নগরীতে নোংরা পরিবেশে রাতে অসুস্থ মহিষ জবাই, সকালে গরুর মাংস বলে বিক্রি

প্রকাশিত: ৫:২৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০

নগরীতে নোংরা পরিবেশে রাতে অসুস্থ মহিষ জবাই, সকালে গরুর মাংস বলে বিক্রি

Manual1 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটে ডাক্তারি পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। রাতের বেলা লোকচক্ষুর আড়ালে জবাই করা অসুস্থ গবাদিপশু বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি রাতে জবাই করা মহিষ দিনে গরুর মাংস বলেও বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। এতে সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন নগরবাসী।

জবাইয়ের আগে প্রতিটি গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও, সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত পশু জবাইখানায় রাতের বেলা ডাক্তারের দেখা মিলে না। অথচ বেশিরভাগ পশুই রাতের বেলা জবাই করা হয়।

সচেতন মহল বলছেন, এসব গবাদিপশুর বিভিন্ন জটিল রোগ থাকতে পারে। রোগ পরীক্ষা ছাড়া পশু জবাই করা এবং বিক্রি করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রোগ নির্ণয়ে কোনো ধরনের তদারকি না থাকার ফলে সাধারণ ক্রেতারা ভেজালমুক্ত মাংস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

Manual2 Ad Code

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বাগবাড়ির সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জবাইখানায় সব পশু জবাই করা হয় না। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে নোংরা পরিবেশে পশু জবাই করে বিভিন্ন মাংসের দোকানে বিক্রি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাইয়ের আগে ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরীক্ষার পর নির্ধারিত মৌলভী জবাই করবেন। এরপর ভেটেরিনারি ডাক্তার পশুর মাংসের গায়ে সিল মারেন। গরুর মাংসের গায়ে গরুর মাংস আর মহিষের মাংসের গায়ে মহিষের মাংস হিসেবে সিল মারার নিয়ম রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পশু জবাই করার সময় কসাইখানায় সিসিকের ডাক্তার থাকেন না। মাঝে মধ্যে ডাক্তার আসেন, তাও সকালে। একই রুটিনে আসা-যাওয়া করেন মৌলভীও। কিন্তু যে কয়েকটি পশু জবাই করা হয় সেগুলো রাতের আঁধারেই শেষ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, সিসিকের তদারকি না থাকায় মহিষের মাংসকে অসাধু ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস হিনেবেই বাজারজাত করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে বাগবাড়ি কসাইখানায় একটি রোগা মহিষকে জবাই করার জন্য রাখা হয়। ওইদিন রাতেই পশুটি জবাই করা হয়। কিন্তু শনিবার দিনভর নগরীর বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেট, আম্বরখানা ও বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন মাংসের দোকানে মহিষের মাংস কিনতে পাওয়া যায়নি। গরুর মাংস ছাড়া কোথাও জবাই করা মহিষের মাংসের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, মহিষ জবাই করে ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বলে বাজারজাত করছে। আর এসব মাংস চলে যায় নগরীর বিভিন্ন নামিদামি ও জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোতে। সেখানে গরুর মাংস বলে সাধারণ মানুষকে খাওয়ানো হচ্ছে দেদারছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন নগরবাসী।

নগরীর খাসদবির এলাকার বাসিন্দা শাহরিয়ার চৌধুরী জানান, নগরীর মাংসের দোকানগুলো একেবারে নিয়ন্ত্রণহীন। তার ওপর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জবাই হচ্ছে পশু। সবকিছুতেই এতো ভেজাল কিছুতেই মানা যায় না। জনস্বার্থে স্বাস্থ্য রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করার দাবি জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আম্বরখানা এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, রাতে মহিষ জবাই করে দিনে গরুর মাংস বলে প্যাকেটজাত করে নিয়ে আসে। তাছাড়া খুবই নোংরা পরিবেশে পশু জবাই করে মাংস সংগ্রহ করা হয়। যার ফলে মানুষ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছি।

এসব অভিযোগের কথা স্বীকারও করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবুও আমাদের নির্ধারিত কসাইখানায় পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে একজন ভেটেরিনারী ডাক্তার রয়েছেন। এছাড়া একজন মৌলভীসহ পরিচ্ছন্নকর্মী ও সিসিকের কর্মচারী দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়া পশু জবাই করার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Manual4 Ad Code

তিনি বলেন, কসাইখানার জন্য আমাদের সিসিকের নির্ধারিত ডাক্তার নেই। আমরা কসাইখানার জন্য ভেটেরিনারির চিকিৎসক ডা. মাহবুব আলমকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছি। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সম্মানি আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে তাকে নিয়মিত সময় দিতে বলা হয়েছে। আশা করি এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Manual4 Ad Code

ডা. জাহিদ আরও বলেন, আমাদের সম্পূর্ণ ‘ক্যাপাসিটি’ নেই। একটি মাত্র কসাইখানা বাগবাড়িতে হওয়ায় টিলাগড় বা আশপাশের মানুষ সেখানে পশু নিয়ে জবাই করতে চায় না। তাই বিভিন্ন স্থানে নোংরা পরিবেশে পশু জবাই করে বাজারজাত করছে। মেয়র মহোদয়ও এ বিষয়ে আলাপ করেছেন। কসাইখানা না বাড়ালেও যেটি আছে সেটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে। এ ব্যাপারে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সূত্র: দৈনিক শুভ প্রতিদিন

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..