সিলেট কোর্ট হাজতে নিরাপত্তায় গলদ, হাজতিদের হাতে মাদক

প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০১৯

সিলেট কোর্ট হাজতে নিরাপত্তায় গলদ, হাজতিদের হাতে মাদক

Manual1 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কারাবন্দি মাদক চোরাকারবারি ও মাদকসেবীরা মামলার হাজিরা দিতে কোর্টে গেলে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় মাদকদ্রব্য। কোর্ট হাজতের ভেতরে হাজতিদের কে- কী দিচ্ছে তার নজরদারি নেই পুলিশের। সেই সঙ্গে রয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থার গলদও। টাকার বিনিময়ে হাজতে থাকা অভিযুক্ত আসামিদের বাইরে থেকে খাবার এনে দেওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগও করে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতে কোর্ট হাজত থেকেও আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কোর্ট হাজত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েদিদের হাতে মাদক তুলে দেওয়া হয় যা একাধিকবার ধরা পড়ে কারারক্ষীদের তল্লাশিতে। অথচ সিলেট জেলা ও মহানগর কোর্ট হাজতের সামনেই রয়েছে সিসি ক্যামেরা।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সিলেট আদালতের হাজত থেকে মাদক মামলার আসামি এনাম আহমদ (৩৮) পালিয়ে যায়। কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যান আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে গেলে একে একে আসামিদের ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় হাজত থেকে বের করে অন্য আসামিদের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এনামকে। পুলিশ সদস্যরা যখন অন্য আসামিদের ভ্যানে তোলায় ব্যস্ত সেই ফাঁকে পালিয়ে যায় এনাম।
এছাড়া ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাকির হোসেন নামের এক হাজতির কাছ থেকে ৬০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে ২০১৮ সালের মে মাসে এক দর্শনার্থী নবু মিয়া নামের এক কয়েদির কাছে জুতার ভেতরে করে কারাগারের ভেতরে গাঁজা পাচারের চেষ্টা করে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় জুতার ভেতর থেকে ওই গাঁজা উদ্ধার করে কারারক্ষী। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতি রুবেল আহমদের পেট থেকে ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কোর্টে হাজির দিয়ে ফেরার সময় সে ইয়াবাগুলো নিয়ে যায় কারাগারে।

Manual5 Ad Code

এদিকে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার -১ এ ১০০ পিস ইয়াবাসহ ধরা পড়ে আকবর আলী নামে এক যুবক যার হাজতি নম্বর-১৯৪/১৯। এ ঘটনায় জালালাবাদ থানায় আকবরসহ দুজনের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করছেন এক কারারক্ষী। আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, কারাবন্দি আকবর আলী অতিরিক্ত দায়রা জজ চতুর্থ আদালতে হাজিরা দিতে যায়। তাকে কোর্ট হাজতে নিয়ে গেলে হাজতে থাকার সময় আকবর আলীর এক চাচাতো ভাই তাকে ১০০ পিস ইয়াবা দেয়। পরে ইয়াবার প্যাকেটটি আকবর তার জ্যাকেটের পকেটে করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ নিয়ে যায়। কারা ফটকে দায়িত্বে থাকা এক কারারক্ষী তার জ্যাকেট থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করেন। এদিকে আদালতে হাজতির একটি লিখিত জবানবন্দিও দাখিল করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। ওই জবানবন্দিতে আকবর আলী কার কাছ থেকে ইয়াবা পেয়েছে সে তথ্য দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে আদালত কারাবন্দি আকবর আলীকে মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখায়।

Manual7 Ad Code

সিলেট আদালতের একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, কোর্ট হাজতে আসামিদের রাখার পর সেখানে সিগারেট খাওয়া, মোবাইল ফোনে কথা বলা ও বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে হাজতের ভেতরে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয় টাকার বিনিময়ে। অথচ জেলা ও মহানগর আদালতে হাজতের সামনেই দুটি সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। এছাড়া কোর্টে রয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপরও হাজতে চলে নানা অপতৎপরতা। যদি পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামেরার কার্যক্রম যথাযথভাবে তদারকি করা হতো তাহলে হাজতের ভেতরে এভাবে মাদকদ্রব্য পাওয়া যেত না। অতীতে সিলেট কোর্ট হাজত থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নগরের জেলরোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে একাধিকবার ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার করেছেন কারারক্ষীরা।

Manual7 Ad Code

বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আবু সায়েম। তিনি  বলেন, ‘আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর কারাবন্দি আকবর আলীকে পুনরায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ নিয়ে আসার পর তার কাছ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জালালাবাদ থানায় কারাগারের পক্ষ থেকে মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে।’

সিলেট জেলা কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ একজন কারাবন্দি ইয়াবাসহ ধরা পড়েছে। ওইদিন সে কারাগার থেকে অতিরিক্ত দায়রা জজ চতুর্থ আদালতে মামলায় হাজিরা দিতে আসে। এরপর কারাগারে গেলে ওই সময় তার কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।’

কার কাছ থেকে ওই কারাবন্দি ইয়াবা পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে আকবর আলীসহ দুজনের নামে। বিষয়টি থানা পুলিশ তদন্ত করছে।’

Manual1 Ad Code

কোর্ট হাজতের সামনে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাজতের সামনে সিসি ক্যামেরা সব সময়ই পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি পুলিশের কোনও গাফিলতি থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার এসআই সুমন কুমার শীল এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..