সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:১৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
সমরেশ মজুমদার সিলেটে এসেছেন, গর্ব করার মতো বিষয়। সপ্তাহখানেক আগে জেনেছি, তিনি সিলেটে আসছেন। খুব ইচ্ছে ছিল প্রিয় মানুষটির কথা কাছ থেকে শুনবো। কিন্তু আগেই থেকেই সিদ্ধান্ত নিলাম, কোনোভাবেই বাতিঘরে গিয়ে এই রকম একটা অনুষ্ঠানে ওনার কথা আমি শুনবো না। আজ সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রিয় মানুষটির কথা শুনেছি, কিন্তু কেন জানি বাতিঘরে যেতে মনকে রাজি করাতে পারছিলাম না। কারণ, যেখানে পাঠকের অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা হবে, সেখানে আমি কেন যাবো ? আজ সমরেশ মজুমদার যদি সিলেটের কোনো সাহিত্য উৎসবে অতিথি হয়ে আসতেন, আমি অবশ্যই যেতাম। আমার মনে হয়, আজকে বাতিঘরে আমার মতো যারা যান নি, তারাও যেতেন। কারণ, প্রিয় লেখক তখন সবার হতেন। সমরেশ কারো বিজ্ঞাপন থাকতেন না।
সমরেশ কীভাবে বিজ্ঞাপন হলেন, তা একটু পরে বলব। এর আগে সমরেশের সিলেট সফর সম্পর্কে বলি। এটা তাঁর কোনো সাহিত্য সফর নয়। সিলেটের সাবেক কর কমিশনার বাদল সৈয়দ ‘জন্মজয়’ নামের একটি বই লিখেছেন। বাতিঘরের পেজে বলা হয়েছে, ‘বই প্রকাশের গল্প শোনাবেন সমরেশ মজুমদার এবং বাদল সৈয়দ’। আজ যারা বাতিঘরে গিয়েছেন, তারা সমরেশের গল্প শুনতে গিয়েছেন। কেউই বাদল সৈয়দের গল্প শুনতে যাননি। অথচ নির্লজ্জভাবে ব্যানারে সমরেশের মতো বড় মাপের লেখকের পাশে একজন অখ্যাত বাদল সৈয়দের নাম আমাকে ব্যথা দিয়েছে। সিলেটে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘বলা ফিটিং’। এই ফিটিংটা এখানে কে-কাকে দিয়েছে , তা আশা করি একটু পরে বুঝতে পারবেন। শুনেছি, অনুষ্ঠানে আসার পথে বাদল সৈয়দ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই তিনি অনুষ্ঠানে আসেননি। তিনি সুস্থ হন দোয়া করি। তবে তিনি না আসাতে আমরা বেঁচে গেলাম। সমরেশের পাশে বসে তাকে বইয়ের গল্প বলতে দেখিনি। এই ভদ্রলোক সিলেটে চাকরি করেছেন। আমি তাকে মোটামুটি জানি। তো তিনি একটা বই বের করেছেন, সেটার মোড়ক উন্মোচন করতে চান সমরেশকে দিয়ে-এই স্বপ্নকেও আমি সম্মান জানাই। কথা হচ্ছে, এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে বাতিঘর। আজ বাতিঘর স্বীকার করেছে, ‘বাদল সৈয়দের কারণেই আমরা সমরেশকে পেয়েছি’।
এবার সমরেশকে বিক্রি করার বিষয়ে বলি। এক সপ্তাহ আগ থেকে বাতিঘরের ফেসবুক পেজে সমরেশ মজুমদারের নতুন লেখা ‘ অপরিচিত জীবনযাপন’ বইয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল, সমরেশ মজুমদারের বইটি অর্ডার করলে লেখকের অটোগ্রাফ নিতে দেওয়া হবে। আজ অনেকেই আমাকে অভিযোগ করে বলেছেন, তারা বইটি অর্ডার করেছেন। এক সপ্তাহ আগে বিকাশে টাকা দিয়ে নাম লিখিয়েছেন। এই তরুণেরা অটোগ্রাফ নিতে বিপুল উৎসাহী। এদেরকেই ধরেছে বাতিঘর। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাদের হাতে বাতিঘর বইটি ধরিয়ে দেয় অটোগ্রাফ ছাড়া। এই তরুণেরা তুমুল আগ্রহ নিয়ে লেখকের কথা শুনেছে। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে কয়েকটা অটোগ্রাফ দিয়েই বলা হলো, বাকি বইগুলোতে অটোগ্রাফ দেওয়া সম্ভব না। এখন প্রশ্ন জাগে, সমরেশ মজুমদার কী বাতিঘরের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করে এসেছিলেন যে, ‘‘বইয়ের অর্ডার নাও, সবগুলো বইয়ে আমি অটোগ্রাফ দিব’’। আমার মনে হয়, সমরেশের মতো ব্যক্তিত্ববান লেখক কখনোই এরকম কোনো চুক্তি করেননি। তাহলে কেন বাতিঘর বই বিক্রির জন্য অটোগ্রাফের লোভ দেখালো তরুণ পাঠকদের ? সমরেশকে নিয়ে এই তরুণদের ভালোবাসাকে আমি ভীষণ রকম শ্রদ্ধা করি। তাই ব্যাপারটা শুনে আমার মনে হয়েছে, ফাঁকতালে ব্যবসা করেছে বাতিঘর। করবেই তো। কেননা, বইটি বাতিঘর প্রকাশ করেছে।
কথা আর বাড়াচ্ছি না। বাতিঘর তো সমরেশকে পেল। আর আমরা দেখলাম, বাতিঘরের বই বিক্রির জন্য পাঠকের অনুভূতির বাজারে কীভাবে একজন সমরেশকে বিজ্ঞাপন বানানো হলো। আরও একটা কথা খোলাসা করা দরকার। বাতিঘর তরুণদের আরও নানাভাবে ঠকাচ্ছে। বাতিঘরে আমি বই কিনতে যাই। আমি সাধারণত রকমারি থেকে বেশি বই কিনি। বাতিঘরে যে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়, এটাও মানতে পারছি না। এটা আরও বাড়ানো উচিত। সেদিন একজন জানাল, এখন নাকি বাতিঘরে নিয়মিত সভা হয়। কথা হচ্ছে, সভা হবে মিলনায়তনে। এখানে পাঠক বই কিনতে যাবে, আলোচনা শুনতে নয়। আশা করি, প্রচার পেতে, বাজার পেতে- সস্তা বিজ্ঞাপনের আসর জমাবে না বাতিঘর। সৃজনশীল বইয়ের দোকানে শিল্পবোধ থাকতে হবে। নান্দনিকভাবে ব্যবসার প্রচার করতে হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd