ভুয়া কবিরাজদের দখলে টার্মিনাল রোড : হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

প্রকাশিত: ১০:২০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২২

ভুয়া কবিরাজদের দখলে টার্মিনাল রোড : হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

Manual2 Ad Code

ক্রাইম প্রতিবেদক :: দক্ষিণ সুরমার টার্মিনাল রোড এখন কবিরাজ পাড়া। রকমফের কবিরাজদের দোকান ও পসরা দখল করে নিয়েছে এ রোড। এসব দোকান দৃশ্যত ভাসমান হলেও মূলত এগুলো ভাসমান নয়। ঘর-ছালা না থাকলেও রাত গভীরে পলিথিন দিয়ে ঢাকিয়ে স্ব-স্থানে দোকান-পসরা রেখেই চলে যান ব্যবসায়ীরা। ফলে এসব দোকান যানজট ও জনজট সৃষ্টির পাশপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কীনব্রিজের দক্ষিণ মোড় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ভাসমান কবিরাজদের দোকান সংখ্যা প্রায় ২০টি। প্রত্যেকটি দোকানে মাইক বাজিয়ে বিক্রি করা হয় ভুয়া কোম্পানীগুলোর নানা রকম ঔষধ। এতে করে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির পাশাপাশি শব্দদুষনেও অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। কীনব্রিজ পার হয়ে দক্ষিণ সুরমায় পৌঁছালেই কানে আর কারোর কথা শোনা যায় না। শুধু মাইকের আওয়াজ আর আওয়াজ। শব্দদুষনের কারণে পথচারী বৈধ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণেরও পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। ভুয়া কবিরাজদের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অতিষ্ঠ। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এক প্রকার অঘোষিত লিজ নিয়েই স্বঘোষিত কবিরাজরা রাস্তার উপর বসে আসেন ঔষধের দোকান পাতিয়ে। এসব দোকানে মাইক বাজিয়ে সাধারণত দাউদ,পাগলা মলম ও ফুট-খাজুলির ঔষধের প্রচার করা হয়। কিন্তু এর অন্তরালে বিক্রি করা হয় যৌনশক্তি বর্ধক ও যৌনউত্তেজক নানা ঔষধ। সাধারণত পরিবহণ শ্রমিক ও বখাটে যুবরাই এসব যৌনউত্তেজক ঔষধের ক্রেতা। সস্থা দামের এসব যৌনউত্তেজক ঔষধ সেবন করে সাময়িক তৃপ্তিবোধ করলেও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুবদের জীবন ও যৌবন। তারা বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করছে সিলেটের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একেকটি দোকানে রয়েছে শ’খানেক ইউনানী ও আয়ুর্বেদী নামে ভুয়া কোম্পানীর প্রডাক্টেড শত শত ঔষধ। মূলত এসব নামে রেজিষ্টার্ড কোনো ঔষধ কোম্পানীই দেশে নেই । আবার অনেক রেজিষ্টার্ড কোম্পানীর লেভেল জাল করেও বিক্রি করা হয় নানা ধরণের বোতলজাত ঔষধ।
স্থানীয় এক শ্রেণির চাঁদাবাজ পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ভুয়া কবিরাজদের কাছে রাস্তার দোকান স্থায়ী লিজ দিয়ে ফেলেছে। আর এ লিজও হস্তান্তর হয়ে থাকে ধারাবাকিভাবে একজনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে। কোনো ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিলে পজিশন বিক্রি করে টাকা নিয়ে যেতে পারেন অন্যের কাছ থেকে। লিজের পাশপাশি দৈনিক হারে একটি চাঁদাও নেওয়া হয়ে থাকে এসব ভুয়া করিবাজদের কাছ থেকে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ফুটপাতের চাঁদাবাজ লাইনম্যানরা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে যেমন ফুটপাতে থাকা কাচামালের দোকান থেকে দৈনিক লাইন (চাঁদা) আদায় করে, তেমনি এসব কবিরাজি দোকান থেকেও বর্ধিত হারে তারা চাঁদা আদায় করে থাকেন। চাঁদাবাজরা প্রত্যেকটি কবিরাজি দোকান থেকে দৈনিক ১শ’ থেকে দুশ’ টাকা করে আদায় করে থাকে বলে সূত্রে প্রকাশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভূয়া কবিরাজ (দোকানী) জানান, আমরা লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ফুটপাত তথা রাস্তার এ দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি। পাশপাশি দৈনিক হারেও আমাদের টাকা দিতে হয় লাইনম্যান এবং স্থানীয়দের। যুগ যুগ ধরে এসব দোকান অঘোষিত লিজ হয়ে আসছে এবং সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই আমাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে লিজদাতা ও লাইন গ্রহীতারা। তাই অভিযান ও উচ্ছেদের ব্যাপারে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
আরেক ব্যবসায়ী জানান, এসব ঔষধের কোম্পানী আসল না ভুয়া সেটা আমাদের জানা নেই। আমরা সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন দোকান থেকে হোল সেলে এসব ঔষধ সামগ্রী এনে বিক্রয় করে থাকি। আমাদের কাস্টমার বেশি পরিবহণ শ্রমিক ও যুববয়েসী। যৌনউত্তেক ঔষধের কাটতি বেশি বলেও জানান তিনি।
সূত্র মতে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে গোপনে গড়ে ওঠা অবৈধ ঔষধের কারখানাগুলো বিভিন্ন কবিরাজি ও ইউনানী কোম্পানীর লেভেল জাল করে বা ছাপা করে এসব দোকানে ঔষধ সরবরাহ করে থাকে।
এ বিষয়ে ড্রাগ অফিস সিলেট-এর তত্বাবধায়ক মেহেদী হাসানের সাথে সেলফোনে কথা হলে তিনি এসব দোকান অবৈধ বলে জানান। তিনি বলেন, যে কোনো ঔষধ বিক্রয় করতে হলে স্থায়ী দোকান এবং একজন ফার্মাসিস্ট রেখে ড্রাগ অফিসের লাইসেন্স নিতে হয়। এসব অস্থায়ী ও ভুয়া ঔষধী দোকানের মূলত কোনো লাইসেন্সই নেই, স্থায়ী দোকানও নেই। এদের বিরুদ্ধে আমরা কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু করলে কি হয়, অভিযান শেষ হলেই একটি মহল এদের আবার রাস্তায় বসিয়ে দেয়। আমারতো সারাদিন সারা রাত অভিযান চালাতে পারি না। তাই এসব ভুয়া ঔষধ বিক্রেতাদের উচ্ছেদে সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন-এসব ঔষধ বিক্রেতা ভুয়া, এবং জনস্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেমন ড্রাগ অফিসের দায়িত্ব, তেমনি দায়িত্ব সিলেট সিটি কর্পোরেশনেরও দায়িত্ব। এদের উচ্ছেদে সিটি কর্পোরেশন অচিরেই ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2022
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..