সিলেট ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক :: পুণ্যভূমি সিলেটে এক শ্রেণীর দেহপসারীনিরা ভয়ংকর ফাঁদ গড়ে তুলেছে। ওদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মানুষ। তাদের সর্দার আর পুলিশের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এই ফাঁদের নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ উঠেছে। ওরা পুণ্যভূমিকে শুধু কলুষিত করছে না, সিলেটের মারাতœক সম্মানহানী ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজন। এরা এতোটাই ভয়ংকর যে, ওদের আশপাশ দিয়ে হেঁটে যেতে মানুষজন ভয় পায়। নগরীর সুরমা মার্কেট থেকে সিটি পয়েন্ট পর্যন্ত ওদের দখলে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওদের পদচারনায় এই এলাকা কলুষিত হচ্ছে, বিব্রত হচ্ছেন মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে এই এলাকা পাড়ি দিতে আত্মসম্মানে মারাত্মক আঘাত লাগে যে কারোরই। ওদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হয়রানীর শিকার হওয়া ভূক্তভোগী অনেকেই সংবাদপত্র অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। এমনি একজন ভূক্তভোগী সোমবার (১৩আগষ্ট) জজ কোর্ট মসজিদের সামনে সাগর (ছদ্মনাম) ছাতক থেকে এসে সুরমা মার্কেট পয়েন্টের পতিতাদের হাতে হেনস্থা হয়েছেন। চল্লিশোর্ধ এই ভদ্রলোক বলেন, সোমবার (১৩আগষ্ট) সন্ধায় সুরমা মার্কেট এলাকা থেকে জজ আদালত ভবনের ফুটপাত দিয়ে রিক্সায় সিটি পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলাম। জজ কোর্ট মসজিদের সম্মুখ গেইটের সামনে আসা মাত্র বোরকা পরিহিত এক মহিলা উনার রিক্সায় উঠে শার্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেয়। সাথে সাথে তিনি ঐ মহিলার হাতে ঝাপটে ধরেন। হাতে ধরা মাত্রই আরো ৩ জন বোরকা পরিহিত মহিলা দ্রæত এসে এই ভদ্রলোককে মারধর করতে থাকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা তার পকেট থেকে টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায়। অদূরেই বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন সদস্য দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলেন। কিন্তু তারা এগিয়ে আসেননি। সাংবাদিকের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী সাগর। পরে ওই সাংবাদিক সাগরের টাকা পয়সা মোবাইল উদ্ধার করে দেন। শুধু সাগর নয়, ভাসমান এ সকল পতিতাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হচ্ছেন অসংখ্য সহজ সরল মানুষ। এদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। খদ্দের সংগ্রহ করার সাথে সাথেই সিন্ডিকেটের কাজ শুরু হয়। খদ্দেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা রিকশাতে তুলতে পারলেই বাজিমাত। সিএনজি যোগে কিছুদূর যাওয়ার পরই পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অসাধু কতিপয় পুলিশ সিগন্যাল দিয়ে অটোরিকশা আটকে দেবে। সাথে সাথে পতিতা নেমে দ্রæত চলে যায়। পুলিশ খদ্দেরকে নিয়ে নির্জন স্থানে চলে যাবে। সেখানে নিয়ে আটকের ভয় দেখিয়ে টাকা-মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় অসাধু পুলিশ। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। গত দুদিন সরেজমিন সুরমা মার্কেট থেকে সিটি পয়েন্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এদেরকে সহযোগিতা করে কিছু অ-সিলেটি ধান্ধাবাজ। এরা আদালত ভবন প্রাঙ্গণে ঘুরাফেরা করে দেহপসারিনী আর তাদের সর্দারকে নিয়ন্ত্রণ করে। মোবাইলে এরা একে অন্যের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে। সিলেটের বিশিষ্টজনেরা পুণ্যভূমিতে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা আর প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রæত এসব বন্ধে উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। অবাক হই অদূরেই বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। অথচ প্রকাশ্যে এ ধরনের বেহায়াপনা ঘটলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিশিষ্টজনেরা আরও বলেন কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যের ছত্রছায়ায় এরা এখানে ভাসমান পতিতালয় গড়ে তুলেছে। নগরীর মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের আনাগোনা এই এলাকায় প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যায়। এতে করে যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। পুলিশের দায়িত্ব এসকল ভাসমান পতিতাদের গ্রেফতার নয় উদ্ধার করে সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিপথগামী তরুণদের শান্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কার্যক্রম রয়েছে। তাদের উচিত পুলিশের সহযোগিতায় এসকল মহিলাদের উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। নতুবা পুণ্যভূমিতে এ ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ হবে না। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, এদেরকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠালে দু’এক দিন পর জরিমানা দিয়ে জামিনে বের হয়ে আসে। পুলিশ গিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরক্ষণে আবার চলে আসে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠালে সেখান থেকে তারা পালিয়ে আসে। এদের নিয়ে মহাবিপদে আছি।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd