`অবন্তিকাকে লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করতেন পি কে হালদার’

প্রকাশিত: ২:৩০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২১

`অবন্তিকাকে লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করতেন পি কে হালদার’

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তার ঘনিষ্ঠ নারী সঙ্গীসহ বেশ কয়েকজন গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে একজন অবন্তিকা বড়াল। স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেছেন, পি কে হালদার তাকে লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করতেন। তার নামে জমি কিনতেন, ব্যাংক হিসাব খুলতেন।

Manual1 Ad Code

অবন্তিকা বড়ালসহ বেশ কয়েকজনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবান্দি নিয়ে রোববার (২১ মার্চ) সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

তিনি বলেন, ‘পি কে হালদারের সব অপকর্মের শেল্টার (আশ্রয়) দিতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর। আর নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম প্রতিমাসে নিতেন দুই লাখ টাকা।’

পি কে হালদারের সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে খুরশিদ আলম বলেন, ‘রাশেদুল বলেছেন- এস কে সুর চৌধুরী ছিলেন পি কে হালদারের সবচেয়ে ঘনিষ্টজন। ডেপুটি গর্ভনর পদে থেকে তিনিই পিকে হালদারের সব অপকর্ম ঢেকে রাখতেন এবং তাকে আশ্রয় দিতেন।’

Manual3 Ad Code

দুদক আইনজীবী বলেন, ‘পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়ালসহ বেশ কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অবন্তিকা বলেছেন- পি কে হালদার তাকে লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করতেন। তার নামে জমি কিনতেন, ব্যাংক হিসাব খুলতেন। অবন্তিকা যা বলেছে- এটা ভয়ঙ্কর স্বীকারোক্তি বলে আমি মনে করি। একজন উচ্চ শিক্ষিত মহিলাকে ব্যবহার করে যে অপকর্ম করেছে। এমনকি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অবন্তিকা।’

খুরশিদ আলম বলেন, ‘সবার জবানবন্দি থেকে স্পষ্ট যে, মাস্টার মাইন্ড হলো পি কে হালদার। সে নিজেই বিভিন্নজনকে প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহার করত। আশা করছি- দ্রুত চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই জবানবন্দির পর বিএফআইইউকে (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) দুদক থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। এস কে সুর ও শাহ আলমের লেনদেনগুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রমাণিত হলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। এই দুইজনকে এখনও গ্রেফতার না করায় সম্প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন উচ্চ আদালতও।’

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তিনি এস কে সুর চৌধুরী নামেই বেশি পরিচিত। একই সঙ্গে তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবও চাওয়া হয়েছে। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের হিসাব তলবের চিঠি ২২ ফেব্রুয়ারি সব ব্যাংকে পৌঁছেছে।

একই চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগমের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব চেয়েছেন কর গোয়েন্দারা। অবশ্য তাদের আলাদা ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

ওই চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এই হিসাবের তালিকায় সব ধরনের মেয়াদি আমানত, চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্রসহ সব ধরনের হিসাব। শেয়ারবাজারে অর্থাৎ বিও হিসাবে কত টাকা আছে, তাও জানতে চায় এনবিআর। এসব হিসাবের ২০১৩ সালের জুলাই থেকে এই পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হয়েছে। এমনকি আগের ব্যাংক হিসাব কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে গেছে, এমন হিসাবের তথ্যও দিতে হবে।

Manual1 Ad Code

এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ নিয়ে দুর্নীতি চাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দুদক থেকেও জানা গেছে, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)। তাকে এই অনিয়মে সহায়তা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম।

এছাড়া এই লোপাটের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ আরও অনেকেই নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। জালিয়াতির ঘটনাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকে জানলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেননি। সংশ্লিষ্টদের এমন নীরবতার কারণেই পিকে হালদার বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

অবন্তিকার দায় স্বীকার
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় পি কে হালদারের বান্ধবী অবান্তিকা বড়াল গত ১৬ মার্চ দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। ওই দিন তাকে তিনদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মাসুদ উর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে গত ৪ মার্চ তাকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করে দুদক। এ সময় অবন্তিকা বড়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রবিউল আলম তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে দুদক।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..