ভুয়া বিলে লাখ লাখ টাকা তুলেছেন হাসপাতালের কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২১

ভুয়া বিলে লাখ লাখ টাকা তুলেছেন হাসপাতালের কর্মকর্তা

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : যশোরের চৌগাছায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। করোনা মহামারিতে এমন শুভঙ্করের ফাঁকি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি করেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালে করোনাকালীন ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস প্রায় ১০ লক্ষ টাকার বিল ভাউচার জমা দেন। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে জানাজানি হলে তিনি সেই বিল ভাউচার ফেরত নিয়ে যান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ভুল করে হাসপাতালের হিসাব রক্ষণ থেকে বিল জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বিল ভাউচার জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করেছেন সেটি সঠিক নয়। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদন করলে তিনি যশোর আল মদিনা সার্জিক্যাল ২৩ জুন ২০২১ সালের তারিখে ১৫৮৩ নং ভাউচারে স্টেরাইল গ্লাবস ২০০ পিচ ৭০ টাকা দরে ১৪ হাজার টাকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৩০ পিচ ২৫০ এমএল ২০০ টাকা দরে ৬ হাজার টাকা, ১৫৮৫ নং ভাউচারে স্টোরাইল গ্ল্যাবস ২৮৫ পিচ ১৯ হাজার ৯৫০ টাকা, ১৫৮৪ নং ভাউচারে স্টোরাইল গ্লাবস ২৫০ পিজ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ১২ পিচ ২৫০ এমএল ২ হাজার ৪০০ টাকা, যশোর একতা ষ্টোর থেকে ৯০ কেজি ব্লিচিং পাউডার ১০ হাজার ৫০০ টাকা ও হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীর ২০ দিনের দৈনিক মজুরী ৫০০ টাকা হারে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে সর্বমোট মাত্র ৮০ হাজার ৩৫০ টাকার বিল ভাউচার দেন। এক দিনেই এক দোকান থেকে তিনটি ভাউচারে সর্বমোট ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকার স্টোরাইল গ্লাবস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সন্দেহের সৃষ্টি করে।

এদিকে হাসপাতালে কর্মচারীরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের করোনায় সুরক্ষার জন্য কোনো সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন না। তাহলে এতো টাকার মালামাল কোথায় গেলো এনিয়ে গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। আর বাকি ৫৯ হাজার ৬৫০ টাকার কোনো হিসাব দেখাতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, যে হিসাব দেখিয়েছেন সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি যৎসামান্য স্টোরাইল গ্লাবস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাসপাতালে জমা দেন। বাজারে একটি স্টোরাইল গ্লাবসের দাম ২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪২ টাকা। তাহলে তিনি কিভাবে ৭০ টাকা দরে গ্লাবস কিনলেন এটি রহস্যজনক। এছাড়া হাসপাতালে ডাক্তার নার্সদের মাঝে বিতরণ ও করেননি। তিনি নিজের ইচ্ছে মতো বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা উত্তোলন করেন।

এছাড়া ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে তিনি মোটর সাইকেলের তেলের প্রায় লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্মকর্তার জন্য সরকারি ১টি মোটর সাইকেলের বরাদ্দ থাকলেও যোগ দানের পর থেকে কোনো দিন সেটি ব্যবহার করেন নি। অথচ ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি ২শ ৭০ লিটার জ্বালানী পেট্রোল উত্তোলন করেছেন যার মূল্য ২৩ হাজার ২৭৪ টাকা, মোটর সাইকেলের মবিল উত্তোলন ৫ লিটার যার বিল ভাউচার করেছেন ২ হাজার ২৫০ টাকা।

এছাড়া মোটর সাইকেল মেরামত ব্যয় দেখিয়ে সোহেল মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টারের বিল ভাউচারে ৮হাজার ৮শ ৭০ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। মোটর সাইকেল মেরামতের বিষয়ে সোহেল সার্ভিসিং সেন্টারের মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি কোন মোটর সাইকেল ঠিক করেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজের ইচ্ছে মতো তার কাছ থেকে বিল ভাউচার নিয়ে গিয়ে টাকা বসিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন্নাহার লাকির কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে করোনা কালীন ১০ লক্ষ টাকার বিল জমা দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার ভুলে বিলটি জমা দেওয়া হয়েছিলো।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..