সুনামগঞ্জে তিন কোটি টাকার সেতু যখন গলার কাটা

প্রকাশিত: ৪:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২১

সুনামগঞ্জে তিন কোটি টাকার সেতু যখন গলার কাটা

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জ জেলার আজব এক গ্রাম আনুজানি। যে গ্রামের মানুষ কাজ ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে কথাও বলে না। সেই গ্রামের মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আনুজানি সেতু।

জানা গেছে, এক বছর আগে এলজিইডি ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের আনুজানি গ্রামের পাশের চেলা খালের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মিত সেতুর উদ্বোধন করেন। যার ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সেতুর এক পাশে সড়ক অন্য পাশে ধানের জমি। তবুও খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। সেতুর এক প্রান্তে কোনো সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে তো আসছেই না বরং সেতুই এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর।

এলাকাবাসী জানায়, এখানে সেতুর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এদিকে কোনো সড়ক নেই। অন্যপক্ষের দাবি, সড়ক হলে দুটি গ্রামের মানুষের উপকারে আসবে সেতুটি।

Manual1 Ad Code

সরেজমিন দেখা যায়, ছাতক উপজেলার জালালপুর থেকে আনুজানি হয়ে এসড়ক গেছে আলীগঞ্জ বাজারে। আনুজানি গ্রামের পাশেই চেলা খাল। খালের দক্ষিণে আনুজানি গ্রাম, উত্তরে ধানি জমি ও চেরা বিল। বিলের পাড়ে মইনপুর ও কুরশি গ্রাম। চেলা খালের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় তিন বছর আগে। গ্রামের পাশের সড়ক যুক্ত করে সেতুটি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৬ মিটার, প্রস্থ সাড়ে ৭ মিটার। কিন্তু সেতুর অপর প্রান্তে কোনো সড়ক নেই। সংযোগ সড়কের পরই জমি। আইলপথ ছাড়া সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে। এদিকে সেতুটি তুলনামূলক নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নৌ চলাচল বাধাগ্রস্ত এবং নানা দুর্ঘটনা ঘটে।

আনুজানি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মইনপুর ও কুরশি ছাড়াও খালের উত্তর পাড়ের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই সেতু নির্মাণের একবছর পার হলেও সেতু এক প্রান্তে সড়ক হওয়ার কোনো নাম নেই। এছাড়া সেতুটি নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে কোন বড় ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারে না। গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘সেতু তো অইয়া গেছে। ওখন সড়ক অয় না। সড়ক নাইতে সেতু কোনো কাম লাগবনি।’

Manual1 Ad Code

এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, পাশে একটি গ্রাম আছে। বর্ষাকালে যদি সেই গ্রামে যাওয়া- আসা করা না যায় তাহলে সেতুর কোনো মূল্য নেই। সড়ক নির্মাণ করলে সেতুটি কাজে আসবে।

আনুজানি গ্রামের বাসিন্দা ফিরুজ আলী জানান, সেতুর কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু সড়ক হওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই। আর সড়ক যদি নির্মাণ না করা হয় তাহলে সেতুই আমাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি দ্রুত ওই সেতুটির সড়ক যেন নির্মাণ করা হয়।

Manual1 Ad Code

ভাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুন নূর বলেন, সেতুর উত্তর পাড় থেকে দুটি গ্রামে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করতে হবে। সড়ক না হলে সেতু কোনো কাজে আসবে না।

Manual6 Ad Code

গ্রামের বাসিন্দা সফল আলী জানান, সেতু আর দুই ফুট উঁচু হলে ভালো হত। তাহলে বর্ষায় সেতুর নিচ দিয়ে বড় নৌকা বা ইস্টিল বডি যাওয়া আসা করতে পারত। গত বছর ওই সেতুর নিচ দিয়ে একটি ইস্টিলের নৌকা যাওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু সেটা সেতুর সঙ্গে লেগে ডুবে যায়। তাই আমাদের জোর দাবি ওই সেতুর জন্য সড়ক নির্মাণ করা হোক। তা না তাহলে সেতুটি এলাকাবাসির গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে।

এলজিইডির ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল মনসুর মিয়া বলেন, অনেক স্থানে এ রকম হয়। আগে সেতু হওয়ায় পরে সড়কের কাজ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত করা হয়েছে। সেতুটির উত্তর পাশে সড়কের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

January 2021
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..