শাহজালালের ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব সম্পন্ন, ভক্তদের ঢল

প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২১

শাহজালালের ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব সম্পন্ন, ভক্তদের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার : ওলীকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.)’র মাজারের বার্ষিক ওরস উপলক্ষে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব। ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহজালাল (রহ.) জীবদ্দশা থেকে এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করা হতো। সে চিরায়ত ঐতিহ্য বিগত ৭০০ বছর ধরে উরসের তিন সপ্তাহ আগে ‘লাকড়ি তোড়া’ সম্পন্ন হয়ে আসছে।

কালের বিবর্তনে এটি এখন উৎসবে রূপ লাভ করেছে। লাকড়ি তোড়া উৎসবে শাহজালালের অগণিত ভক্তরা অংশ নেন। মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর দরগাহে মিলাদ শেষে ভক্ত-অনুরাগীরা শহরতলির লাক্কাতোরা ও মালনিছড়া চা বাগানের টিলা থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করেন।

হযরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহ থেকে শুরু করে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট, চৌকিদেখি হয়ে সোজা লাক্কাতোরা চা-বাগান পর্যন্ত মিছিল করেন তারা। ফেরার পথে লাল গালিচার মিছিলে যুক্ত হয় গাছের সবুজ লতাপাতা। ওরসের শিরনিতে ব্যবহৃত কাঠ সংগ্রহের ওই উৎসবকে লাকড়ি তোড়ার উৎসব বলা হয়ে থাকে।

প্রতি বছর শাওয়াল মাসের ২৬ তারিখ শাহজালাল ভক্তরা উৎসবের মাধ্যমে লাক্কাতুড়া বাগান অভিমুখে কাঠ সংগ্রহ করতে যান। প্রায় ৭০০ বছর ধরে সিলেটে উদযাপিত হয়ে আসছে এই উৎসব। স্থানীয়ভাবে এই উৎসবের নাম ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব। অনেকে এই দিনকে সিলেটে ইসলামের বিজয় দিবস হিসেবেও পালন করেন।

মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগায় গিয়ে দেখা যায়, লাকড়ি তোড়ার (কাঠ সংগ্রহের) জন্য বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু ছুটছেন লাক্কাতুড়া অভিমুখে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ভক্ত আশেকানের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে ‘৩৬০ আউলিয়া কী-জয়’, ‘লালে লাল বাবা-শাহজালাল’,‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি। ভক্তদের হাতে নাঙা তরবারি ও দা থাকলেও তাদের শোভাযাত্রা ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল।

প্রথা অনুযায়ী ভক্তরা লাক্কাতুড়া বাগানের নির্দিষ্ট টিলায় গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে আসরের পর ফিরে আসেন দরগায়। সংগৃহীত এই কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হবে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর ওরসের শিরনিতে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ৭০০ বছর আগে ২৬ শাওয়ালের এই দিনে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) ৩৬০ আউলিয়া নিয়ে সিলেটে পদার্পণ করেন। ওইদিনই তিনি জালিম রাজা গৌড়গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেট বিজয় করেন। তাই এদিনটিকে অনেকেই সিলেটে ইসলামের বিজয় দিবস হিসেবেও পালন করেন। জানা যায়, সিলেট বিজয়ের পর হযরত শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীয় আউলিয়াদের ইসলাম প্রচারের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন। তারা প্রতি বছর সিলেট বিজয়ের এই দিনে শাহজালাল (রহ.)-এর কাছে ফিরে আসতেন এবং ধর্ম প্রচার নিয়ে আলোচনা করতেন। তাই সিলেট বিজয় দিবসটি শাহজালাল (রহ.)-এর জীবদ্দশা থেকেই পালিত হয়ে আসছে।

‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব নিয়ে অন্য একটি ঘটনাও লোকমুখে শোনা যায়, একবার সিলেট বিজয় দিবসের কয়েক দিন আগে এক কাঠুরে আসেন হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর কাছে। কাঠুরে ফরিয়াদ করে জানান, তার ঘরে বিবাহযোগ্য পাঁচ মেয়ে রয়েছে। সে কাঠুরে ও নিচু জাতের হওয়ায় কেউই তার মেয়েদের বিয়ে করতে চাইছে না। এ কথা শুনে শাহজালাল কাঠুরেকে সিলেট বিজয় দিবসে দরগায় আসার কথা বলেন। পরবর্তী সিলেট বিজয় দিবসে সঙ্গীয় আউলিয়া, ভক্ত ও আশেকানরা এলে শাহজালাল (রহ.) সবাইকে নিয়ে লাক্কাতুড়া বাগানে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করেন। ফিরে এসে তিনি উপস্থিত ভক্তদের কাছে জানতে চান তারা আজ কী কাজ করেছে। উত্তরে সবাই বলেন তারা আজ কাঠুরিয়ার কাজ করেছে। এরপর শাহজালাল সবাইকে কাঠুরের দুঃখের কথা বললে উপস্থিত অনেক ভক্ত কাঠুরের মেয়েদের বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখান থেকে কাঠুরে তার মেয়েদের জন্য বর পছন্দ করেন। এ ঘটনার পর থেকে সাম্য ও শ্রেণি বৈষম্য বিরোধী দিবস হিসেবেও দিনটি পালন করেন ভক্তরা।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..