সুনামগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান রেজার বিরুদ্ধে ভিজিএফের চাল চুরির অভিযোগ

প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২৩

সুনামগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যান রেজার বিরুদ্ধে ভিজিএফের চাল চুরির অভিযোগ

Manual4 Ad Code

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে ১০ কেজি হারে ভিজিএফ এর চাল বন্টনে অনিয়ম এবং ইউপি সদস্যার সাথে অসদাচনের অভিযোগে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের বাংলোতে অভিযোগটি দায়ের করেছেন পরিষদের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্যা তানজিনা বেগম। অভিযোগে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা ও গ্রাম পুলিশ লিলু মিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে প্রকাশ,পবিত্র ইদুল আযহা উপলক্ষ্যে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে ১০ কেজি হারে ১৪৩৮ জন অতি দরিদ্র নাগরিককে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত উক্ত চাল আনুপাতিক হারে বন্টনের জন্য ইউপি সদস্যা হিসেবে তানজিনা বেগমকে মাত্র ৮০টি কার্ড প্রদান করেন চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা। সোমবার সকাল ১০ টা থেকে প্রত্যেক ইউপি সদস্য,সদস্যা ও চেয়ারম্যানের বরাদ্দকৃত কার্ডের অনুপাতে কার্ড গ্রহীতাদেরকে ভিজিএফ এর চাল বিতরন শুরু করেন চেয়ারম্যান। কিন্তু চাল বিতরনকালে পরিষদের কোন সদস্য সদস্যাদেরকেই তিনি ঘটনাস্থলে রাখেননি।

Manual5 Ad Code

এ সময় প্রচলিত বাটখারার পরিবর্তে চেয়ারম্যান তার প্রতিভূ জালাল মিয়ার মাধ্যমে একটি প্লাস্টিকের বালতি দ্বারা চাল প্রদান করেন। উপকারভোগীরা তার অফিস থেকে চাল সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রত্যেকেই ১০ কেজির স্থলে মাত্র ৮ কেজি ও সাড়ে ৮ কেজি করে চাল পান। কেন ওজনে ১০ কেজি চালের স্থলে ৮ কেজি করে চাল প্রদান করছেন জানতে চাইলে আমির হোসেন রেজা বলেন তিনি ক্যারিং খরচ বহনের জন্য ইচ্ছেকৃতভাবে ওজনে চাল কম দিচ্ছেন।

Manual5 Ad Code

সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ সদস্যা মিনারানী কে তানজিনার কাছে পাটিয়ে অফিসে গিয়ে তার প্রস্তুতকৃত মাস্টাররোলে স্বাক্ষর করার জন্য চাপপ্রয়োগ করেন। ইউপি সদস্যা তানজিনা বেগম অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা ও ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আফসান পারভেজকে দেখতে পান।

Manual2 Ad Code

এ সময় মাস্টাররোলে স্বাক্ষর করার জন্য তাকে চাপপ্রয়োগ করলে তানজিনা বেগম বলেন,আমার সকল কার্ডধারীরা ঠিকমতো বরাদ্দকৃত চাল পায়নি,আপনি ১০ কেজির স্থলে প্রত্যেককে ৮ কেজি করে চাল দিয়েছেন এবং কিছু চাল বাজারে বিক্রয় করেছেন। তাই আমি স্বাক্ষর করতে পারবোনা বললে আমির হোসেন রেজা ও গ্রাম পুলিশ লিলু মিয়া অফিসের সাঁটার ফেলে তাকে তালাবদ্ধ করে মারপিটের জন্য উদ্যত হন। এমনকি তানজিনা বেগমকে খুন করার হুমকী দিয়ে অশালীন ভাষায় গালিগালাজও করেন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা তানজিনার কাছ থেকে তার স্বাক্ষরিত ৬টি ভিজিএফ কার্ড জোরপূর্বকভাবে কেড়ে নেন। ফলে ৬ জন কার্ডধারী তাদের বরাদ্দকৃত চাল পায়নি। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার মুঠোফোনে কল করলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,চাল বন্টনের সময় ইউপি সদস্য ও সদস্যা অনেকেই ছিলেন। অনেকেই মাস্টাররোলে এসে স্বাক্ষর দিয়ে গেছেন। আর যারা উপস্থিত ছিলেননা তারা চেয়েছিলেন নিজেরা ভাগ ভাটোয়ারা করে চালগুলো নিয়ে নেবেন। আমি না দেওয়ায় তারা আমার উপর অভিযোগ করেছেন। পরিষদের সদস্যা তানজিনা বেগম রাগ করে মাস্টাররোলে স্বাক্ষর দেননি বলেও জানান তিনি।

Manual2 Ad Code

ইউপি সদস্যা তানজিনা বেগম বলেন, চেয়ারম্যান উপকারভোগীদেরকে ১০ কেজির স্থলে ৮ কেজি করে চাল দিয়েছেন। এর আগে ক্যারিং খরচ এর অযুহাতে কয়েক বস্তা চাল বিক্রয় করে দিয়েছেন। আমাকে অফিসে ঢেকে নিয়ে জোর করে মাস্টাররোলে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেন। আমি তাতে সম্মত না হওয়ায় তিনি আমার স্বাক্ষরিত ৬টি ভিজিএফ কার্ড কেড়ে নেন। এবং আমাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে মারতে উদ্যত হন। আমি ঘটনার কথা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে জানানোর জন্য ফোন করলে তিনি কল রিসিভ না করায় আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ঘটনার কথা জানাই। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আমি তাঁর নির্দেশমতো সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে গিয়ে অভিযোগটি দাখিল করি।
সুরমা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খুরশেদ আহমেদ ও মাজেদা বেগম বলেন,চেয়ারম্যানের উশৃঙ্খল আচরনে আমরা অতিষ্ট। আমরা ৯ জন ইউপি সদস্য ও সদস্যাগণ উক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের কাছে আমাদের দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। তারা বলেন,গত ২ বছর ধরে ৪টি ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহা উপলক্ষ্যে সরকারের বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল ওজনে কম দেয়াসহ তিনি ক্যারিং খরচ এর কথা বলে তার ইচ্ছেমতো বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি করে গরীব মানুষের হক আত্মসাৎ করেন। রিলিফ এর চাল চুরি এবং ইউপি সদস্যা,সদস্য,গ্রাম পুলিশ ও উপকারভোগী নারীপুরুষদের সাথে অসদাচরন ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা উক্ত চেয়ারম্যানের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এর আগেও পরিষদের সকল সদস্য সদস্যারা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করলে সরকার তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাসপেন্ড করেন বলেও জানান সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সদস্যারা।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মানিক মিয়া বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত ভিজিএফ এর চাল জনপ্রতি ১০ কেজি হারে সঠিকমতো মাফ করে দেয়ার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে। কোন চেয়ারম্যান যদি ওজনে কাউকে কম দেন এবং বরাদ্দকৃত চালের কিছু পরিমাণ চাল বিক্রয় করে ক্যারিং খরচ বহন করেন তাহলে এর জন্য ঐ চেয়ারম্যানই দায়ী হবেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

June 2023
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930

সর্বশেষ খবর

………………………..