আইনে কোনো আকারে যেন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা অন্তর্ভুক্ত না হয় : ড. ইফতেখারুজ্জামান

প্রকাশিত: ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৭

ডেস্ক নিউজ : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা অন্য কোনো আইনে কোনো আকারে যেন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা অন্তর্ভুক্ত না হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) আয়োজিত এক সংলাপে তিনি একথা বলেন।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে বলে সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারসংশ্লিষ্ট ধারাগুলো এবং স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোনো আইন প্রণয়ন করা সরকারের উচিত নয়।
তাই ৫৭ ধারা বাতিল করে- তা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা অন্য কোনো আইনে কোনো আকারে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
টিআইবি ধানমণ্ডি কার্যালয়ে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭’ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাবিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপনে টিআইবির সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. এ. টি. এম. শামসুল হুদা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার ওপর অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদক শারমীন রিনভী এবং দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ইফতেখার মাহমুদ।
স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে বলে সংলাপে বক্তারা তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, অসাধু কিছু ব্যক্তির অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
তারা বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। দুঃখজনক এ পরিস্থিতি গণমাধ্যম, গণতন্ত্র বা রাষ্ট্রের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।
দুর্নীতি প্রতিরোধসহ সুশাসন ও সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুফল পেতে গণমাধ্যমকর্মীদের নির্ভয়ে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই বলে অভিমত দেন বক্তারা।
এক্ষেত্রে সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতিগ্রস্ত ও প্রশ্রয়দানকারীদের চিহ্নিত করতে গণমাধ্যমকে সরকার সহায়তা করলে- তা সরকারের জন্যই ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন বক্তারা।
একইসঙ্গে এই প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
সাংবাদিকরা অনেক সাহসের সঙ্গে কাজ করছে এবং সাংবাদিকতার গুরুত্ব সমাজ ও সরকারকে বুঝতে হবে বলে মন্তব্য করেন গওহর রিজভী।
তিনি বলেন, দুর্নীতি থাকলে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা যায় না। আমাদের যদি দারিদ্র্য দূর করার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে অবশ্যই দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে।
দুর্নীতির প্রতিবেদন করতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে হুমকিসহ বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের জবাবে গওহর রিজভী বলেন, গণমাধ্যমকে হস্তক্ষেপ করার কোনো নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে দেয়া হয়নি। কেউ যদি হস্তক্ষেপ করে থাকে, সেটা তার নিজ স্বার্থে করছে এবং এর দায়িত্ব তার নিজের।
টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. এ. টি. এম. শামসুল হুদা বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যমের মালিকানা ব্যবসায়ীদের হাতে থাকায় ব্যবসার ঝুঁকির কথা চিন্তা করে গণমাধ্যম মালিকরা অনেক সময় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চান না।
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে না উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের মাধ্যমে দেশের সেবা করতে নিজেদের টিকে থাকার উপযুক্ত কৌশল উদ্ভাবন ও অবলম্বনের পরামর্শ দেন।
সংলাপ শেষে টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭-এর বিজয়ীদের পুরস্কার দেয়া হয়।
প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পাঁচজন সাংবাদিক ও চারজন ভিডিও চিত্রগ্রাহকসহ মোট নয়জন সাংবাদিক এ বছর টিআইবির অনুসন্ধানীমূলক সাংবাদিকতা পুরস্কার পান।
প্রিন্ট মিডিয়া (জাতীয়) বিভাগে পুরস্কার পান দৈনিক প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার অরূপ রায়।
প্রিন্ট মিডিয়া (আঞ্চলিক) বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আলাউদ্দিন।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (প্রতিবেদন) বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু।
এছাড়া মাছরাঙা টেলিভিশনের সিনিয়র ভিডিও চিত্রগ্রাহক মেহেদী হাসান সোহাগকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে যৌথভাবে বিজয়ী হয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের স্টাফ করেসপনডেন্ট সবুজ মাহমুদ এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার মো. জাহিদ মামর ইসলাম সাদ।
এছাড়া ভিডিওচিত্র ধারণের বিশেষ ভূমিকার জন্য ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক রাকিবুল হাসান ও গোলাম কিবরিয়া এবং যমুনা টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক তানভীর মিজানকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।
প্রত্যেক পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ এবং প্রত্যেক ভিডিও চিত্রগ্রাহককে ৫০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. গওহর রিজভী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন


আর্কাইভ

December 2017
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..