ভালোবেসে ঘর ছেড়ে এ কেমন প্রতিদান পেল রেশমা?

প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২০

ভালোবেসে ঘর ছেড়ে এ কেমন প্রতিদান পেল রেশমা?

Manual2 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ভালবাসা দুটি আত্মার বন্ধুন। আর সে ভালবাসা আসল না নকল তা বুঝা যায় কিছু দিন অতিবাহিত হলে। ভালবাসায় থাকে অনেক স্বপ্ন আর সে স্বপ্ন রেশমার জীবনে নিয়ে এলো মৃত্যু। শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) চা বাগান থেকে রেশমার গলিত লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ঘাতক প্রেমিক দিপেশ উরাংকে (২৪) আটক করেছে পুলিশ। তিনি পেশায় একজন সিএনজিচালক। শনিবার রাতে রেশমার ছোট ভাই রহমত আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। রবিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় মৌলভীবাজার আদালতে পাঠালে ১৬৪ ধারায় হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেন ঘাতক প্রেমিক দিপেশ।

পুলিশ জানায় , ৮-৯ মাস আগে উপজেলার মাধবপুর চা-বাগানে বন্ধুর জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে সুনছড়া চা-বাগানের দীপেশ ওরাংয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় রেশমার। পরিচয়ের সূত্র ধরে দুজনের কথাবার্তা ও এক পর্যায়ে মন বিনিময় হয়। প্রেমিককে একান্তভাবে পাওয়ার জন্য দীপেশকে বিয়ের কথা জানায় রেশমা। দীপেশও সানন্দে রাজি হয়। দুজন মিলে পরিকল্পনা করে ৯ তারিখ সন্ধ্যার পর দুজনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। পরিকল্পনা মোতাবেক দীপেশ রাত ৯টার দিকে বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে মাধবপুর চা-বাগান থেকে রেশমাকে নিয়ে দেওড়াছড়া চা বাগান হয়ে মৌলভীবাজারের দিকে রওনা হয়। দেওড়াছড়া চা-বাগানের ২৩নং সেকশনে পৌঁছানোর পর রাস্তা থেকে ১০-১৫ গজ ভেতরে চা বাগানের মাঝখানে দুজন বসে। এ সময় দীপেশ প্যান্টের পেছনের পকেটে থাকা রশি বের করে পেছন থেকে রেশমার গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে রেশমা তার ব্যাগে নিয়েছিল কিছু কাপড়, রেশমি চুড়ি ও কসমেটিক্স। দীপেশ সেগুলো কিছু দূরে ফেলে রেখে চলে যায়। পেছনে পড়ে থাকে রেশমার নিথর দেহ।

অন্যদিকে রেশমার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকে তাকে। একদিন দুদিন করে সময় গড়িয়ে যায়, চা বাগানের জনহীন স্থানে পরে তাকে রেশমার মৃতদেহ। ১৩ তারিখ চা শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে একটি মেয়ের মৃতদেহ দেখে কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেয়। কমলগঞ্জ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পিবিআই ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ টিমকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়। পিবিআই টিম ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে ব্যর্থ হয় কারণ লাশে পচন ধরে গিয়েছিল। পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ১৪ তারিখ রেশমা আক্তারের বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম পুলিশের মাধ্যমে হাসপাতালে গিয়ে লাশের পরিধেয় কাপড়, গলায় তাবিজ ও পায়ের নুপুর দেখে লাশটি তার বোনের বলে শনাক্ত করেন।

Manual6 Ad Code

ইতোমধ্যেই পুলিশ ভিকটিমের পরিচয় ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়। সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুলিশ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারে। প্রাথমিকভাবে তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে এগোতে থাকে পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম। সন্দেহভাজন দীপেশ ওরাংকে ১৪ তারিখ সুনছড়া চা বাগানের বাজার লাইন থেকে আটক করা হয়।

Manual5 Ad Code

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, রেশমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দেওড়াছড়া চা বাগানে কে বা কারা তার মোটরসাইকেল আটকে রেশমাকে নিয়ে যায় এবং তাকে মারধর করে। এরপর সে বাড়ি চলে আসে কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি।

দীপেশের কথাবার্তার মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য যে বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়েছিল তার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ বুঝতে পারে দীপেশই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

Manual2 Ad Code

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জাম জানান, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে দীপেশ এক পর্যায়ে পুরো ঘটনা স্বীকার করে জানায় তাদের দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। তাই রেশমা আক্তার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তা না হলে রেশমা তার নামে নারী নির্যাতন মামলা করবে। এই নারী নির্যাতন মামলার ভয়ে দীপেশ ঠান্ডা মাথায় রেশমাকে খুনের পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দীপেশ রেশমাকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কথা বলে ৯ তারিখ রাতে দেওড়াছড়া চা বাগানে নিয়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করেন।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ শুরু থেকেই যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত সব নিয়েছে। তাই দ্রুত ঘটনার রহস্য বের করা সহজ হয়েছে।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..