দোয়ারায় অনিয়মের ‘নাটের গুরু’ তাজির উদ্দিন!

প্রকাশিত: ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২৩

দোয়ারায় অনিয়মের ‘নাটের গুরু’ তাজির উদ্দিন!

Manual6 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : অসহায় ভূমিহীনদের বন্দোবস্তের জায়গা, সরকারি ভূমিসহ হাওড়ের প্রায় ১০ একর ভূমিজুড়ে পুকুর খনন করলেন সাবেক ইউপি সদস্য ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি দাবিদার তাজির উদ্দিন। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের রায়নগর গ্রামের মৃত ওয়াহিদ বকসের পুত্র।

অনুসন্ধানে তার সম্পর্কে বেরিয়ে আসে অনেক গোপন তথ্য। এলাকায় প্রচার রয়েছে, যে দল যখন ক্ষমতায় আসে তিনি তখন ওই দলের এমপিসহ নেতাকর্মীদের ঘা ঘেষে চলেন। তোষামোদ করে অল্প দিনেই হয়ে যান উপজেলার বড় নেতা। হাওড় উন্নয়নসহ, বিল-ঝিল সবই থাকে তিনি ও তার আত্মীয় স্বজনের দখলে।

১৯৯১ সালে ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনে অ্যাড. আব্দুল মজিদ মাস্টার জাতীয় পার্টির এমপি থাকাকালে তিনি ছিলেন জাপা’র বড় নেতা। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্বর্ণের ধানের ছড়া উপহার দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য কলিমউদ্দিন আহমদ মিলনের হাতধরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ফের তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হয়ে উঠেন উপজেলার বড় নেতা। টাকায় কিনেন পদপদবী।

এদিকে সম্প্রতি এলাকার ভূমিহীনদের সরকারি বন্দোবস্তের জায়গা জবরদখল করে পুকুর নির্মাণসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহষ্পতিবার (২৭ এপ্রিল ২০২৩) দুপুরে এলাকার সর্বস্তরের অসহায় নারী ও পুরুষ তার বিরুদ্ধে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন।

মানববন্ধনে এলাকাবাসী বলেন, তাজির উদ্দিন মেম্বার অসহায় মানুষের বন্দোবস্তের ভূমি জবরদখলসহ তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তার এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এতদিন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার মিলেনি। তিনি বন্দোবস্তের জায়গা জমি জবরদখল করে পাউবোর ৩৮ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর পুকুরের পাড় নির্মাণ করে পাড় হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

এলাকার লোকজন আরও বলেন, উপজেলা শ্রমিক লীগের বড়ো নেতা হিসেবে দাবি করে সাবেক ওই ইউপি সদস্য ভূমি দখলসহ এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দাসহ বড়বন্দ গ্রামের অসহায় জেলেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সরকারি বন্দোবস্তের ভূমি জবর দখল করে হাওড়ে পুকুর খনন করেছেন। সরকার দলের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তাজির উদ্দিন।

স্থানীয়রা বলেন, তিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নামে বেনামে ভাই ভাই, ভাতিজাকে পিআইসি’র সভাপতি, সেক্রেটারি করাসহ প্রতিবছর একাধিক ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ তিনি নিজেই করেন।

অপর দিকে গত বছর বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর ও জমির ঠিকাদারি নিজেই করেন। শুধু বড়বন্দ, পরমেশ্বরী পুর গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক ঘর থেকে প্রতি ঘরে ৪০/৫০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন বল অভিযোগ রয়েছে। মাত্র কয়েক বছরে তিনি আঙুল ফুলে হয়ে ওঠেছেন কলাগাছ। অল্প দিনেই হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক।

চলতি বছর প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অলিখিত ঠিকাদারি নিয়েছিলেন তাজির উদ্দিন। বহুল আলোচিত আজমপুর সুরমা তীরে ৯০ টি ঘর নির্মাণ কাজের শুরুতে তিনি রাতের আঁধারে ৩৮টি ঘরে রডবিহীন গ্রেটভিম ঢালাই দিলে গোপন সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ওই রাতেই ৭টি ঘর ভেঙে দেন।

Manual4 Ad Code

পরবর্তীতে তার নিযুক্ত শ্রমিকদের মাধ্যমে রাতের আঁধারে ইটের খোয়া, রড, টিন, স্টিলের দরজা ইত্যাদি নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তার আত্মীয় স্বজনের বাড়ি থেকে এগুলো আটক করে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এসব কারণে ঝড়-ঝাপটা আসলেই টাকা বিলিয়ে সব সমাধান করে ফেলেন তাজির উদ্দিন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মাছ বিক্রেতা তাজির উদ্দিন হয়েছিলেন ইউপি সদস্য তারপর কোটি কোটি টাকার মালিক। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ শহরে কোটি টাকার জমি, হত্যা মামলার আসামীর পরিবারের মামলা মীমাংসা করার কথা বলে উপজেলা সদরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ভূমির তার নামে লিখে নেন। পরবর্তীতে মামলার মীমাংসা না হওয়ায় জটিলতা দেখা দেয়।

স্থানীয়রা বলেন, তাজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তার আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলায় গত দুই বছর পূর্বে এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার অসহায় দরিদ্র মানুষের ওপর চালিয়েছেন অকথ্য নির্যাতন।

Manual4 Ad Code

স্থানীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, তার অত্যাচার থেকে আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের জমি ফেরত চাই।

মানববন্ধনে বড়বন্দ গ্রামের বিধবা রাবিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বন্দোবস্তের ৫ কেদার জমি জোরপূর্বক পুকুরের ভেতর দখল করে নিয়েছেন তাজির উদ্দিন মেম্বার। এ নিয়ে কথা বলায় তিনি আমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিবেন এবং প্রাণে মারার হুমকি দেন। সে এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সবাই তার ভয়ে কিছু বলার সাহস পায় না।’

কেনু মিয়া বলেন, জোরপূর্বক আমার ২ কেদার জমি পুকুরে ডুকিয়েছেন। একই ভাবে তমিজুল ইসলামের ২ আড়াই কেদার, কালামিয়ার ৩ কেদার, শহিদ মিয়ার ২ কেদার, খলিল মিয়ার সাড়ে তিন কেদার, দিনু মিয়ার ৫ কেদার, ময়না মিয়ার ৪ কেদার, খছরু মিয়ার ৪ কেদারসহ অসংখ্য লোকজনের জমি জবরদখল করেছেন।

Manual6 Ad Code

এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য তাজির উদ্দিন (০১৭২৬৭০০০১৫) বলেন, ‘এসব ব্যাপারে মোবাইলে কথা বলা যাবে না, সামনাসামনি কথা বলবো। আপনারা আসেন।’

Manual7 Ad Code

মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বড়বন্দ গ্রামের খলিল মিয়া, শহিদ মিয়া, কেনু মিয়া, দিনাই মিয়া, ফিরোজা বেগম, আনোয়ারা বেগম, খছরু মিয়া, রবিউল, লায়েক মিয়া, তমিজুল ইসলাম, রুহুল আমিন, ফজিলতুন নেছা, রাবিয়া খাতুন, সামেদ মিয়া, খরফুন প্রমুখ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2023
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..