জাফলংয়ের বনাঞ্চলের মালিকানা নিয়ে মূখোমূখি : ফায়দা লুঠছে তৃতীয় পক্ষ

প্রকাশিত: ৩:১৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৮

জাফলংয়ের বনাঞ্চলের মালিকানা নিয়ে মূখোমূখি : ফায়দা লুঠছে তৃতীয় পক্ষ

আলী হোসেন, গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলাস্থ জাফলংয়ের ছৈলাখেল ৩য় খন্ড ও ৯ম খন্ডের সোনা টিলায়। বনাঞ্চলের মালিকানা নিয়ে মূখোমূখি বনবিভাগ-মোহাজিরগন। ফায়দা লুঠছে তৃতীয় পক্ষ। সরকারী বন বিভাগের জায়গা দখল করে আনুমানিক একহাজার অবৈধ পাথর ড্রাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপন করেছে একটি মহল। বন বিভাগের রোপায়িত গাছ পালা, পাহাড়, টিলা অবাধে কেটে সাবাড় করছেন বন খেকুরা। বন্ধু প্রতিম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথর রাখতে গিয়ে অবৈধ ড্রাম্পিং ইয়ার্ড, বসত বাড়ি, পাকা দালান তৈরিতে ও ব্যবহার হচ্ছে বন বিভাগের এই জায়গা। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তা আব্দুল খালিককে মেনেজ করা সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা নাকি চালিয়ে যাচ্ছেন এসব দখলযজ্ঞ। জাফলং ভিটের সর্বমোট ভূমির আয়তন ৮ হাজার ৯ একর ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৩২ শত ৭৬ একর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা বসিয়ে বার্ষিক লীজ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন স্থানীয় বিট কর্মকর্তা। এমন ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় মোহাজির গংদের।
সরে জমিনে, জাফলং মুসলিম নগর গ্রামের মোহাজির) রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৫১সালে মোহাজিরদের পূর্নবাসনের জন্য সরকার এই জায়গাটি গেজেট ভুক্ত করে। এরপর থেকে মোহাজিরগন বংশ পরমপরায় সরকারী কর এবং খাজনা নিয়মিত পরিশোধ করে শান্তিপূর্নভাবে বসবাস করে আসছে। পরবর্তীতে সরকার ১৯৮৫ সালে ঐ গেজেটকে বাতিল না করে সেখানকার ( কিছু অংশ ) জায়গা নতুন গেজেটের আওতায় নিয়ে যায়। এরপর ২০০০ সালে আমরা জানতে পারলাম আমাদের গেজেটকে বাতিল করে বন বিভাগের নামে নতুন গেজেট করা হয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের গেজেটে স্থানীয় কোন প্রসাশনের অনুমোদন না থাকায় পরবর্তীতে আমরা মহামান্য হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করি। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট বন বিভাগসহ অন্যান্য দপ্তরের সকল কার্যক্রমকে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে মোহাজিরগন আরোও জানান, মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে বিট কর্মকর্তার সাথে কতিপয় অসাধু লীজ দারীরা আতাত গড়ে। বিটকর্মকর্তার সাথে সু-সম্পর্কের কারনে অবৈধ লীজ গ্রহীতারা প্রতিনিয়ত মোহাজিরগনকে বিভিন্ন হুমকি প্রদর্শনসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। এ যাবৎ পর্যন্ত ৩ হাজার মোহাজিরদের উপর বন বিভাগের মামলাও রয়েছে।
এব্যাপারে বিট কর্মকর্তা আব্দুল খালিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২০০৭ সালের ২ফেব্রুয়ারী যৌথ বাহিনীর অভিযানে দখলমুক্ত হয় জাফলং বন বিভাগের ৫৩৭ একর জায়গা। ধ্বংস করা হয় অবৈধ স্থাপনা ক্রাশার মেশিন বসতবাড়ি,দোকান কোটা ইত্যাদি। পরে এসব জায়গায় গ্রীণ পার্ক নির্মাণ করেন বন বিভাগ। পার্কটিতে লাগানো হয় নানা জাতের গাছপালা। পর্যটকদের জন্য তৈরি করা হয় রেস্ট হাউস ও পর্যটক মোটেল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সেজে উঠে পুরো এলাকা। পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠে এই এলাকা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গ্রীণ পার্ক এলাকার গাছ পালাসহ পাহাড় কেটে ধ্বংসাস্থল করে দখল নিয়েছেন মোহাজির নামিয় কতিপয় বনখেকো ও অসাধু একটি সিন্ডিকেট চক্র। মহামান্য হাইকোর্ট ১৯৫১সালের গেজেটকে বাতিল করে ১৯৮৫সালে মাঠ ফর্সা,তসদিক,প্রিন্ট ফর্সা বন বিভাগের নামে রের্কড করেছে। ছৈলাখেল ৩য় খন্ড মৌজার সমুদয় ভূমি বন বিভাগের গেজেটভূক্ত ও বর্তমান জরিপে বন বিভাগের নামে রের্কড ও রয়েছে। উক্ত মৌজায় মোহাজিরদের নামে কোন রের্কডপত্রাদি নাই। আর এরই প্রেক্ষিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গেলে বিগত ৩ডিসেম্বর আমার উপর অতর্কিত হামলা করে এবং আমাকে প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করে। যার প্রেক্ষিতে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোয়াইনঘাট ও গোয়াইনঘা থানা পুলিশে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, দীর্ঘদিন থেকে জাফলং ছৈলাখেল ৩য়খন্ড ও ৯ম খন্ড এলাকায় বন বিভাগের জায়গা নিয়ে মোহাজির ও বন বিভাগের বিরোধ চলছে। উভয় পক্ষের কাগজ পত্রাদি বিশ্লেষন করে অচিরেই নিরসন তা করা হবে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..