খোলেনি কোম্পানীগঞ্জের বাবুলের মৃত্যুরহস্যের জট

প্রকাশিত: ১০:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

খোলেনি কোম্পানীগঞ্জের বাবুলের মৃত্যুরহস্যের জট

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বালু ব্যবসায়ী বাবুল ইসলাম (৪৮) মৃত্যুরহস্যের জট খোলেনি পাঁচ দিনেও। প্রাথমিকভাবে তাঁর মৃত্যু দুর্ঘটনাজনিত বলা হলেও মিলছে না অনেক প্রশ্নের উত্তর। স্বজনের অভিযোগ, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর সপক্ষে তারা কিছু যুক্তিও উপস্থাপন করেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ গড়িমসি করছে বলেও অভিযোগ তাদের।

স্বজনের অভিযোগ, বালু ব্যবসার বিরোধ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বাবুলকে হত্যা করে বিষয়টি দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা চলছে। দীর্ঘদিন ওই এলাকায় পুলিশ প্রশাসন ও অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধভাবে বালু কারবার চালিয়ে আসছে একটি চক্র।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল রাত সোয়া ১টার দিকে বাবুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয়। পরদিন ভোরে থানা বাজার পয়েন্ট এলাকার ডোবায় তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে।

মৃতের ছেলে স্বাধীন হোসেন বলেন, কোম্পানীগঞ্জের কাঠালবাড়ি গুচ্ছগ্রামে ইজারাবর্হিভূত স্থান থেকে বালু তোলা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে জানিয়ে বাবুলকে ডেকে নেন তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার আক্কাস আলী। ধারণা করা হচ্ছে, রাত দেড়টা থেকে ৩টার মধ্যে তাঁকে হত্যা করে রাস্তার পাশের ডোবায় লাশ ফেলা হয়। তবে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে তারা দুর্ঘটনা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাশ পাওয়ার স্থান থেকে আনুমানিক ১০ ফুট সামনে তার মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায়। দুর্ঘটনা হলে লাশ এত পেছনে এল কীভাবে? তাছাড়া মোটরসাইকেলটিতেও দুর্ঘটনার কোনো আলামত দেখা যায়নি। দুর্ঘটনা হলে যে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হত। একই কারণে মোটরসাইকেলের সামনের অংশ ভাঙ্গা থাকার কথা ছিল। কিন্তু সামনের ব্রেকসহ সিগনাল লাইট, হেডলাইট সব অক্ষত। বরং মোটরসাইকেলের বাম পাশে শাবল দিয়ে ভাঙা বলে মনে হয়। তাছাড়া দুর্ঘটনা বলা হলেও মৃতের মাথা বা শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। গাড়ির জাম্পার একটুও বাঁকা হয়নি, অথচ দুই পা হাটুর ওপরে ভাঙ্গা। মৃতের জুতা তাঁর মোটরসাইকেলের সঙ্গেই পাওয়া যায়। দুর্ঘটনা হলে তিনি নিশ্চয়ই জুতা খুলে রেখে পানিতে গিয়ে পড়েননি। আবার মোটরসাইকেলটিও কৌশলে চাকার নিচে কাঠের টুকরো দিয়ে গাছের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল। যদিও দুর্ঘটনা হলে মোটরসাইকেল অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে থাকার কথা।

স্বজনের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আক্কাস ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ নানারকম অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস করে না।

বাবুলের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আছমা বেগম থানায় অভিযোগ জানালেও মামলা নিতে টালবাহানা করছে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির দাবি, অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির ব্যবসা থেকে নিয়মিত টাকা পায় পুলিশ। মামলা হলে বালু তোলায় জড়িত ব্যক্তি ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নাম প্রকাশ হবে এই ভয়ে পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

মৃতের ব্যবসায়ীক অংশীদার আক্কাস আলী বলেন, সেদিন রাত ১টার দিকে বাবুলের সঙ্গে আমার শেষবার কথা হয়। তাঁর দেখা করার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি আর আসেননি। পরে সকালে জানতে পারি, তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর পরিবার আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

এদিকে বাবুল হত্যার প্রতিবাদে শনিবার সকালে কোম্পানীগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। উপজেলার টুকের বাজারে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা সদরের দিকে এগিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিআইজি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, বাবুল ইসলামের মৃত্যু ঘিরে রহস্য রয়েছে। তাই আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটা পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিষয়টি দেখছেন। তারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেই অনুযায়ী মামলা নেওয়া হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..