সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সিলেটের লাখ লাখ পাথর শ্রমিক

প্রকাশিত: ১১:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২২

সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সিলেটের লাখ লাখ পাথর শ্রমিক

Manual7 Ad Code

মুকিত রহমানী :: সিলেট অঞ্চলের পাথর কোয়ারি বন্ধ, তাও হয়ে গেছে ছয় বছর। গত ৩১ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালে আশায় বুক বেঁধেছিলেন কোয়ারির সঙ্গে জড়িত পাথর ও পরিবহন ব্যবসায়ী, বেলচা, বারকি, পরিবহন ও লোড-আনলোড শ্রমিকরা। এ শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সরকারের সিদ্ধান্তের পর পার হয়েছে আরও ছয় মাস। এখন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। ‘দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত’ করে আসবে- সে প্রতীক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না।

Manual4 Ad Code

গত ৯ ও ১০ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নায়েব আলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি দেখতে যান। কথা ছিল, সরেজমিন পরিদর্শনের পরই কোয়ারি চালু হবে। পরিদর্শন শেষে গত সপ্তাহে প্রতিবেদনও জমা দেন তদন্ত দলের সদস্যরা। পাথর তোলার ভরা মৌসুমে কোয়ারি চালুর ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে সবুজ সংকেত না মেলায় হতাশ পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তাঁরা বলছেন, আজ মঙ্গলবারের মধ্যে সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত না এলে ফের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে।

Manual3 Ad Code

দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ, জাফলংসহ সাত পাথর কোয়ারির অবস্থান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরে। এর মধ্যে পাঁচটি কোয়ারির ভৌগোলিক জরিপ ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জরিপের পর সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। এতে কমিটির সদস্যরা কোয়ারি চালুর বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নায়েব আলী সমকালকে বলেন, আমরা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে। প্রতিবেদনে কোয়ারি চালুর পক্ষে বা বিপক্ষে কী মতামত দেওয়া হয়েছে- সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি।

ফের পরিবহন ধর্মঘটের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, সিলেটের ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং, লোভাছড়াসহ সব পাথর কোয়ারির সঙ্গে সিলেটের অর্থনীতি জড়িত। কোয়ারি বন্ধ থাকায় ১০ লাখ পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিক এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক পথে বসেছেন। মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে এ মাসের শেষের দিকে ফের ধর্মঘট ডাকা হবে।

Manual2 Ad Code

পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে ছয় বছর ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন ও দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। সর্বশেষ ১ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এর আগে ২০১৯ ও ২০২১ সালে পাথর ব্যবসায়ী, স্টোন ক্র্যাশার মালিক-শ্রমিকসহ পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। কোয়ারি খোলার সরকারি সিদ্ধান্তের চার মাস পর ডিও লেটারও দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোয় যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। পরে অপরিকল্পিত ও যন্ত্রের সাহায্যে পাথর তোলা অব্যাহত থাকলে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের প্রধান ভোলাগঞ্জ কোয়ারি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পঁাঁচ কোয়ারির মধ্যে জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দিতে পাথর তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পরে আবার উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কোয়ারি এলাকায় চুরি করে পাথর তোলা অব্যাহত রয়েছে।

Manual6 Ad Code

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কোয়ারি পরিদর্শন করে তাঁদের মত দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।
এদিকে পাথর কোয়ারি চালু উদ্যোগের বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না বেলা। এ ব্যাপারে বেলার সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা বলেন, পাথর তোলার অনুমতি দেওয়া হলে সিলেটের পরিবেশের যে বিপর্যয় হবে, তা কোনোভাবেই পূরণ করা যাবে না। মাত্র ১০ শতাংশ রাজস্ব আয়ের জন্য পুরো পরিবেশ হুমকিতে পড়বে।

সূত্র-দৈনিক সমকাল

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..