সিলেট ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৫৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২২
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক: মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন চা শ্রমিকরা। তারা সিলেটের রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন। সড়ক অবরোধও করেছিলেন তারা।
চা শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে তারা ১২০ টাকা মজুরি পান। এই মজুরি ‘অন্যায্য’ ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন তারা। মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে সিলেটসহ সারাদেশেই চা-শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন। ফলে বাগানগুলোর কাজকর্ম থমকে গেছে।
জানা গেছে, সিলেটের লাক্কাতুরা, মালনিছড়া, খাদিম, কেওয়াছড়া, দলদলি, জাফলং, লালাখালসহ সকল বাগানে চলছে ধর্মঘট।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা আজ সকাল থেকে লাক্কাতুরা এলাকায় অবস্থান নেন। তারা দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে সকাল ১১টার দিকে শ্রমিকরা বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। প্রায় আধাঘন্টা ছিল তাদের অবরোধ। এতে সড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তি পোহান সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিদেশগামী যাত্রীরা পড়েন সংকটের মধ্যে। ফ্লাইট মিস করার দুশ্চিন্তা ছিল তাদের চোখেমুখে।
প্রায় আধাঘন্টা পর চা শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান। পরে তারা মিছিল সহকারে সিলেট নগরীর দিকে এগোতে থাকেন। শ্রমিকরা নগরীর চৌহাট্টায় এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
জানতে চাইলে আন্দোলন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আমরা গত ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। ফলে আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে দেশের সবগুলো চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন।
রাজু গোয়ালাও আরও বলেন, ‘আমাদের যে দাবি, ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এগুলো চলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার বা চা-বাগান মালিকপক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাইনি। প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরবো না।’
এই চা শ্রমিক নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কী হয়। মালিকপক্ষ বলে, তারা শ্রমিকদের রেশন দেয়। কী রেশন দেয়? শুধু আটা দেয়। আমাদের এগ্রিমেন্টে বলা আছে যে ছয় মাস চাল, ছয় মাস আটা দেবেন। কিন্তু সেটাও উনারা প্রতিশ্রুতি রাখেন না। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যেসব আছে, সেটার সাথে কোনোভাবেই এই মজুরির কোনো ইয়ে নাই…মজুরিটা আমার বাঁচার জন্য দরকার, আমার নিত্যপ্রয়োজনীয় যে খাদ্যপণ্য আছে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দরকার। কিন্তু মজুরি যদি কম হয়, আমরা চলবো কীভাবে?’
চা শ্রমিকরা জানান, চা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। শ্রম আইন অনুসারে চা শ্রমিকদের পক্ষে দরকষাকষি করে এই সংগঠন। সম্প্রতি চা-বাগান মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনয়ায় শ্রমিক ইউনিয়ন চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, বোনাস প্রদান, ছুটিসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে মালিকপক্ষ মজুরি ১৪ টাকা বাড়নোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু চা শ্রমিকরা এই মজুরি বৃদ্ধিকে ‘পরিহাস’ বলে মনে করছেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা জানান, গত ১ আগস্ট চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটি ও ভ্যালি কমিটিসমূহের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে চা সংসদে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩ আগস্ট সেই স্মারকলিপি প্রদান করে চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সেখানে সাতদিনের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ‘গ্রহণযোগ্য সুরাহার’ দাবি জানানো হয়। অন্যথায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
আলটিমেটামের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন চা শ্রমিকরা।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd