মাসিক আয় ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা: আনোয়ারুজ্জামানকে কারা দেবে নির্বাচনের খরচ?

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২৩

মাসিক আয় ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা: আনোয়ারুজ্জামানকে কারা দেবে নির্বাচনের খরচ?

Manual6 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বার্ষিক আয় মাত্র ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। এ হিসেবে তার মাসিক আয় ২৪ হাজার ৫৯০ টাকা।

 

আনোয়ারুজামান চৌধুরী স্বপরিবারের যুক্তরাজ্যে থাকেন। দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। নির্বাচনী খরচ মেটাতে তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের এবং অন্যদের কাছ থেকে অনুদান নেবেন বলে জানিয়েছেন।

 

Manual3 Ad Code

এদিকে, হলফনামায় আয়ের তথ্য নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাধ্যবাধকতা না থাকা নির্বাচন কমিশনে তিনি যুক্তরাজ্যের আয়ের তথ্য দেননি।

 

দেশের আয় যৎসামান্য হওয়ায় নির্বাচনের বিপুল ব্যয় তিনি কীভাবে মেটাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হলফনামায় উল্লেখ করা তার আয়ের হিসাবের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন মেয়র প্রার্থী সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন, তবে বড় দলের প্রার্থীরা কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 

Manual2 Ad Code

দেশে নিজের তেমন কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই উল্লেখ করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের অনুদানেই তিনি নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন।

 

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বলেন, ‘আমি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে থাকি। সেখানে আমার ভাইদের ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়া আমি একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় অংশীদার। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় যুক্তরাজ্যে আয়ের তথ্য আমি হলফনামায় উল্লেখ করিনি।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানরা যুক্তরাজ্যে চাকরি করে। তারা সবাই আমার নির্বাচনী খরচ মেটাতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া প্রবাসী অনেক বন্ধুবান্ধবও অনুদান দেবে।

 

‘সবার সহায়তায় আমি নির্বাচনী ব্যয় মেটাব, তবে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ব্যয়ের বেশি আমি খরচ করব না।’

 

যুক্তরাজ্যের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনের একটি রেস্তোরাঁয় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অংশীদারত্ব রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে তার আর কোনো দৃশ্যমান ব্যবসা নেই।

 

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয়ের মধ্যে কৃষি খাত থেকে আসে ১ লাখ টাকা। এর বাইরে বাড়ি/দোকান ভাড়া থেকে ৪৭ হাজার ৫৪২ এবং ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা আয় হয়।

 

আনোয়ারুজ্জামানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং দুই সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে।

Manual1 Ad Code

 

তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালংকার। আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিন বিঘা কৃষিজমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, তবে তার কোনো দায় বা দেনা নেই।

 

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেয়, তবে এটা কেউই মানেন না। আদতে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও কোটি টাকার ওপরে ব্যয় করেন।

 

‘আর মেয়র প্রার্থীদের ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব পাওয়াই তো দুষ্কর। সিলেটের মেয়র প্রার্থীদের আয় যদি আসলেই এত কম হয়, তাহলে তিনি নির্বাচনের এই বিপুল ব্যয় মেটাবেন কী করে?’

Manual4 Ad Code

 

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হাসান মোরশেদ বলেন, পাবলিক পালস বুঝতে পারা সবযুগেই রাজনীতিবিদদের প্রধান বৈশিষ্ট হিসেবে বিবেচিত। প্রার্থীদের দেওয়া কোন তথ্য মানুষ বিশ্বাস করবে, কোনটা করবে না, কোনটা নিয়ে হাসি-তামাশা করবে সেটা যদি রাজনীতিবিদরা বিবেচনা না করেন তাহলে গভীর সমস্যা। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর দাবি করেছেন তার মাসিক আয় ২৪ হাজার টাকা। বছরে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা।

 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে করযোগ্য বাৎসরিক আয় ৩ লক্ষ টাকা। তার মানে তিনি ন্যুনতম করযোগ্য আয়টুকুও উপার্জন করতে পারেন না। অতএব তিনি করদাতা নন। সিটি করপোরেশনের একটি প্রধান দায়িত্ব হোল্ডিং ট্যাক্সসহ নানাবিধ কর আদায়। যিনি নিজে করদাতা নন, তিনি কর আদায়কারী হবেন? কনফ্লিক্ট অব মোরালিটি নয়?

 

সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ কি এই তথ্য বিশ্বাস করল; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন রাখেন হাসান মোরশেদ।

 

সিলেটে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইকালে পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আর ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

 

আগামী ২১ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..