সিলেট ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৩ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
জৈন্তাপুর প্রতিনিধি : সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় প্রকাশ্যে চলছে পাহাড়-টিলা কাটার মহোৎসব। অভিযোগ ওঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই অবৈধ টিলা কাটা চলছে।
শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উপজেলার হরিপুর ৭নং গ্যাস কূপের (উৎলার পার) মসজিদের পাশে মড়া মিয়ার বাড়িসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বড় বড় পাহাড় কাটার মহোৎসবে মেতেছে পাহাড় খেকোরা। টিলা কাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় পরিবেশ ধ্বংস কাজ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেক সময় প্রশাসনের চোখের সামনেই ধ্বংস করা হচ্ছে বড় বড় টিলা। এমনকি এই উপজেলা জুড়ে টিলা কর্তন উৎসব চলছে নির্ভয়ে। দেখার যেনো কেউ নেই! ফলে টিলা কেটে পকেট ভারি করছে অসাধূ খেকোরা।
স্থানীয়রা বলছেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তেও অসাধূ প্রভাবশালীরা একের পর এক টিলা কেটে জৈন্তাপুর উপজেলার সৌন্দর্যকে কেড়ে নিচ্ছে। জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড় কাটা বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতার কথা বলা হলেও মাটি বিক্রির কারবারীদের কাছে এসব শুধুই নীতিবাক্য। বাড়ি ঘর তৈরীর জন্য সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন টিলা কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে।
তারা বলছেন, প্রকল্পে বালুর বিকল্প হিসেবে ভরাটের জন্য ঢালাওভাবে ব্যবহার করা হ”ছে টিলার মাটি। এক সময় এই উপজেলার হরিপুর, বাগেরখাল, শ্যামপুর, চিকনাগুল, চারিকাটা, জৈন্তাপুর, সারীঘাট, নলজুরি, ৪নং জৈন্তা ও শ্রীপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় প্রচুর পাহাড় ও টিলা থাকলেও এখন টিলার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে।
পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, যে হারে টিলা কাটা হচ্ছে তাতেই অচিরেই জৈন্তাপুর টিলা শূন্য হয়ে যেতে পড়ে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত সিলেট জেলার ৬টি উপজেলার পাহাড় টিলা কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও থেমে নেই টিলা কাটা। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু টিলার মাটি ট্রাকে করে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। টিলা কাটার মতো লাভ জনক ব্যবসা ছাড়তে রাজি নয় পাহাড় খেকোরা।
জানা যায়, টিলার মাটি ফুট প্রতি ১০ টাকা করে বিক্রয় করা হয়। ভূমি আবাসনের জন্য প্লাট ভালো দামে বিক্রয় করা যায়। এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা অনেকেই এখন কোটিপতি। জৈন্তাপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় প্রচুর পাহাড়। আর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণেই পর্যটকেরা ভিড় করে থাকেন এই ভূ-স্বর্গে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে জৈন্তাপুরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যও হারিয়ে যেতে বসেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি জৈন্তাপুরের হরিপুর ৭নং গ্যাস কূপের (উৎলার পার) মসজিদের পাশে মড়া মিয়ার বাড়ির ১টি বড় টিলা কাটার দৃশ্য সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এক সময় টিলাটি তার অস্তিত্ব হারাবে। এভাবেই জৈন্তাপুরের বিভিন্ন স্থানের টিলার অস্তিত্ব মুছে দেয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসী বলছেন, জৈন্তাপুরের হরিপুরে প্রকাশ্যে চলছে পাহাড় টিলা কাটার মহোৎসব।প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ টি ট্রাক গাড়িতে করে কর্তন কৃত পাহাড়ের মাটি বিক্রি করছে সিন্ডিকেট চক্রটি। প্রতি ১৫০ ফুট পাহাড়ি মাটি থেকে নেয়া হয় ১০০০-১৫০০ টাকা। পরিবেশবিদরা দ্রুত এগিয়ে না এলে এই উপজেলার টিলাগুলো পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। অচিরেই হারিয়ে যাবে জৈন্তাপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
এ বিষয়ে জানতে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম বলেন, আমি পাহাড় কাটার প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার জন্য উপজেলার ৬ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের চিটি দিয়ে অবগত করেছি। তারা এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন জমা দেননি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd