ওসমানীনগরে জোড়া লাশ উদ্ধার নিয়ে রহস্য!

প্রকাশিত: ১০:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২১

ওসমানীনগরে জোড়া লাশ উদ্ধার নিয়ে রহস্য!

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : নিজ গৃহের মেঝেতে পড়েছিল স্কুল শিক্ষিকার বিবস্ত্র গলাকাটা লাশ। আর পাশেই ঝুলছিল গৃহকর্মী যুবক। শনিবার দিনগত রাত ১২টার দিকে লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের সোয়ারগাঁও গ্রামে। নিহত তপতী রাণী দে লাভলী (৪৮) চিকিৎসক বিজয় ভুষণ দে’র স্ত্রী ও সোয়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকালে তপতী রাণী দে’র স্বামী ও চিকিৎসক ছেলে বাড়িতে ছিলেন না। বাসায় তপতি ও কাজের ছেলে গৌর চাঁদ বৈদ্য ছিলেন। গৌর চাঁদের (২০) বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের লহরী গ্রামে। শনিবার রাত ৮টার দিকে তপতীর ছেলে তন্ময় দে বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় ঘরের দরজা ভিতর থেকে আটকানো রয়েছে। এসময় ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে মা ও কাজের ছেলের মোবাইলে কল দিলে দুটি নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। প্রতিবেশীদের সহায়তায় তন্ময় বাথরুমের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখতে পায় গৃহকর্মী গৌর চাঁদের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে।

ঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ময়না মিয়া ঘটনাস্থল থেকে ওসমানীনগর থানা পুলিশকে কল দেন। রাত ১২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে বাথরুমের জানালার রড কেটে একজনকে ভিতরে ঢুকানো হয়। দরজা খুলার পর ঘরে ঢুকে তপতী রাণীর বিবস্ত্র গলাকাটা মৃতদেহ ও পাশের খাটের উপর গলায় গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় কাজের ছেলে গৌর চাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা একটি ভিডিও ফুুটেছে দেখা গেছে- ঘরের কিছু আবসাবপত্র ও কাগজপত্র এলোমেলোভাবে মেঝেতে পড়ে আছে।

Manual6 Ad Code

পুলিশ জানায়- তপতীর মৃতদেহের পাশ থেকে একটি ছুরা ও একটি বটি উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে এ দু’টি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তপতীর ঘাড়ের ডান দিকে একটি কুপ ও ঘাড়ের পিছনে ছুরির আঘাত রয়েছে। সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়ে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

Manual7 Ad Code

রবিবার সকালে সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে কৌতুহলী লোকজনের ভিড় জমে রয়েছে। একতলা বাড়ির আলাদা ঘরে থাকতেন কাজের ছেলে গৌর চাঁদ। তপতী রাণী যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। ময়না তদন্ত শেয়ে রবিবার বিকাল ৪ টার দিকে স্কুল শিক্ষিকার লাশ বাড়িতে পৌছায়। এসময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত নিহতের শেষকৃত্য প্রস্তুতি চলছে।

নিহত তপতীর স্বামী বিজয় ভুষণ দে ও তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, তপতীর পিতার বাড়ি সিলেটের গোয়াইঘাট উপজেলার চতুল এলাকায়। তপতী ও বিজয় দম্পত্তির এক ছেলে ও তাপসী দে তন্নী নামের এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে, মেয়ে এবং মেয়ের স্বামী তিনজনই পেশায় চিকিৎসক। তন্নী স্বামীর সাথে সিলেট শহরে বাসায় বসবাস করেন। আর তন্নীর বাসাতে কাজ করেন গৌর চাঁদের ছোট ভাই গোবিন্দ বৈদ্য। স্বজনরা আরো জানিয়েছেন, তপতী রাণী এবং তার ছেলে তন্ময় খুবই শান্ত স্বভাবের। তপতী শনিবার সকালে স্কুলে যান এবং দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে আসেন। দিনের বেলা তিনি এবং কাজের ছেলে বাড়িতে ছিলেন। বিকালে কাজের ছেলে বাজার থেকে সদাই করে নিয়ে আসে। তপতীর স্বামী ছিলেন চেম্বারে।

Manual4 Ad Code

স্থানীয় ইউপি সদস্য ময়না মিয়া বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে আমি ওই বাড়িতে যাই এবং পুলিশকে ঘটনাটি জানাই। পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে। ঘরের মেঝেতে প্রচুর রক্ত ছিল। গৌরের শার্টের মধ্যেও রক্ত লাগানো ছিল।

Manual3 Ad Code

এদিকে, শনিবার দিনগত রাত ২টায় সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গৌর চাঁদ শিক্ষিকাকে খুন করার পর সে নিজে ফাঁস দিয়েছে। পুলিশ এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, স্কুল শিক্ষিকা ও গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। রবিবার বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে লাশ দু’টি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গৌর চাঁদের ভাই গোবিন্দ বৈদ্য বাদি হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..