ধলাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে ৫টি এলাকা

প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

ধলাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে ৫টি এলাকা

Manual7 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী  ইজারা বহিঃর্ভূত এলাকা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ঢালারপাড় সহ পার্শ্ববর্তী ৫টি এলাকা। ভাঙনের মুখে পড়েছে বসতবাড়িও। এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাননি ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা।
প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি আর ধামকীর শিকার হতে হচ্ছে অসহায় মানুষদের। অতি দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে গ্রাম, বাজার, মসজিদ, কালভার্ট-বাড়িঘর, স্কুল, মাদ্রাসা ও কৃষি জমিগুলো বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এক মাস আগে ধলাই নদীর কালা সাদক মৌজা এলাকার তিনটি দাগ ও তৈমুরনগর মৌজার একটি দাগ লিজ দেওয়া হয়। তবে ঢালা নদী ও  ঢালারমুখ  বালু মহাল  লিজের আওতাভুক্ত নয়। এই বালুমহাল দুটো থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। লাগামহীন বালু ও পাথর উত্তোলনে হুমকির মুখে পড়েছে ঢালা নদীর আশপাশের জনপদগুলো।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগে কয়েকটি স্থানীয় গ্রুপ চাদাবাজি করছে বলে অভিযোগ আছে। বালুবাহী নৌকা থেকে প্রতিদিন আদায় করছে লাখ লাখ টাকা। চাদাবাজির প্রতিবাদ করলে স্থানীয়দের নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও।
নদীর তীরবর্তী লাহিন মিয়া বলেন, উপজেলার ইমলামপুর ইউনিয়নের ঢালারপাড়, দক্ষিণ ঢালারপাড়, উত্তর ঢালারপাড়সহ বেশকটি  গ্রাম রয়েছে ঢালা নদীর তীরে। শুধু গ্রামই নয় জেগে ওঠা তীরে রয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের শত শত হেক্টর কৃষি জমিও। গ্রাম আর কৃষি জমি সংলগ্ন নদী থেকে সরকারের নিয়ম না মেনে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
একই জমি সংলগ্ন নদী থেকে অনেক গভীর করে বালু উত্তোলন করার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে সেই সব জমি। এক সময় জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সঙ্গে গ্রামগুলোও বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে ইজাদারের লোকেরা তাদের ইচ্ছে মাফিক বালু উত্তোলন করছেন। আর এই বিষয়ে কোন কিছু বলতেই গেলেই সেই মহলের পেটোয়া বাহিনী এসে আমাদেরকে নানা রকম হুমকি-ধামকী দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। জমি আর ঘর-বাড়ি হারানোর ভয়ে আমাদের চোখে ঘুম নেই।
আরেক বাসিন্দা নাসির বলেন, ধলাই নদী থেকে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গত মাসের ৩০ তারিখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী  ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ ও  সিলেট জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দেই।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ ও জেলা প্রশাসনসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হলেও প্রশাসন এখনো অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না-অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
ইতিমধ্যেই কালাসদক মৌজার অনেক কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কৃষি জমিতে বালু পড়ে ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। আবাদি কৃষি জমি নদী গর্ভে হারিয়ে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ও জমিজমা সবকিছু নদী গর্ভে হারিয়ে ফেলবেন। বালু খেকোদের কিছু বলতে গেলেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একাধিকবার স্থানীয় মুরব্বিদেরকে বলেও কোন লাভ হয়নি। দ্রুত আমরা এই বালু উত্তোলন বন্ধ চাই।
আরেক বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, আমরা কৃষি জমি ও বাড়ি-ঘর নদীতে হারিয়ে উদ্বাস্তু  হয়ে সরকারের সাহায্য পেতে চাই না। আমরা চাই সরকার দ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে আমাদেরকে রক্ষা করুন।
বালু মহলের ইজাদার মজির উদ্দিন বলেন, আমি সরকারের নিয়মানুসারে ধলাই নদীর বালু মহল ইজারা নিয়েছি। আমার লোকজন নিয়ম মেনেই বালু উত্তোলন করছে। ইজারা বহির্ভূত এলাকায় কে বা কাহার বালু তুলতেছে   তা আমার জানা নেই। আমাদের যারা বালু তুলতেছে তারা ইজারার ভিতরেই  তুলতেছে। ঢালারমুখ এবং ঢালা নদী থেকে যারা বালু তুলতেছে তারা বাহিরের লোক তাদের সাথে আমার  কোন সম্পৃক্ত নেই। কোম্পানীগঞ্জ  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম্বারে একাধিক বার কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো। যেহেতু মন্ত্রী মহোদয় এবং ডিসি স্যারকে অভিযোগ দিয়েছে ইজারাদার লিজের বাহিরে বালু উত্তোলন করলে ডিসি স্যার এবং মন্ত্রী মহোদয় ইউএন ও কে বলে তাদের লিজ বাতিল করে দিতে পারেন। আর  ইজারার বহির্ভূত এলাকায় ইজারাদার ছাড়া বাহিরের লোক বালু উত্তোলন করার কোন সুযোগ নেই।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930

সর্বশেষ খবর

………………………..