প্রেমের অভিনয় করে হারুনকে হত্যা, ট্রলিব্যাগে লাশ গুমের চেষ্টা

প্রকাশিত: ৫:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২০

প্রেমের অভিনয় করে হারুনকে হত্যা, ট্রলিব্যাগে লাশ গুমের চেষ্টা

Manual3 Ad Code

রুদ্র মিজান: কিলিং মিশন শুরু করে লিপি আক্তার নিজেই। প্রেমের অভিনয় করে নির্জন বাসায় ডেকে নেয় হারুনকে। এরপর লিপি নিজ হাতে তৈরি চা পান করতে দেয় হারুনকে। তারপর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে দু’জন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হারুনের ঘাড়ে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে লিপি। হারুন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অনেকটা নিস্তেজ হয়ে লিপির মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় রাজন হাওলাদার ও মাহবুব।

মৃত্যু নিশ্চিত করে দোকান থেকে ট্রলিব্যাগে ভরে লাশটি ফেলে দেয় খালে। গত ২৫শে নভেম্বর রাজধানীর ডেমরার বামৈল বাঁশেরপুল এলাকার ডিএন্ডডি খাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। তখনো তার কোনো পরিচয় জানা যায়নি। পরবর্তীতে পরিচয় উদ্‌ঘাটন হলেও কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিলো না। অবশেষে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে পুরো কিলিং মিশনের বর্ণনা দিয়েছে লিপি ও তার সহযোগীরা।

Manual4 Ad Code

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৪শে নভেম্বর সকালে হঠাৎ করেই লিপির কল। একান্তে সময় কাটাতে হারুনকে বাসায় যেতে বলে লিপি। হারুন তখনই আসতে চায়। কিন্তু লিপি সময় বেঁধে দেয়, সকাল ৮টার পর। তখন কেউ বাসায় থাকবে না। সাজগোজ করে লিপি। কিছুক্ষণের মধ্যে উপস্থিত হয় হারুন। হারুনকে বাসায় ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। সোফায় পাশাপাশি বসে দু’জন। গল্প-কথায় কাটে কিছুক্ষণ। এরমধ্যেই চা তৈরি করে আনে লিপি। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই লিপিকে কাছে টানে হারুন। চা শেষ করতে বলে লিপি। চা পান শেষে কাছে এলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে লিপি। একসময় ঘুম ঘুম ভাব আসে হারুনের। শরীর যেনো নিস্তেজ প্রায়। এরমধ্যেই প্রণয়ের আড়ালে থাকা আসল রূপ প্রকাশ করে লিপি। আগে থেকে প্রস্তুত রাখা ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে হারুনের ঘাড়ে আঘাত করে। মাগো বলে চিৎকার করে সোফায় ঢলে পড়ে।

Manual4 Ad Code

তারপর লিপি ফোনে ডেকে আনে তার আত্মীয় লেগুনা চালক মাহবুবকে। একইভাবে ডেকে আনা হয় লিপির স্বামী নির্মাণমিস্ত্রি রাজন হাওলাদার ওরফে আল-আমিনকে। হারুন বাঁচার জন্য অনুনয় করে। লিপি শর্ত দেয়, স্বজনদের কাছ থেকে দু’লাখ টাকা এনে দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। জীবন বাঁচানোর জন্য রাজি হয় হারুন। নিজের ভীষণ বিপদ জানিয়ে টাকার জন্য তাগাদা দেয় স্বজনদের কাছে। হারুনের বিপদের কথা জেনে দু’দফায় বিকাশে ৪৫ হাজার টাকা পাঠায় তার স্বজনরা। সেই টাকা ওই সময়েই লিপি ক্যাশ আউট করে পাশের বিকাশ এজেন্ট থেকে।

এরমধ্যেই দোকান থেকে কিনে এনে দুপুরে তেহারি খায় তারা। লিপি, মাহবুব ও রাজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় হারুনকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। বেঁচে থাকলে কঠিন প্রতিশোধ নেবে। হত্যার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। সিদ্ধান্ত অনুসারেই সন্ধ্যায় হারুনকে জাপটে ধরে তিনজন। হারুন তখন কান্না করছিলো। বাঁচার জন্য অনুনয় করছিলো। এসব অনুনয় তোয়াক্কা না করেই তাকে মুহূর্তের মধ্যেই বিছানায় ফেলে তোয়ালে দিয়ে গলা চেপে ধরে রাজন। পা চেপে ধরে লিপি। হারুনের বুকে বসে মুখে বালিশ চেপে ধরে মাহবুব। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চিটাগাং রোডের একটি দোকান থেকে ট্রলিব্যাগ কিনে আনে তারা। লাশটি বেঁধে ওই ব্যাগে ঢোকায়। তারপর সিএনজি অটোরিকশায় করে নিয়ে যায় বামৈল বাঁশেরপুল এলাকায়। সেখানে গোলাম মোস্তফা স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন খালে ফেলে দেয় লাশ ভরা ট্রলিব্যাগটি। লিপির ভাষ্য অনুসারে হারুনকে বাসায় ডেকে আনার আগে মাহবুবের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলো লিপি। পরামর্শ অনুসারে ডেমরা এলাকার সেবা নামক একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের দু’টি ওষুধ সংগ্রহ করে দেয় মাহবুব।

হত্যার কারণ হিসেবে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে লিপি জানিয়েছে, প্রায় দু’বছর আগে নির্জন বাসায় ডেকে নিয়ে লিপিকে ধর্ষণ করে গাড়িচালক হারুনুর রশিদ হাওলাদার। বিষয়টি সামাজিক কারণে গোপন রাখে লিপি। এরপর থেকেই প্রায়ই লিপিকে বিরক্ত করতো হারুন। সব সময় তাকে জিম্মি করে ভোগ করতে চাইতো। এসব কারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে হারুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে লিপি। গত ২৫শে নভেম্বর হারুনের লাশসহ ট্রলিব্যাগটি উদ্ধার করে পুলিশ। তারপরই তদন্তে নামে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। অবশেষে গতকাল শরীয়তপুর থেকে লিপি ও রাজনকে এবং ঢাকা থেকে মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার রাকিবুল হাসানের তত্ত্বাবধানে, ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডেমরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি ক্লু-লেস ছিল। গোয়েন্দা তৎপরতা ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাদের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি তারা স্বীকার করেছে। আজ তাদের আদালতে হাজির করা হবে বলে জানান তিনি।

Manual6 Ad Code

নিহত হারুনুর রশিদ হাওলাদার (৩৫)’র বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার মাদারগোনা গ্রামে। গ্রেপ্তার লিপি আক্তার (২২)-এর বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যার নয়াকান্দি গ্রামে, তার স্বামী রাজন হাওলাদার ও মাহবুবের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের আইলাকান্দি গ্রামে। তারা ডেমরা বাঁশেরপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। সূত্র: মানবজমিন।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..