সিলেট ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: সিলেটের আখালিয়া সুরমা আবাসিক এলাকার চিকিৎসক দম্পতির বাসায় কিশোরী জান্নাত আক্তার রিনার (১৫) মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে অভিযোগ দাখিল করলে বিচারক অভিযোগটি কোতোয়ালি থানার ওসিকে ৩ দিনের মধ্যে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযোগে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পাশাপাশি কিশোরী জান্নাত আক্তার রিনার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন চিকিৎসক দম্পতির ছেলে তাহসান। নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেন কিশোরীর পিতা আব্দুল মালিক। তিনি কোম্পানীগঞ্জের বাতুমারা নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে। মামলায় ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মামলা দায়েরের খবর শুনে আসামীরা পালিয়ে গেছেন। সেই সাথে ডা. ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, তার স্ত্রী জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জামিলা খাতুনও কর্মস্থলে যাচ্ছেন না বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। মঙ্গলবার সিলেট অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (ভারপ্রাপ্ত) বিচারক জিয়াদুর রহমান এই আদেশ দেন।
আসামিরা হচ্ছেন, সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ওয়েছ আহমদ চৌধুরী, তার স্ত্রী জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জামিলা খাতুন, ছেলে তাহসান, মেয়ে তাসকিয়া বেগম ও গোয়াইনঘাটের আঙ্গারজুর লামাপাড়া গ্রামের হাসনা বেগম। মামলায় ১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহসীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘কিশোরীর পিতা আব্দুল খালিক তার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করেন। এ সময় আদালতের বিচারক তাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করার পাশাপাশি আব্দুল খালিকের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। সেইসঙ্গে অভিযোগপত্রে বাদীর দাখিল করা বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনা এবং জবানবন্দিতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর আদালত ৩ দিনের মধ্যে কোতোয়ালি থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে মামলা নথিভুক্ত করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। আদালতের বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬ (৩) ধারায় এই আদেশ দেন।’
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, অভাবের সংসার হওয়ায় বাসায় টুকটাক কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখা করানোর শর্ত দিয়ে ডা. ওয়েছ ও ডা. জামিলা খাতুনের বাসায় পাঠানো হয় রিনাকে। এরপর থেকে তাকে নানাভাবে অত্যাচার শুরু করা হয়। গৃহকর্তীসহ পরিবারের অন্যরা সামান্য কাজে ভুল হলেই রিনাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করতেন। প্রায় সময় মেয়ে রিনা তার ওপর নির্যাতনের কথা জানালেও বাবা অভাবি হওয়ায় মেয়েকে বুঝিয়ে তাদের বাসায় থাকতে বলতেন। গত ৩১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আসামি হাসনা বেগম রিনার ভাই আল আমিনের মোবাইলে ফোন করে জানান, তার বোন আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে আখালিয়া সুরমা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের ৪৩ নম্বর বাসা গিয়ে স্বজনরা দেখেন রিনার লাশ সিঁড়ির মেঝেতে পড়ে আছে। মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে বাদী অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বাদী জানান, তাহসান ও জামিলা খাতুন বাসার কোনও কাজে ভুল হলে রিনাকে মারধর করতেন। এছাড়াও অন্যরা তাদের পক্ষ নিয়ে তাকে নির্যাতন করতো। মামলার আসামি তাহসানের কুদৃষ্টি ছিল রিনার ওপর। মামলার ১১ নম্বর সাক্ষী শিরিনা বেগম বাদীকে জানান, রিনা জীবিত অবস্থায় চিকিৎসক দম্পতির ছেলে তাহসান তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ করায় আসামিদের নির্যাতনে বাদীর মেয়ের মৃত্যু হয় বলে এজাহারে উল্লখ করা হয়েছে।
নিহত রিনার ভাই আল-আমিন বলেন, \’আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় সময় তাকে মারধর করা হতো। মারধরের কারণেই আমার বোনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। রিনার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডাক্তার জামিলার ছোট ছেলে আমার বোনকে খুব বেশি অত্যাচার করতো। আমার বোন খুব সহজ-সরল ও খুব ভালো একটা মেয়ে। সে কখনোই আত্মহত্যা করবে না। আমরা আদালতে মামলা করেছি। আমার বোনকে যারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd