেলে। এই হত্যার রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। কেউ গ্রেপ্তারও হয়নি।
রবিবার দুপুরে নগরের মীরাবাজারের মিতালী আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে রোকেয়া বেগম (৪০) ও তাঁর ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনের (১৬) লাশ এবং রোকেয়ার চার বছর বয়সী মেয়ে রাইসাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, এই শিশুকেও দুর্বৃত্তরা গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিল। তার গলায় দাগ রয়েছে। হয়তো শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাকে মৃত ভেবে হত্যাকারীরা চলে যায়। এ ঘটনায় রবিবার রাতেই নিহত নারীর ভাই জাকির হোসেন সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। দুই সপ্তাহ আগে রোকেয়ার বাসায় হামলা, মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেওয়া এবং তাঁকে মারধরের ঘটনা উল্লেখসহ ১১ জনের নাম রয়েছে মামলার এজাহারে। পুলিশ এখনো হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ কাজের মেয়ে তানিয়া বেগমেরও খোঁজ পায়নি পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে—এমন সন্দেহে এজাহারে যে ১১ জনের নাম আছে তাদেরও অটক করতে পারেনি পুলিশ।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন বলেন, ‘তদন্তে কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সব তথ্য গণমাধ্যমে দিচ্ছে না। তবে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আসামি কেউ ধরা পড়েনি। তবে আমরা হাল ছাড়িনি। আমরা আশাবাদী, এর রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। দুই সপ্তাহ আগের ঘটনা (যুবকদের হামলা, মারধর ও মোবাইল ফোন লুট) এবং উদ্ধার হওয়া শিশু রাইসার দেওয়া তথ্য সামনে রেখে পুলিশ তদন্তকাজ এগিয়ে নিচ্ছে।’
গত ২৪ মার্চ গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকরে মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির বৈঠক চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় অর্ধশত লোক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। নিহতরা হলেন সালুটিকর মিত্রিমহল গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মনাই মিয়া (২৬) ও আজিজুল ইসলামের ছেলে রুমেল আহমদ (২৮)। এ ঘটনায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২০০-২৫০ জনকে আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
একই দিন বিকেলে ওসমানীনগর উপজেলার একারাই গ্রামের ছোট হাওর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের হত্যা করে দুর্বৃত্তরা হাওরে ফেলে যায়।
১১ মার্চ রাতে নগরের মীরের ময়দান এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৬ মার্চ বিশ্বনাথ উপজেলার রঘুপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় আজির উদ্দিন (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। ২৫ মার্চ রাতে নগরের কদমতলী এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিদ আলম সালাম খুন হয়।
এর আগে ৬ মার্চ সকালে নগরের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ৩ নম্বর সড়কে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে শ্রমিক লীগ নেতাসহ দুজন নিহত এবং অন্তত ৪০ জন আহত হয়। নিহতরা হলেন সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগ নেতা বরইকান্দি গ্রামের মাসুক মিয়া (৫০) এবং একই এলাকার বাবুল মিয়া (৩৫)। এ ঘটনায় ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৭০০-৮০০ জনকে আসামি করে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করা হয়। পুলিশ এ পর্যন্ত মাত্র সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
একের পর এক খুনের ঘটনায় নাগরিক সমাজে উদ্বেগ বাড়ছে। এ জন্য সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও বিচার না হওয়াকে দায়ী করছেন তাঁরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এক মাসে চারটি জোড়া খুন এবং আরো খুনের ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির বিষয়টিই প্রকাশ পায়। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এমনটি ঘটছে। আগের খুনের ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এমনটি ঘটত না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd