জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভের উপরেই নির্ধারণ হবে সিলেটের পাথর উত্তোলন

প্রকাশিত: ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভের উপরেই নির্ধারণ হবে সিলেটের পাথর উত্তোলন

Manual7 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে এখন কোন পাথর উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে এখানকার পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া অনেক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বিভিন্ন পক্ষ থেকে পাথর উত্তোলনের দাবি আছে। এনিয়ে পরিবেশ কর্মীদের চাপও আছে। তবে আমি পাথর উত্তোলন শুরু না করার পক্ষে। রোববার সিলেটে পর্যটন বিষয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, ভবিষ্যত সিলেটের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করা যাবে কি না এ জন্য একটি জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভের জন্য আমি সরকারের উচ্চপর্যায়ে লিখেছি। এই সার্ভের উপরেই নির্ধারণ হবে পাথর উত্তোলন। পরিবেশের ক্ষতি না করে কতটুকু উত্তোলন করা যায় তা নির্ধারণ করা হবে।

তিনি বলেন, পাথর উত্তোলন করে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী লাভবান হয়। শ্রমিকদের জীবনমানের কোন পরিবর্তন হয় না। তারা শ্রমাকরই থেকে যান। এই শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটন হতে পারে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের একটি বড় ক্ষেত্র।

বিশ্ব পর্যটন দিবসসে সামনে রেখে সোমবার দুপুরে মানবিক উন্নয়ন সংগঠন ‌’সম্পর্ক’ এই গোলটেবিল আলোচনায় আয়োজন করে।

Manual6 Ad Code

সিলেট জেলা পরিষদের ডিজিটাল সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় সহযোগী ছিল পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশ। এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবেসের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’র আলোকে গোলটেবিল আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‌’সিলেটের পর্যটন, পরিবেশ ও নতুন সম্ভাবনা’।

এতে বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, সরকারের পর্যটন সংক্রান্ত উন্নয়ন পরিকল্পনায় মাস্টারপ্ল্যানে সিলেট দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ আসে পর্যটন সেক্টর থেকে। সরকার চাচ্ছে ২০৩০ সালে এটি ডাবল ডিজিটে (১০) উন্নীত করতে। প্রধানমন্ত্রী সিলেটকে রিজিওনাল হাব করতে চাচ্ছেন।

বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা চলা গোলিটিবল আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের উদ্যোক্ত উত্তম কুমার সিংহ। সহযোগী হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ আশরাফুল কবির। প্রথম পর্বে পর্যটন ব্রান্ডিংয়ে নতুন পণ্য হিসেবে সিলেটের আদি সংস্কৃতির নৌকার ওপর সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী নির্মিত তথ্যচিত্র ‘বারকি’ প্রদর্শন করা হয়। স্থপতিদের সহযোগিতায় বারকি নৌকাকে ‌’পর্যটন ব্রান্ড পণ্য’ হিসেবে প্রস্তুত করার কাজে নিবেদিত সিলেটের গোয়াইনঘাটের ইউএনও মো. তাহমিলুর রহমান গোলটেবিল আলোচনায় বিষয়বস্তুর আলোকে বক্তব্য দেন।

Manual4 Ad Code

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি কৌশিক সাহার সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সহসভাপতি আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রাহক ও ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন জাদুঘরের পরিচালক ডা. শাহজামান চৌধুরী বাহার, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক, সিলেট উইমেন্স চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল ষ্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হাওরগবেষক মো. এমদাদুল হক, লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালি বিভাগের প্রভাষক মোঃ আব্দুল হালিম।

Manual3 Ad Code

গোলটেবিলে আমন্ত্রিত আলোচক ছাড়া পর্যটন ও পরিবেশসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোক্ত তরুণ ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। আলোচকেরা অনেকটা মুক্ত মতামতের মতো করে তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সময়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সুযোগসুবিধা একইভাবে প্রসারের পক্ষে মতামত দিয়ে বলেছেন, সিলেটে পর্যটনকেন্দ্রগুলো প্রকৃতিনির্ভর। এ জন্য এলাকার পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় মানুষজনকে সচেতন করার কাজে মনোযোগ দিতে হবে। পর্যটনের বিকাশে নতুন ভাবনায় প্রাণ প্রকৃতি ঠিক রেখে আমাদের সব মিলিয়েই কাজ করতে হবে। সিলেটের বিভিন্ন বনগুলোতে কাঠ চোরাচালান ও পর্যটকদের চলাচল রোধে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে প্রকৃতির জন্যে নতুন করে ভাবনা হয়া উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওয়েবসাইট ডেভোলাপ এবং ট্যুরিস্ট বান্ধব ম্যাপ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেলা ও থানা পর্যায়ে স্থানীয় এলাকার কর্মজীবী মানুষকে পরিকল্পিতভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পর্যটন বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করা হবে।’

এতে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিভাগীয় ও ইউনিয়িন পর্যায়ে পর্যটন সেল গঠন করা হয়েছে। সকলের সার্বিক সহযোগীতায় সমন্বিতভাবে আমরা পর্যটনের উন্নয়নে কাজ করবো।’

আয়োজক সংগঠন সম্পর্ক ও ভূমিসন্তান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ সিলেটের প্রাণ। পর্যটনে সিলেটের পরিচিতি ‘প্রকৃতিকন্যা’। প্রাণপ্রকৃতির সুরক্ষা আমাদের পর্যটনকে বিকশিত করবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিকশিত হওয়ার আগে ভাবনায় রাখতে হবে পরিবেশ। সিলেটের পর্যটনশিল্পকে নতুন ভাবনায় এগিয়ে নিতে সুচিন্তিত মতামত ধারণ করে পরবর্তীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণে গোলটেবিল আয়োচনার মতামতগুলো গুরুত্ব পায়, সেই চেষ্টায় পর্যটনের নতুন সম্ভাবনায় কিছু পদক্ষেপের শুরুতে এই গোলটেবিল আলোচনা্ করা হয়েছে ।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930

সর্বশেষ খবর

………………………..