সিলেট ২২শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৩০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিপাকে সারা বিশ্ব। এরইমধ্যে লাখের উপরে মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন মানবতাবাদী চিকিৎসক-নার্সরা।
এমন পরিস্থিতিতে সিলেটের এক নারী চিকিৎসক বিকাশের মাধ্যমে অতিরিক্ত বিল নিয়ে মোবাইলে পরামর্শ ও চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনায় সিলেটজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকমাস আগে থেকে নির্ধারিত ফি দিয়েই প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাদিরা বেগমের চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন সিলেট উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা এক নারী।
করোনা পরিস্থিতিতে ওই নারীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়াতে গত সোমবার (২০ এপ্রিল) ডা. নাদিরার কাছে মোবাইল ফোনে পরামর্শ চান তার স্বামী সিলেট সদর উপজেলার মেজরটিলার এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু মোবাইল ফোনে তাকে পরামর্শ না দিয়ে নিময়মাফিক সহকারীর মোবাইলে ফোন দিতে বলেন। তার কথা মতো সহকারীর মোবাইলে ফোন দিলে বিকাশের ২০ টাকা খরচসহ পরামর্শ ফি ৮২০ টাকা পাঠাতে বলেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, ‘গত ৩ বছর ধরে আমার স্ত্রীর গাইনি সমস্যার ডা. নাদিরার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিল। তাতে এক ধরনের পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। গত সোমবার চিকিৎসার প্রয়োজনে ডা. নাদিরা ম্যাডামকে ফোন দিলে তিনি যথা নিয়মে সহকারীর নম্বরে ফোন দিয়ে আসতে বলেন।ছবি: সংগৃহীতসিরিয়ালের জন্য ওই সহকারীর নম্বরে মোবাইল নম্বরে (০১৭৩২-৬৫৮৭৭৭) ফোন দিলে বলা হয়, আগে খরচসহ ৮০০ টাকা বিকাশ করতে। অথচ আগে ওয়েসিস হাসপাতালে যতবার দেখিয়েছি, ফি বাবদ ৭০০ টাকা রাখতেন।
লকডাউন চলাবস্থায় মানুষের পরিস্থিতি খারাপ ফি বেশি নেওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ওই সহকারী বলেন, এছাড়া অ্যালাও নয়। টাকা না দিলে ম্যাডাম পরামর্শ দেবেন না। যে কারণে মর্মাহত হয়ে টাকা বিকাশ করিনি, পরামর্শও নেইনি।
তিনি বলেন, এর আগেও নগরের হাউজিং এস্টেটের এক ব্যক্তি ওই চিকিৎসকের ৮২০ টাকা বিকাশে ভিজিট নেওয়ার ব্যাপারে ফেসবুকে লিখেন। তিনিও ঘটনাটি ফেসবুকে লিখেছেন, তবে বিদ্রুপ করে কিছু লিখেননি।
করোনা পরিস্থিতি মানুষ যখন আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। অনাহারে অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন অনেকে। দুস্থদের সাহায্যার্থ হাত বাড়িয়েছেন মানবতাবাদী লোকজনও। আর অনলাইনে ফ্রি চিকিৎসা পরামর্শ দিতে ইতোমধ্যে কয়েকটি হাসপাতালও তাদের চিকিৎসকদের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে ডা. নাদিরা বেগমের এমন অমানবিক কর্মকাণ্ড বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, অনলাইনে বা মোবাইলে শতভাগ চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া যায় না। এভাবে চিকিৎসা দিয়ে পরামর্শ ফি নিতে আগে কখনো শুনিনি। আমরাও সারাজীবন সেবা দিয়ে আসছি, অনেকেতো মোবাইল ফোনে সেবা নিয়েছেন। কখনোতো টাকা নেইনি। তিনি (ডা. নাদিরা) এই ঘটনার জন্য নিজে দায়ী বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে ডা. নাদিরা বেগমের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে ‘আমি রোগী দেখায় ব্যস্ত আছি বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এদিকে অনলাইনে চিকিৎসা দিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করার ঘটনাটি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিঙ্গার এস রহমান ডা. নাদিরাকে করোনা যুদ্ধের প্রথম রাজাকার আখ্যা দিয়েছেন।
সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকি লিখেছেন ‘করোনার গজব তাদের না দেখে গরীবের ডাক্তার, মানবিক ডাক্তারদের দেখে ‘
জুলফিকার তাজুল লিখেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে একজন ডা. নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন। হাজার হাজার ডাক্তার করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনরাত কাজ করছে এবং বিনামূল্যে অনলাইনে সেবা করেই যাচ্ছে। সেখানে এই করোনাময়ী ডাক্তারের এতো লোভ কিভাবে আসে?’
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd