এক রাতেই সাত’শ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পান সালমান শাহ স্ত্রী সামিরা

প্রকাশিত: ১:১১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০

এক রাতেই সাত’শ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পান সালমান শাহ স্ত্রী সামিরা

Manual3 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ঢালিউডের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সালমান শাহ’র ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই রহস্যঘেরা মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন সেই বিষয়ে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। যা প্রত্যাখান করেছেন সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী ও তার পরিবার। এ বিষয়ে সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা হক জানালেন নানান কথা।
পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নানামুখি আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা।

সামিরা বলেন, যার জন্য এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বিয়ে করেছিলাম। চোখের সামনে সেই স্বামীকে হারালাম, সেই স্বামীর খুনের অভিযোগ মাথায় নিলাম। প্রতিটা রাত, প্রতিটা দিন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। সমাজে ছোট হয়েছি। সালমান ভক্তদের কাছে আমি ছোট হয়েছি। ২৪ বছরে যে গ্লানি, অপবাদ বয়ে বেড়িয়েছি সেটা একজন নারী হিসেবে কতোটা কষ্টের ছিলো, কতোটা অমানবিক ছিলো তা কাকে বোঝাবো? তবুও আমি ধৈর্যশালী ছিলাম। কারণ আজ কিংবা কাল, সত্যিটা বেড়িয়ে আসবে।

Manual3 Ad Code

সামিরা আরো বলেন, আমি এক রাতেই ফেসবুকে ৭ শতাধিক ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পেয়েছিলাম।

সালমান আত্মহত্যা করেছেন এমন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার নির্ভার লাগছে কি না? প্রশ্নের জবাবে সামিরা বলেন, তদন্তের শুরু থেকে আমি একই কথা বলে আসছি। জানি আমি নির্দোষ। পিবিআই বলার পর হয়তো আরো অনেকে বিশ্বাস করেছে। নইলে কি আর কাল রাত থেকে সাতশর বেশি বন্ধুত্বের অনুরোধ পেতাম?

Manual6 Ad Code

এরআগে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছিলেন চিত্রনায়ক সালমান শাহ।

প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তুলে ধরে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পিবিআই কর্তৃক তদন্তকালে ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৪৪ সাক্ষীর জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।

Manual8 Ad Code

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, সালমান শাহের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ হলো- চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা; স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ; মাত্রাধিক আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টা; মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেয়া এবং সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

Manual5 Ad Code

১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন।

২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।

মামলাটি এরপর র‌্যাব তদন্ত করে। তবে র‌্যাবের দ্বারা তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‌্যাবকে মামলাটি আর না তদন্ত করার আদেশ দেন। তখন থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পিবিআই।

১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আগমন ঘটে সালমান শাহর। স্মার্টনেস, নিজস্বতার কারণে রাতারাতি তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হঠেন তিনি। মাত্র সাড়ে তিন বছরে ২৭টি ছবি করেন। জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুর খবর বিটিভির খবরে প্রকাশিত হয়। মৃত্যুর দুই দশক পরে এখনও সমান জনপ্রিয় তিনি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..