দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২২

দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : এক সময় পুলিশ দেখলেই ভয় পেত সাধারণ মানুষ। চেষ্টা করতো এড়িয়ে চলার। গ্রামের মধ্যে পুলিশের গাড়ি দেখলে কৌতূহলী হয়ে ওঠতো মানুষ। কিন্তু এবারের ভয়াবহ বন্যায় সাধারণ মানুষের মন থেকে কেটে গেছে পুলিশ ভীতি। বন্যার এই চরম দুঃসময়ে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে সিলেট জেলা পুলিশ।

Manual2 Ad Code

পানিবন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম এলাকার বানভাসি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, ত্রাণ নিয়ে আসা বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে সহায়তা প্রদান করে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে তারা। এখন পুলিশের গাড়ি দেখলে দৌঁড়ে পালানো দূরের কথা, খাবার ও ত্রাণ সহযোগিতার আশায় ছুটে আসে মানুষ। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য গর্বিত বলে মন্তব্য পুলিশ সুপারের। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজেও অংশ নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার বন্যাদুর্গত পুটামারা এলাকা পরিদর্শনে যান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। পুলিশ সুপার আসার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন শতাধিক বানভাসি মানুষ। তাদের চোখে-মুখে প্রতিফলিত হচ্ছিল বন্যায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া জীবনের হতাশার প্রতিচ্ছবি। এলাকায় পুলিশ সুপারের আগমনের খবর পেয়ে যেন কিছুটা হলেও স্বস্তির সুবাতাস বইছিল তাদের মনে। পুলিশ আসলেই খাবার মিলে, ত্রাণ মিলে-এমন আশায় ছুটে এসেছিলেন তারা। অবশ্য হতাশ হতে হয়নি তাদের। উপস্থিত সবার হাতে ত্রাণের প্যাকেট ও রান্না করা খাবার তুলে দেন।

ত্রাণ নিতে আসা আসদ্দর আলী বলেন, ‘আগে এলাকায় পুলিশ আসার খবর পেলে মানুষ ভয়ে তটস্থ থাকতো। কিন্তু এবার বন্যায় পুলিশ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে পুলিশকে আপন মনে হয়। সিলেটের মধ্যে বন্যায় সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা। এই দুঃসময়ে পুলিশ যেভাবে মানুষকে সহায়তা করেছে তা কোম্পানিগঞ্জের মানুষ কোনদিনও ভুলতে পারবে না।’

Manual7 Ad Code

চলতি বন্যায় পুলিশের কার্যক্রম প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান জানান, ১৫ জুন থেকে সিলেটে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। ১৭ জুন পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবন্দি বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে প্রথম পুলিশই ছুটে যায়। বন্যার সময় বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় আটকা পড়া ৪ হাজার ৮০০ মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসে পুলিশ। সময়মতো উদ্ধার করা না গেলে তাদের অনেকেরই জীবন বিপন্ন হতো। উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে পুলিশের ১৩টি ট্রলার ও ৩টি স্পিডবোট সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিল।

Manual2 Ad Code

মো. লুৎফর রহমান আরও জানান, গত ৩০ জুন পর্যন্ত জেলা পুলিশ ২৬ হাজার ২১৫ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১২ হাজার প্যাকেট চাল-ডাল ও সাড়ে ৪৭ হাজার লোকের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের নিরাপত্তায় ৩৩টি টহল টিম কাজ করছে। যেসব ব্যক্তি ও সংগঠন বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ নিয়ে আসছে তাদেরকে বিতরণে সহযোগিতা করে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, বন্যার শুরুতে সিলেটে বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা সিলেট। এই অবস্থায় মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়ে তখন ট্রলার, নৌকা ও স্পিডবোট নিয়ে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে উদ্ধার ও খাবার পৌঁছে দেয়। মানবিক কাজে কাছে পেয়ে ভীতি কাটিয়ে মানুষ পুলিশকে আপনজন হিসেবে ভাবতে শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সিলেট জেলা পুলিশ সবসময় মানবিক কাজে অগ্রগামী। করোনা সংকটকালেও পুলিশ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। এবারের বন্যায়ও পুলিশ নিজেদের জীবনের ঝুঁকির কথা না ভেবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজেও পুলিশ মানুষের পাশে থাকবে। মানবিক ও সেবাধর্মী কাজে অংশ নিতে পারলে জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য গর্ববোধ করে।’

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..