সিজারের সময় নবজাতকের গলা কেটে ফেললেন নার্স

প্রকাশিত: ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০১৯

সিজারের সময় নবজাতকের গলা কেটে ফেললেন নার্স

Manual1 Ad Code

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে প্রসূতির সিজার করলেন নার্স। সিজারের সময় নবজাতকের গলা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

Manual3 Ad Code

নবজাতকের গলা কেটে গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে ডেলিভারি শেষ না করে অপারেশন থিয়েটারে মা-শিশুকে রেখে পালিয়ে যান নার্সরা। পরে অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে স্বজনরা দেখেন নবজাতকের অর্ধেক মায়ের পেটে এবং মাথা ও হাত বাইরে। এ অবস্থায় ওই মা-শিশুকে অন্য ক্লিনিকে নেয়া হয়। সেখানে মৃত নবজাতকের জন্ম হয়। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রোববার এ ঘটনা ঘটে।

Manual4 Ad Code

প্রসূতির স্বামী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুমড়াকাপন গ্রামের বাসিন্দা মো. আওয়াল হাসান বলেন, রোববার ভোরে স্ত্রীর প্রসব ব্যথা ওঠে। অবস্থা খারাপ দেখে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রথমে হাসপাতালের নার্সরা রোগী দেখে জানান নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান হবে। এরপর সকাল ১০টার দিকে একজন ডাক্তার এসে চেকআপ করে বলেন নরমাল ডেলিভারিতেই হবে সন্তান।

Manual8 Ad Code

কিছুক্ষণ পর নার্সরা আমাকে জানান সিজার করা লাগবে। সিজারের মেডিসিন আনার জন্য একটা স্লিপ দেন তারা। ওই সময় হাসপাতালের এক ব্যক্তিকে মেডিসিন আনার জন্য আমার সঙ্গে দেয়া হয়। আমি তার সঙ্গে না গিয়ে অন্য একটি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে আনি। ওষুধ আনার পর নার্সরা বলেন রক্ত লাগবে। আগে আমার সঙ্গে যে লোককে ফার্মেসিতে পাঠানো হয়েছিল তাকে দেখিয়ে নার্সরা বলেন, তার কাছে রক্ত আছে, পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। আমি পাঁচ হাজার টাকা না দিয়ে তিন হাজার টাকায় বাইর থেকে এক পাউন্ড রক্ত নিয়ে আসি।

Manual5 Ad Code

কিন্তু আমি এসে দেখি স্ত্রীকে নরমাল ডেলিভারির জন্য নিয়ে গেছেন নার্সরা। কিছুক্ষণ পর এক নার্স এসে বলেন আপনার বাচ্চা আর বেঁচে নেই। মায়ের অবস্থা ভালো না, মাকে বাঁচাতে হলে এখানে একটা সই দেন। আমি কিছু চিন্তা না করে সই দিলাম। বাচ্চার মাকে বাঁচাতে হবে ভেবে।

তিনি বলেন, যখন ভেতরে গেলাম তখন দেখলাম নবজাতকের মাথা-হাত বাইরে, বাকিটুকু মায়ের পেটে। নবজাতকের হাত ছিঁড়ে গেছে, গলা কেটে ফেলেছেন তারা। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে অনবরত। তখন আমি দৌড়ে গেলাম নার্স আনার জন্য। এসে দেখি কোনো নার্স নেই। সবাই পালিয়ে গেছেন। এ সময় আমি চিৎকার শুরু করি। তখন হাসপাতালে কর্মরত শোয়েব নামে এক ব্যক্তি আমার সঙ্গে তর্কবিতর্ক শুরু করে। সে আমার ঘাড় ধরে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। সে বলে রোগী নিয়ে এখনই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যা।

এ সময় কান্না করতে করতে রোগীকে বাঁচানোর আকুতি জানাই আমি। কারও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে রোগী নিয়ে পাশের আল-হামরা হাসপাতালে যাই। সেখানে নিলে মায়ের পেট থেকে মৃত বাচ্চা বের করেন চিকিৎসকরা। আমি অসহায় মানুষ, আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।

মৃত নবজাতকের মা সুমনা বেগম বলেন, যখন আমার স্বামী নার্সদের বলে দেয়া লোকের কাছ থেকে রক্ত না কিনে বাইরে রক্ত কিনতে যায় তখন নার্সরা আমাকে জোর করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। আমি তাদের বললাম একটু আগে বললেন সিজার লাগবে। আমার স্বামী রক্ত আনতে গেছে। তখন তারা আমাকে ধমক দেন। সেই সঙ্গে তারা আমার পেটে জোরে জোরে চাপ দিতে থাকেন। পশুর মতো পেট থেকে বাচ্চা টানতে শুরু করেন তারা। এতে আমার বাচ্চার হাত এবং গলার রগ ছিঁড়ে যায়। পরে তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যান। তাদের কথা মতো ওই লোকের কাছ থেকে রক্ত না কেনায় আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলছেন তারা।

এ বিষয়ে আল-হামরা হাসপাতালের ম্যানেজার বলেন, আমাদের যে ডাক্তার অপারেশন করেছেন তিনি নিজেও অবাক হয়েছেন এ ধরনের কাণ্ড দেখে। বিষয়টি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেছেন আমাদের ডাক্তার।

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রত্নদ্বীপ বিশ্বাস তীর্থ বলেন, আমি আজ মাত্র এখানে যোগ দিয়েছি। বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব বিষয়টি।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পার্থ সারথি দত্ত কানুনগো বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার দুই দিন আগে থেকে বাচ্চাটির নড়াচড়া ছিল না। বাচ্চা যদি মায়ের গর্ভে মারা যায় অনেক সময় ফুলে যায়। ওই অবস্থায় পেট কেটে বাচ্চা বের করতে হয়। হাসপাতালে ওই দিন নয়টি সিজার হয়েছে। তিনজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন। নার্সরা সিজার করেনি, ডাক্তাররাই সিজার করেছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..