ছাতক কৈতক হাসপাতালের নার্স কৃষ্ণা-আমিনার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২১

ছাতক কৈতক হাসপাতালের নার্স কৃষ্ণা-আমিনার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : নিময়-নীতি, আইন-কানুনের যেন বালাই নেই যেন হাসপাতালটিতে। সরকারি বিধি-নিষেধ অমান্য করে হাসপাতালের ভেতর চেম্বার খোলে রোগী দেখছেন নার্সরা। ব্যবস্থাপত্রে ইচ্ছেমতো লিখছেন এন্টিবয়োটিকসহ নানা জাতের ওষুধ। রোগীদের দিচ্ছেন পরীক্ষা-নীরিক্ষার পরামর্শ। অফিস চলাকালীন সময়ে ইনডোরে আসা রোগীদের কাছ থেকে আদায় করছেন ‘ভিজিট ফি’। টাকা না দিলে রোগীদের ওপর নার্সদের চড়াও হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে কয়েক দফা।

অবিশ্বাস্য হলেও এমন অবস্থা বিরাজ করছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কৈতক ২০ শয্যা হাসপাতালে। দাপুটে নার্সদের আধিপত্যে রোগী তো বটেই কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও অসহায় সেখানে। তাদের অনিয়মের প্রতিবাদ করলে উল্টো সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় চিকিৎসকদের। নার্সদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে অবগত থাকলেও অদৃশ্য কারণে নীরব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

Manual4 Ad Code

জানা যায়, দক্ষিণ ছাতক ও আশপাশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কৈতক ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপতাল। বর্তমানে এখানে চারজন চিকিৎসক এবং ছয় জন নার্স কর্মরত আছেন। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশ রোগী চিকিৎসাসেবা নেন ওই হাসপাতাল থেকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রাণী দাস ও আমিনা নাহিদ স্থানীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ডাক্তারদের ডিঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের সর্বেসবা বনে আছেন। কোন বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে চেম্বার খোলে বেআইনিভাবে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন নার্স কৃষ্ণা রানী দাস। তার লেখা বেআইনি ব্যবস্থাপত্রের অনেকগুলো কপি রয়েছে এ প্রতিবেদকের হাতে। এছাড়া অপর নার্স আমিনা নাহিদের বিরুদ্ধে হাসপাতালে আসা প্রসূতি মহিলাদের প্রসব করানো বাবত মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণের রয়েছে অভিযোগ। হাসপাতালের অভ্যন্তরে সেবার বিনিময়ে টাকা না দেওয়া রোগীর স্বজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে একই কর্মস্থলে থাকায় হাসপাতালের ভেতরে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন কৃষ্ণা-আমিনা। বাইরে থেকে তাদেরকে শক্তি যোগাচ্ছেন স্বজন ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী।

এদিকে, গত ২৮ মার্চ নার্সদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মরোধে নার্স কর্তৃক প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ এবং অফিস চলাকালীন রোগীদের কাছ থেকে সেবার বিনিময়ে টাকা আদায় না করতে হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনয়র স্টাফ নার্সদের চিঠি দেন হাসপতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম। সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দেওয়া হয় চিঠির অনুলিপি।

অপরদিকে, ইনজেকশন দেওয়ার জন্য নার্স আমিনা নাহিদকে টাকা দিতে অস্বীকার করায় রোগীর স্বজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি ১৬ মার্চ লেখা অপর এক পত্রে সিভিল সার্জনকে অবগত করেন তিনি। এতসব অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে থেকে হাসপাতালে বেপরোয়া বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এই দুই নার্স।

Manual3 Ad Code

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সদের বিরুদ্ধে প্রাইভেট প্যাকটিস ও সেবার বিনিময়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করি। পরে উল্টো আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করে বাহির থেকে লোকজন এনে মানববন্ধন করানো হয়েছে।

Manual8 Ad Code

তবে, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা রানী দাস ও আমিনা নাহিদ।

এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শামস উদ্দিন বলেন, কৈতক হাসপাতালে কর্মরত দুইজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের বিরুদ্ধে আসা অনিয়মের বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Manual2 Ad Code

সুনামগঞ্জ বিএমএ’র সভাপতি ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, নার্স ও মিডওয়াইফারি বিভাগের প্রচলিত বিধি এবং আইন মোতাবেক নার্স কর্তৃক রোগীদের ব্যবস্থাপত্র প্রদান সম্পূর্ণ বেআইনি। এমনটি জনস্বাস্থের জন্য হুমকিস্বরূপ।অবিলম্বে এটা বন্ধ করা উচিৎ।

তিনি আরো বলেন, সরকারি হাসপাতালে সেবার বিনিময়ে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় দণ্ডনীয় অপরাধ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..