জাফলংয়ে বোমা মেশিন চক্র”র হাতে ক্ষত-বিক্ষত পরিবেশ

প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০১৭

Manual1 Ad Code

বিশেষ প্রতিবেদন:: বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক রূপ কন্যা হিসাবে জাফলং জনপ্রিয়। পাহাড় নদী সবুজ প্রকৃতির জাফলং দিনে দিনে বিরান ভূমিতে পরিনত হয়ে ভায়ল রূপ ধারণ করছে। আর সব কিছুর মূলে রয়েছে যন্ত্র দানব বোমা মেশিন।
এই যন্ত্র দিয়ে ভূগর্ভের ৭০-৮০ ফুট গভীর হতে পাথর উত্তোলন করায় তীর ধষে যাচ্ছে নদী গর্ভে। ফলে পিয়াইন নদীর তীরবর্তী নয়াবস্তী, কান্দুবস্তি, মন্দীরের জুমের প্রকৃতি নষ্ট হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ১৫শত পরিবারের নিরাপদ বাসস্থান। শুষ্ক মৌসুম শুরুর পূর্ব মূহুর্তে যন্ত্র দানব ”বোমা মেশিন” দিয়ে পাথর উত্তোলনে করা হয়। সম্প্রতি দলমত নির্বিশেষে একটি সর্বদলীয় “যৌথ বোমা মেশিন চক্র” নয়াবস্তী, কান্দুবস্তি ও মন্দীরের জুম এলাকায় প্রায় ২০০ টি ভাসমান ”বোমা মেশিন” স্থাপন করে পরিবেশ ধ্বংশের মহাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। সন্ধ্যা হতে না হতেই ”যৌথ বোমা বাহিনী” অবাধে চলাছে পাথর উত্তোলনের কাজ করছে। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করায় আশ-পাশের ভূমি ধসে নদীতে বিলিন হচ্ছে নয়াবস্তি, কান্দুবস্তি ও মন্দিরের জুম এলাকা। ধ্বংসযজ্ঞ এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২ বৎসরের মধ্যে সিলেটের বুক থেকে জাফলংয়ের মানচিত্র হতে হারিয়ে যাবে মন্দ্রিরের জুম সহ দুইটি গ্রাম। বাসস্তান ছেড়ে চলে যেতে হবে নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তির প্রায় ১৫শত পরিবারকে। সম্প্রতি অভিযানের পর দুই দিন বন্ধ থাকার পর ২০শে অক্টোবর হতে পূনরায় যৌথ বোমা মেশিন বাহিনী ধ্বংস যজ্ঞে মেতে উঠে।

Manual7 Ad Code

বোমা মেশিন চালানোর ক্ষেত্রে চক্রের সাথে জড়িত রয়ছে সরকার ও বিরুধী দলের প্রভাবশালীরা। তাই বাহিনীটি মুলত জাফলং প্রকৃতি ধ্বংস করে তাদের ব্যক্তি সুবিধা হাসিল করছে। এনিয়ে জাফলংয়ের সচেতন সমাজ প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
অপর দিকে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) রিটের ফলে বোমা মেশিন নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। নিদের্শ মোতাবেক টাস্কফোর্স অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ‘টাস্কফোর্স’ প্রতি মাসে অন্তত অভিযান চালায়। টাস্কফোর্স-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অভিযানের খবর আগে থেকে পেয়ে যান বোমা মেশিন পরিচালনায় কারিরা। যার কারণে তেমন সুফল মিলছে না।

Manual6 Ad Code

জাফলংয়ের নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তির বাসিন্দারা জানা- পাথর কোয়ারি এলাকায় একসময় সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন হত। পানিতে নেমে হাত দিয়ে পাথর উত্তোলনের জন্য তখন হাজার হাজার পাথর শ্রমিক আর বারকি নৌকার আনাগোনা ছিল নদীতে। তখন জাফলংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি সাধন হয়নি। সম্প্রতি কয়েক বৎসর হতে কম সময়ে বেশি পাথর তোলার জন্য একশ্রেনির অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে বোমা মেশিনের ব্যবহার শুরু করে।

Manual7 Ad Code

২০০৯ সালের দিকে বড় বড় পাইপ দিয়ে মাটির প্রায় ৫০ থেকে ৮০ ফুট গভীর হতে পাওয়ার পাম্প যন্ত্রের মাধ্যমে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। ওই যন্ত্র দিয়ে পাথর তোলার সময় বোমার মতো শব্দ হয় বলে এই যন্ত্রের নামকরন করা হয় ‘বোমা মেশিন’। সপ্তাহ খানেক আগে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারত সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে নেমে আসা পিয়াইন আর ডাউকি নদের তীরজুড়ে সারি সারি বোমা মেশিন। বড় বড় পাইপ বসিয়ে মাটির গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে পিয়াইন নদের মোহনার পার্শ্ববর্তী জাফলং চা-বাগানের প্রায় ৩০০ একর ভূমি। জাফলংয়ের ওপারে আদিবাসী পল্লীর দুটি পানপুঞ্জিও নদীগর্ভে অচিরেই বিলিন হয়ে যাবে। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে পুরো জাফলং বড় রকমের ভূমিধসের মুখে পড়বে বলে স্থানীয় বাসিন্ধা ও পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা।

এব্যাপারে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে লিখিত ভাবে জানিয়েও স্থায়ী প্রতিকার পাচ্ছে না নয়াবস্তি, কান্দুবস্তির জনসাধারণ। পিয়াইন নদীর তীরে নয়াবস্তি, কান্দুবস্তির মধ্যে স্থাপিত বোমা মেশিনের সঙ্গে থাকা কয়েক জনের সাথে কথা বললেও এ যন্ত্রের মালিক কারা তা তাঁরা জানায়নি। এলাকায় সরেজমিন অবস্থানকালে সংবাদকর্মী পরিচয় গোপন রেখে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান- এক একটি বোমা মেশিন দৈনিক চালাতে ৪০ হতে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয় একটি যৌথ বোমা মেশিন চক্রকে। তারা টাস্কফোর্সের অভিযান নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের আহবায়ক ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, আমি জাফলংয়ের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিত অভিযান করছি এবং অভিযান অব্যাহত রেখেছি। অপরাধিদের কোন ভাবে ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম এর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ এ যন্ত্রের ব্যবহার কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না, তা তদন্ত করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহন করার।
সারী নদী বাচঁও আন্দোলনের সভাপতি ও লেখক-কলামিষ্ট আব্দুল হাই আল হাদি জানান- পরিবেশে টিক রাখার জন্য দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের একার নয়। এলাকাবাসীকেও সচেতন হতে হবে। এলাকাবাসী সচেতন হলে জাফলংয়ের পরিবেশ রক্ষা হবে। পরিবেশ বিধ্বংসী সকল কর্মকান্ড বন্ধে স্থানীয় এলাকাবাসীকে নিয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2017
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..