হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী

প্রকাশিত: ২:৫৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২২

হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক: শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বাদ জুম্মা। সিলেট মহানগরের উপশহর পয়েটের অদূরবর্তী মেন্দিবাগ রাস্তার মুখ। মানুষের জটলা, দীর্ঘ যানজট আর নারী-পুরুষ গলার চিৎকার-চেঁচামেচি। এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো চিরাচরিত সেই ভয়াবহ দৃশ্য।

Manual4 Ad Code

বরের গাড়িবহর আটকানো ৫-৭ জন হিজড়ার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করছেন দুজন যুবক। হিজড়াদের দাবি ৫ হাজার টাকা, না দিলে তারা গাড়িবহর ছাড়বে না। আর ওই দুই যুবক দিতে চাচ্ছেন ৫০০ টাকা। একপর্যায়ে দাবিকৃত টাকা না পেয়ে দুই হিজড়া নিজেদের পরণের কাপড় খুলতে শুরু করেন। বাধ্য হয়ে বরপক্ষের ওই দুই যুবক হিজড়াতের হাতে ৩ হাজার টাকা গুজে দিয়ে গাড়িবহর ছাড়িয়ে নিতে বাধ্য হন।

সিলেটে এমন দৃশ্য এখন প্রতিদিনের। হিজড়াদের (তৃতীয় লিঙ্গ) অত্যাচারে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, শপিং মল, মার্কেট, দোকানপাট ও বিয়ে বাড়িসহ যেখানে সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা। রীতিমতো সন্ত্রাসী কায়দায় রাস্তায় বর-কনের গাড়ি আটকে আদায় করে চাঁদা।

Manual7 Ad Code

তবে এসব দেখার কেউ নেই। মহানগরের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সামনেই এসব কাণ্ড ঘটান হিজড়ারা। পুলিশ এসময় নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

অভিযোগ রয়েছে- অবহেলিত, অনাদৃত ও ভাগ্যবিড়ম্বিত হওয়ার সুযোগে সিলেটে এদের অনেকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে চাঁদাবাজি ও যৌন ব্যবসাকে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েছে নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসায়- এমনকি খুনের ঘটনায়। কয়েকদিন আগে সিলেটে বাংলাদেশ ব্যাংকে অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করে দুজন। এর মধ্যে একজন ছিলে হিজড়া।

অপরাধকাণ্ড ঘটাতে সিলেটে কতিপয় প্রভাবশালী হিজড়া বাহিনী তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, সিলেটে কতজন হিজড়া রয়েছে এ বিষয়ে তথ্য সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভি করেননি। তবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগর ও জেলায় পাঁচ শতাধিক হিজড়া রয়েছে। যার মধ্যে মহানগরজুড়ে চষে বেড়ায় দুই থেকে আড়াই শ জন। বাকিরা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় চাঁদাবাজিতে লিপ্ত।

Manual8 Ad Code

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সিলেট মহানগরের সোবহানীঘাটে তুষার মিয়া নামের এক ছেলে খুন হয়। পাপ্পু হিজড়া নামের একজনের দলের হয়ে কাজ করতো সে। মূলত ছেলে হলেও তুষারকে হিজড়া সাজিয়ে রাখতো দলনেতা পাপ্পু। টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে খুন করেন পাপ্পুর দলের অন্য সদস্যরা। এ ঘটনায় পরে ৬ হিজড়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন এবং মামলা বিচারাধীন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পাপ্পু নামের ওই হিজড়া একজন ভয়ংকর অপরাধী। সিলেট মহানগরসহ বিভিন্ন জায়গায় মাদকপাচার, চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটায় তার দলের সদস্যরা। এদের মধ্যে মূল হিজড়ার সংখ্যা কম, ছেলেদের হিজড়া বানিয়ে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে পাপ্পু। তিনি তার দলের সদস্যদের কাছে ‘গুরু মা’ হিসেবে পরিচিত।

জানা যায়, প্রতিদিন সকালের দিকে তারা ভাগ হয়ে সিলেট মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে হিজড়ারা। আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকত তারা। কিন্তু বর্তমানে তাদের আচরণ বদলে গেছে। পথচারীদের উত্যক্ত করে জোরপূর্বক টাকা আদায় এবং না দিলে অশ্লীলতা প্রদর্শন করে একপ্রকার জিম্মি করা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে, কয়েক মাস আগে সিলেটে হিজড়ারা রাস্তায় চাঁদাবাজি করবে না বলে ঘোষণা দিলেও কথা রাখেনি তারা। সম্প্রতি সিলেটে চরম আকারে বেড়েছে হিজড়াদের দৌরাত্ম্য।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- রাস্তায় চাঁদাবাজি ছাড়াও মহানগরের শপিং মল, মার্কেট ও দোকানপাটে হানা গিয়ে চাঁদাবাজি করছে হিজড়ারা। রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, দোকান, বাসা-বাড়ি এবং বিয়ে বাড়ি তাদের টার্গেট। কারও বাসায় সন্তান জন্ম হলে বা বিয়ের অনুষ্ঠান হলে হাজির হয়ে যায় হিজড়ার দল। এসব পরিবার থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে।

Manual5 Ad Code

সিলেটের মানুষের বক্তব্য- এ ধরনের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন হিজড়াদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।

অনেকেই বলেছন- সন্ত্রাসী হিজড়াদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। প্রয়োজনে এদের দৌরাত্ম্য বন্ধে সিলেটে ‘লাঠিয়াল’ বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।

হিজড়াদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন কমিশনার (এসএমপি) মো. নিশারুল আরিফ বলেন- এটি অনেক বড় একটি সমস্যা। শুধু পুলিশ এদের অরাজকতা ঠেকাতে পারবে না। কারণ- হিজড়ারা এসব কাণ্ড ঘটালেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে রাজি হন না। ইজ্জতের ভয়ে এদের দাবিকৃত চাঁদা দিয়ে দেন। কোনো ব্যক্তি বা সামাজিক সংগঠন নিয়ম অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আমাদের আইনি পদক্ষেপ নিতে সহজ হতো।

তিনি বলেন- সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ পরিকল্পনা করে হিজড়াদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে এই সমস্যা নিরসনের সম্ভাবনা আসলে কম।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2022
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..