সিলেট ২৫শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ | ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০১৮
Sharing is caring!
আব্দুল্লাহ আল নোমান, কোম্পানীগঞ্জ ::
দেশের পাথরের যোগানের সর্ব্বোচ্চ সরবরাহ হয়ে থাকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে। সরকারি গেজেটভূক্ত পাথর কোয়ারির পাশাপাশি টিলা, নদীর তীর, ফসলী ভূমি থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এ সকল পাথর ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়। পাথরের জনপদ কোম্পানীঞ্জে পাথর পরিবহনে পথে পথে ওৎ পেতে বসে আছে চাঁদাবাজ চক্র। ট্রাক চালকদের কাছে ‘লাল টোকেন’ হিসেবে পরিচিত একটি টোকেনের মাধ্যমে চলছে বেপরোয়া এ চাঁদাবাজি। উপজেলার ৩টি স্থানে একাধিক সংগঠনের নামে এ টাকা উত্তোলন করা হলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিদিন চাঁদাবাজদের নিযুক্ত লোকজন সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে আমবাড়ি, লামনীগাঁও ও চাটিবহর এলাকায় চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। চাঁদা না দিলে ট্রাক আটকে রাখা, চালকদের মারধোর থেকে শুরু করে সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও এখানে নিয়মিত। একেকটি স্পটে সর্বনি¤œ ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পাথরবাহী ট্রাক যতোবার এ স্পট অতিক্রম করে ততবারই টাকা দিতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় পাথর পরিবহনের বিকল্প রাস্তা হয়ে উঠেছে আমবাড়ি হয়ে ছাতক যাওয়ার রাস্তাটি। প্রতিদিন এই রাস্তায় পাথর বোঝাই ৫০০ টির বেশি ট্রাক দিনে রাতে চলাচল করে। এক একটি ট্রাক প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ বার পাথর নিয়ে আছে আমবাড়িতে। সেখান থেকে নৌকাযোগে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা ট্রাকের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করছে। প্রতিবার সাইফুর রহমান ডিগ্রী কলেজের পুকুরপাড়ের কাছে রাস্তায় ১৫০ টাকা দিতে হয়। টাকার বিনিময়ে দেয়া হয় লাল টোকেন। সেই টোকেন জমা দিয়ে কলেজের পিছনের বিলের শেষ মাথায় পার হয় ট্রাক। টাকা না দিলে সেই রাস্তা দিয়ে কোন ট্রাক চলাচল করতে পারে না। চাঁদাবাজরা স্থানীয় প্রভাবশালী ও বেশ কিছু সংগঠনের নাম ব্যবহার করায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে ভয় পায় বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়াও চাটিবহর গ্রামের ট্রাক প্রতি ৫০ টাকা আদায় করা হয়।
স্থানীয়রা জানায় উপজেলা সদরের সামনেই এইভাবে চাঁদাবাজি অনেকটা দু:খজনক। তারা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক চালক জানান, অনেকটা জোর করেই সেখানে টাকা আদায় করা হয়। তারা রাস্তা ঠিক করার নামে টাকা আদায় করে। অথচ সরকারি বরাদ্দে রাস্তার কাজ হয়। এর সাথে কয়েকটি সংগঠন জড়িত। চাঁদাবাজির জন্য সেখানে পাথর পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি। অন্য দিকে লামনীগাঁও হয়ে হাওর দিয়ে কেছু টিলা রাস্তায় ট্রাক প্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, লামনীগাঁওয়ের কামাল, আবদুল ওয়াহিদ, কোম্পানীগঞ্জ গ্রামের আবদুল হক, চাটিবহর গ্রামের বাশির, শিহাব ও তাদের লোকজনেরা এই টাকা আদায় করে। একটি হিসেবে দেখা যায়, কলেজ গেইট থেকে আম বাড়ি রাস্তায় প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদ আদায় করা হয়। যা মাসে ৪৫ লক্ষ টাকা ও বছরে প্রায় কয়েক কোটি টাকা। আর কেছু টিলা রাস্তায় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। সেই টাকার কাছে অসহায় হয়ে আছে স্থানীরা। অতিরিক্ত ট্রাক চলাচলের জন্য ধূলা কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বসবাস করছে কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় তেলিখাল ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবদুল ওয়াদুদ আলফু মিয়া বলেন, এলাকায় কে বা কারা চাঁদাবাজি করছে তা আমার জানা নেই। আমার নামে কোনো চাঁদা আদায় হচ্ছে না। এছাড়া যারা চাঁদাবাজি করছে তাদের বারণ করার জন্য প্রশাসন আছে, আমি তাদের বারণ করতে পারি না।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সফিকুর রহমান খান জানান, কোনোভাবেই চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবেনা। জড়িতরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেনো তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল লাইছ চাঁদাবাজির বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশাস দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে। সূত্র- সবুজ সিলেট
………………………..
Design and developed by best-bd