সিলেট ১০ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২২
জৈন্তাপুর সংবাদদাতা: সিলেটের জৈন্তাপুরে একের পর এক টিলা কেটে সাবাড় করছে প্রভাবশালী মহল। প্রশাসনের নজর এড়াতে সন্ধ্যার পর তারা টিলা কাটা শুরু করে। যা চলে ভোর পর্যন্ত। আর এসব টিলার মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জমি ভরাট, বাড়ি নির্মাণ, সড়ক সংস্কার এবং ইটভাটাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য। মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না টিলা কাটা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ সচেতনরা। তারা বলছেন, টিলা কাটায় হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। মাটি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক স্থায়িত্ব।
জানা যায়, গত কিছুদিন যাবৎ উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন ও চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর গ্রামের কুদরত উল্লার ছেলে মাসুক আহমদ, সহুদয় মানিক মিয়া, উমনপুর মৌজার ২২১ নং খতিয়ান এর জে, এল, নং ১৪১ এর মালিক মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে জোয়াদ আলী, ফতেপুর ইউনিয়নের উপরম্যামপুর এলাকার মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন, উমনপুর এরাকার নুর মিয়া হাজীর ছেলে মোহাম্মদ আলী ড্রাইভার ও সহুদয় সেলিম আহমদ মালিকানাদিন টিলা, বাগেরখাল লাল মরির দোকান সংলগ্ন এলাকার উলাই মেম্বারের বাড়ির পাশে মইফুড় (জুয়া খেড়ির) টিলা কাটে মাটি যাচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ এর বাড়ির পুকুর ভরাটের জন্য ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ১০ নং কোপের রাস্তা নির্মানে বড় ২টি খাল সহ কৃষি জমি ভরাট করার জন্য সে সমুস্থ টিলার মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরেজমিন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন ও চিকনাগুল ইউনিয়নের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, উঁচু টিলাের মাঝখানে মাটি কেটে করা হয়েছে সমতল। পাশেই অস্থিত্ব হারানো টিলার ক্ষত চিহ্ন। কোথাও কোথাও টিলাের বুক চিরে সমতল করা জায়গায় স্থানীয় এক শ্রেণির বাসিন্দারা ঘর নির্মাণের কাজে ব্যস্ত। যেন টিলা কাটার যোদ্ধে নেমেছে তারা। সে সঙ্গে টিলাের চূড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করে ফেলছে। প্রকৃতির বুকে মানুষের এমন থাবায় জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিলার মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অধ্যাধুনিক এক্সেভেটর, ফেলুডার মেশিন। যার মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে টিলাের মাটিগুলোকে কেটে ফেলা হচ্ছে। মাটি কেটে সেগুলোকে ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেকেই নদী, খাল বা জমি ভরাট করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করছে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটার ফলে গত বর্ষা মৌসুমে উপজেলার চিকনাগুল ও চারিকাচা এলাকায় টিলা ধসে ৬ জনের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটে তার পরেও তেমে নেই টিলা কাটা। কি ভাবে এমন কাজ করে তা খুব দুঃখের বিষয়। টিলাের তলে কিংবা টিলাে যেসব বাড়িঘর রযেছে ভারী বর্ষণে যেকোনো মুহুর্তে ধসে যেতে পারে। আগামী বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকাও রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বিগত ৩-৪ বছর ধরে টিলা কাটা শুরু হয়েছে। আমাদের দুটি ইউনিয়নে প্রায় তিন ভাগের মধ্যে দুই ভাগই টিলা কেটে ফেলা হয়েছে। আমাদের বাপ-দাদা আমল থেকে দেখে আসছি এ টিলাগুলো। শত শত বছরের এ টিলাের সৌন্দর্য দেখে আমরা বড় হয়েছি। অথচ একটি ভূমিদস্যু মহল এ টিলাগুলো অবাধে কেটে ফেলছে। যার ফলে সিলেট অঞ্চল জীববৈচিত্র্য পরিবর্তন হয়েছে। টিলার মাটি দিয়ে ভিবিন্ন খাল বিল ভরাট করার ফলে অল্প বৃষ্টিতে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে পুরো উপজেলা। এতে আমাদের ফসলি জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা আর্থিকভাবে অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসিলেন্ড ঘটনাস্থলে এসে অভিযান পরিচালনা করে টিলার মাটি বোঝাই ৩টি ট্রাক পাওয়ার পরও কোন জরিমানা করা হয়নি।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিপা মনি দেবী বলেন, টিলা কাটা সম্পূর্ণ একটি বেআইনি কাজ। এটি কোনোভাবে গ্রহণ যোগ্য নয়। খবর পেয়েছি একটি চক্র গভীর রাতে টিলাের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি অভিযানে যাওয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে বালু বোঝাই ৩টি ট্রাক ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাই আমি আর জরিমানা করতে পারিনি। পরিবেশের কাজ তারপরও আমি সার্বক্ষণিক বিষয়টি মনিটরিং করছি। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd