সিলেট ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সমাজ কল্যাণে অসাধারণ অবদানের জন্য শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২ পেলেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা। রবিবার সকাল দশটায় পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানটি ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ৫ টি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১১ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবী এই পদক পেলেন। কাসমির রেজা ‘সমাজ কল্যাণে অসাধারণ অবদানের জন্য’ ক্যাটাগরিতে এই পদক পেলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে তাঁর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা এবং সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান। তিনি দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকল তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি করোনা সংকট সহ বিভিন্ন সংকটে দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তরুনদের ধন্যবাদ জানান। তিনি তরুণদের তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করেন।
সিলেট বিভাগ থেকে মোহাম্মদ কাস্মিরুল হক (কাসমির রেজা) একমাত্র পদক বিজয়ী। কাসমির রেজা গত এক যুগ ধরে হাওরের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছেন। ২০১০ সালে তিনি সমমনা আরও কয়েকজন কে নিয়ে গড়ে তোলেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। তিনি প্রতিষ্ঠা কাল থেকে সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সিলেটে ও সুনামগঞ্জে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়াও তিনি দৈনিক জৈন্তা বার্তার সহযোগী সম্পাদক।
কাসমির রেজা’র জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামে। তিনি বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স পাশ করেন। পেশাগত জীবনে কাসমির রেজা একজন কলেজ শিক্ষক।
কাসমির রেজা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্রদের সংগঠন অর্থনীতি এলামনাই এসোসিয়েশন এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদের সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, তাহিরপুর সমিতি-সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সুনামগঞ্জ সমিতি-সিলেটের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি সিলেট জেলা সংসদের আবৃত্তি ও সংগঠন বিভাগের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ মনিটরিং কমিটি এবং পর্যটন উন্নয়ন বিষয়ক জেলা কমিটির সদস্য।হাওরের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০১৮ সালে জয় বাংলা ইয়ূথ এওয়ার্ড অর্জন করে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্ঠা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকে পদকটি গ্রহণ করেন কাসমির রেজা।
সিলেট বেতারে প্রচারিত হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা ভিত্তিক অনুষ্ঠান ’ভাটি বাংলা’র গ্রন্থণা ও উপস্থাপনা করছেন কাসমির রেজা। হাওর অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বিভিন্ন সেমিনার, সভা, সমাবেশ এবং স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমেতুলে ধরছেন।
হাওরের সকল দুর্যোগে কাসমির রেজা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান। ২০১৭ সালের অকাল বন্যার পর কাসমির রেজা ও তাদের সংগঠন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ১০ হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন, দুই হাজার মানুষের মাঝে কাপড় বিতরণ করেন। বিভিন্ন সময়, শীত বস্ত্র বিতরণ, ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করেছেন। করোনা কালীন সময়ে দুই হাজার ফ্রি মাস্ক বিতরণ, ১২০ টি ওয়াশ পয়েন্ট স্থাপন এবং পাঁচ শতাধিক মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
হাওরাঞ্চল সহ সিলেটের পরিবেশ রক্ষায় সভা, সেমিনার, মানবন্ধন, বৃক্ষ রোপন সহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করতে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০ টি গ্রীন ক্লাব গঠন করে। ২০২২ সালের প্রলয়ংকারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কাসমির রেজা ও তাদের সংগঠন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। তারা তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, দুই হাজার প্যাকেট রান্না করা খাবার, দুই হাজার কাপড় বিতরণ, গোখাদ্য বিতরণ, দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম এখনো চলমান আছে।
পদকপ্রাপ্ত অন্যান্য যুবকরা হলেন যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে অসাধারণ অবদানের জন্য এবছর মনোনীত হয়েছেন, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মাসুম আলম এবং নেত্রকোণার বাসিন্দা কামরুন নাহার লিপি। শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি ক্যাটাগরিতে অসাধারণ অবদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন জাগো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক করভি রাকসান্দ দ্রুব এবং পেন ফাউন্ডেশনের মেঘনা খাতুন। দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন, রাঙ্গামাটির বাসিন্দা এন কে এম মুন্না তালুকদার এবং লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা রাজু আহমেদ।
জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা বা সমাজকল্যাণে অবদানের জন্য বরিশালের বাসিন্দা মিল্টন সমাদ্দার এবং সুনামগঞ্জের বাসিন্দা কাস্মিরুল হক (কাসমির রেজা)। ক্রীড়া, কলা (চারু ও কারু) ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক শেরপুরের মেয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং রাজশাহীর বাসিন্দা মোস্তফা সরকার।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd