রেলস্টেশনে শতবর্ষী মাকে ফেলে পালালেন সন্তানরা

প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২০

রেলস্টেশনে শতবর্ষী মাকে ফেলে পালালেন সন্তানরা

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : তীব্র শীতের মধ্যে শতবর্ষী এক মাকে রেলস্টেশনে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন তার সন্তান ও স্বজনরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে হাড় কাঁপানো শীতে প্লাটফরমে ১৪ দিন থাকার পর রোববার রাতে ওই বৃদ্ধ মাকে উদ্ধার করে নেয়া হয়েছে হাসপাতালে। তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। হাসপাতালে কিছুটা সুস্থ হলেও তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকরা।

ওই বৃদ্ধা কখনও হয়তো ভাবেননি যে, প্রাণের সন্তানরা তাকে বোঝা মনে করে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে গোপনে স্টেশনের প্লাটফরমে রেখে চলে যাবেন।

Manual3 Ad Code

রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, ওই দিন আমি স্টেশনে আমার দোকানে বসেছিলাম। দেখলাম কয়েকজন রিকশাভ্যানে নিয়ে এসে বৃদ্ধ নারীকে স্টেশনের প্লাটফরমের একটি জায়গায় রেখে দিল। কৌতূহলী হয়ে আমি তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর শুরু হয় বৃষ্টি। দীর্ঘক্ষণ পরও তারা ফিরে না আসায় আমি স্টেশনের তেঁতুলগাছের নিচে পরিত্যক্ত জায়গাটিতে খড় বিছিয়ে দিই। এর পর পুরনো কম্বল দিয়ে বিছানা তৈরি করে তাকে সেখানে রাখি।

Manual1 Ad Code

আমি গরিব মানুষ, তার পরও এই কয়দিন আমার যথাসাধ্য সেবাযত্ন করার চেষ্টা করেছি। এভাবেই গত দুই সপ্তাহ সে এখানেই ছিলেন।

এর পর বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

Manual6 Ad Code

গোমস্তাপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সালাউদ্দীন জানান, রোবরার রাতে যখন তাকে এখানে আনা হয়, তখন প্রচণ্ড শীত। বার্ধক্যজানিত কারণে তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ভাইটাল সাইন যেমন বিপি পালস্ খুব কম ছিল। চিকিৎসার পর সকালে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও তিনি শঙ্কা মুক্ত নন।

তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তবে যতক্ষণ তিনি এখানে আছেন, আমরা আমাদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেব।

অমানবিক এমন ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, চিকিৎসকসহ স্থানীয় জনপ্রশাসনও এগিয়ে এসেছেন শতবর্ষী ওই বৃদ্ধার সেবায়।

রহনপুর পৌর মেয়র তারেক আহমেদ জানান, ঘটনাটি খুবই অমানবিক। রাতে আমি বিষয়টি শোনার পরই হাসপাতালে ছুটে এসেছি। তিনি আমার মায়ের মতোই, তাই তাকে ফেলে যেতে পারিনি। যতদিন এই অসহায় বৃদ্ধ মায়ের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, একজন সন্তানের মতোই তার পাশে থাকব।

রহনপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে মালতি বেগম নামে এক নারীকে ওই বৃদ্ধাকে দেখভালের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে মালতি বেগম বৃদ্ধাকে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন।

Manual5 Ad Code

মালতি বেগম জানান, যখনই ওই বৃদ্ধা চেতনা ফিরে পাচ্ছেন, তখনই একরাশ ঘৃণা প্রকাশ করছেন তার স্বজনদের প্রতি। হাতের ইশারায় দূরে সরে যেতে বলছেন তিনি।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় জামাচ্ছেন অনেকেই। শতবর্ষী ওই বৃদ্ধার প্রতি এমন নির্মম আচরণের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

নিষ্ঠুর ওই পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান অনেকেই। পাশাপাশি অসহায় ওই নারীর সার্বিক সহায়তায় সরকারের সুদৃষ্টিরও আবেদন তাদের।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..