সিন্ডিকেটের কবলে কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন স্পট

প্রকাশিত: ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯

সিন্ডিকেটের কবলে কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন স্পট
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন পর্যটন স্পট সাদা পাথর দিনদিন দেশ-বিদেশে খ্যাতি লাভ করায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক অপর সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানটি দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসনের পরোক্ষ তত্ত্বাবধান না থাকায় ঘটছে হওরানীসহ প্রাণনাশের ঘটনা। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান ভারতের পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ে। মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে পানির ঢল নামছে অবিরত। ধলাই নদী হয়ে স্বচ্ছ সে পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তের ওই স্থানে কোনো একসময় পাথর উত্তোলন করা হলেও বর্তমানে সরকারি নির্দেশে উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ঢলে নেমে আসা পাথরে কমে আসে সীমান্ত সংলগ্ন নদীর ওই স্থানের পানির গভীরতা। জেগে উঠেছে ছোটবড় সাড়ি সাড়ি সাদা পাথরের বিশাল এলাকা। এর ফলে দিনদিন বাড়তে থাকে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণা। জনসাধারনের কথা মাথায় রেখে সীমান্ত সংলগ্ন ওই স্থানটি এক সময় প্রশাসন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এ দর্শনীয় স্থানটি ভ্রমণ বিলাসীদের কাছে এখন অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। পাথর সাম্রাজ্য আর উজান থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ শীতল জলরাশির স্বাদ নিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভিড়। আর এই ভিড়কে কেন্দ্র করে পর্যটকদের নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সিন্ডিকেট ব্যবসা। তারমধ্যে রয়েছে গাড়ি পার্কিং, নৌকা ও খাবারের দোকান সিন্ডিকেট অন্যতম। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সিলেট বা তার বাহির থেকে আসা পর্যটকবাহী গাড়ি পার্কিংএ নেই কোনো নিয়মকানুন। বিশেষ করে মোটরসাইকেল পার্কিং এর নামে স্থনীয়রা যে যার মতো করে করছে চাঁদাবাজি। ভোলাগঞ্জ ঘাট থেকে চোখে দেখা যায় সাদা পাথর স্পট। সেখানে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যেতে সময় লাগে দশ থেকে পনেরো মিনিট। যাওয়া আসা ভাড়া নেয়া হয় আটশত টাকা। ঘাটের সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে উঠতে হয় নৌকায়। এক থেকে আটজন পর্যটক, বুঝিয়ে শুনিয়ে বেশি হলে আরো দু-একজন নিয়ে যাত্রা করে নৌকার মাঝি। নৌকা যত বড় হোক না কেন এর বেশি মানুষ হলে মাঝি যাবেনা। আর যারা একা বা দু-তিনজন মিলে ঘুরতে যান তারা পড়েন মহা বিড়ম্বনায়। তখন বাধ্যতামূলক নৌকা রিজার্ভ করতে হয়। জানতে চাইলে ঘাটের লোকজন বলে- এটা না কি তাদের ওখানকার নিয়ম। ঘাট সিন্ডিকেটের বাহিরে অন্য নৌকা কোনো পর্যটককে নিয়ে গেলে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ এনে জরিমানা, নৌকা আটকে রাখা ও মারধর পর্যন্ত করা হয় বলে কয়েকজন মাঝি জানিয়েছেন। ঘাট সূত্রে জানা যায়, ছুটির দিনে ১২০ থেকে ১৫০টি এবং ছুটির দিন ছাঁড়া ৭০ থেকে ৯০টি নৌকা ঘাট থেকে সাদা পাথর স্পটে আসা যাওয়া করে। সে হিসেবে প্রতিদিন বানিজ্য হচ্ছে শুধু নৌকা থেকে অর্ধ লক্ষ টাকা থেকে সোয়া এক লক্ষ টাকা। পার্কিং, খাবার দোকানসহ সিন্ডিকেট চক্র মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এই টাকার ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলে। আর সে কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘাট এলাকার অনেকে জানিয়েছেন। সাদা পাথরে উজান থেকে প্রবল বেগে নেমে আসা স্বচ্ছ পানিতে পর্যটকরা গোসল করতে নামেন। সাঁতার না জানার কারণে প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে মৃত্যুরমত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিনিহত ঘটছে। সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পানিতে তলিয়ে গেলে দু-দিন পর তার লাশ ভেসে উঠে। তার রেশ কাটতে না কাটতে আরো এক কলেজ ছাত্রের পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সাঁতার না জানা পর্যটকরা গাড়ির টিউব স্পট থেকে ভাড়া নেন। সেখানেও সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয়। ঘন্টা প্রতি দুইশত টাকা অগ্রিম দিয়ে টিউব ভাড়া নিতে হয়। টিউব ব্যবসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লাইফ জ্যাকেট পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছেন্না বলে একাধিক পর্যটক অভিযোগ তুলেন। এদিকে নারী পর্যটকরা স্বচ্ছ নীল পানিতে ভেজার পর কাপড় বদল করার জন্য প্লাস্টিকের চট দিয়ে বানানো ছোট্র ঘর ব্যবহার করলে গুনতে হয় জনপ্রতি ত্রিশ টাকা করে। স্পটের কাছে রয়েছে একটি মাত্র ভ্রাম্যমাণ খাবারে দোকান। সেখান থেকে কোনকিছু কিনলে বারতি টাকা নেয়ার রীতি চালু রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে স্পটে কাপড় বদলের কক্ষ, বিশ্রমের শেড, খাবার দোকন ও নিরাপত্তা চৌকির দাবি উঠলেও সিন্ডিকেট ব্যবসার জন্য সেদিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মিজান মাহমুদ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে আসেন সাদা পাথরে। ছেলেদের ইভটিজিংসহ নৌকা ভাড়া প্রসঙ্গে অনেকটা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলেন, আমরা তো অর্থাভাবে দলবেঁধে বিদেশ ভ্রমণ করতে না পারায় আমাদের দেশটাকে একটু ঘুরে দেখার চেষ্টা করি। এখানে এসে দেখতে পেলাম অনিয়মই নিয়ম হয়ে উঠেছে। যেখানে ৫০ টাকারও তেল জলেনা সেখানে নৌকায় ভাড়া সিন্ডিকেটের মাধ্যধে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া নেই ভাল মানের খাবারের দোকান। ছেলেপেলেরা করছে ইভটিজিং। সারাদিনে স্থানীয় প্রশাসনের কাউকে দেখতে পাইনি। সর্বত্রই অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। স্কুল শিক্ষার্থী হৃদয়, টিপু, সোহান, সামী, তাসনিম ও রবিউলরা মৌলভীবাজার থেকে এসেছে সাদা পাথরে। কথা হয় তাদের সাথে। তারা বলে, যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম শেষ হয়ে গেছে। বাড়িতে কলদিয়ে বলেছি বিকাশে টাকা পাঠাতে। এখন বিকাশের দোকান খোঁজছি নাম্বার দেয়ার জন্য। এভাবে সিন্ডিকেটের কবলে পরে অনেকে তিক্তবিরক্ত হওয়ায় যেমন সিলেটের সুনাম নষ্ট হচ্ছে তেমনি একসময় পর্যটক শূন্য হয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পর্যটকের জন্য লাইফ জ্যাকেট রাখার দাবি তোলেন একাধিক দর্শনার্থী। সিলেটের সুনাম রক্ষা করতে ও পর্যটক খ্যাতকে বাঁচাতে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সেদিকে বিশেষ নজর দেয়ার আবেদন জানান। এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে অনিহা প্রকাশ করে টিএনও’র সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও) বিজেন ব্যানার্জী এ প্রতিবেদককে জানান, পর্যটকের জন্য পাবলিক টয়লেট, রেস্ট শেট নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। নৌকা ডুবির ঘটনা এরাতে আটজনের অধিক যাত্রী বহনে নিষেধ করা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান। ওপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, পার্কিং এ চাঁদাবাজি হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। কোনো পর্যটক অভিযোগ করলে তার বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান টিএনও।
ক্রাইম সিলেট/ জাবেদ এমরান

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..