সিলেট ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০২৫
মো. আবুল হোসেন :: সিলেটের ইতিহাসে প্রথম শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব। স্বৈরাচার বিরোধী জুলাই আন্দোলনে দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে প্রথম শহীদ তিনি। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বেলা ২টার দিকে সিলেট নগরের বন্দর বাজরে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে স্বৈরাচারের দল ও পেটুয়া পুলিশ বাহিনী তার বুক ও মুখ লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি চালায়। ঐদিন সন্ধ্যে ৭টার দিকে প্রাণ হারান তিনি।
জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত’র সিলেট ব্যুরো প্রধান ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ’র স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক আবু তাহের মো: তুরাবের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরশহরের ফতেহপুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম ও মমতাজ বেগমের পুত্র।
গত ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমআর নামাযের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থনে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার-বন্দরবাজারসহ নগরজুড়ে চলছিল বিক্ষোভ মিছিল। তখন পেশাগত দায়িত্ব পালনে নগরের বন্দরবাজার পুরানলেন সম্মুখস্থ ফাকা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন সাংবাদিক এটিএম তুরাব।
এ সময় স্বৈরাচারে দোসর ও অনুচর আওয়ামীদের নির্দেশে সাংবাদিক তুরাবের বুকে ও মুখে উপর্যুপরি গুলি চালায় পুলিশ। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ওসমানী হাসপতালে নিলে সেখানে তাকে তাৎক্ষণিক কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তড়িঘড়ি করে সাংবাদিরা তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধায় তার মৃত্যু ঘটে। ময়না তদন্তকালে সাংবাদিক তুরাবের দেহে ৯৮ টি ছড়রা গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিলেটের সাংবাদিকরা। তারা জঘন্য ও পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডে প্রতিবাদে মানববন্ধন- বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।
সাংবাদিক তুরাব হত্যার ঘটনায় ঘাতকদের বিরুদ্ধে মামলা এমনকি কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি তৎকালীন সরকারের পুলিশ। উপরন্তু স্বৈরাচারের তাবেদারী করতে গিয়ে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহ করতে পুলিশ নিজে বাদী হয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করে।
এ অবস্থায় গত বছরের ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তন ঘটে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।পতন ঘটে হাসিনার স্বৈর সরকারের। পরিস্থিতি অনুকুলে আসলে এ ঘটনায় গত বছরের ১৯ অগাস্ট তুরাবের ভাই আবুল হোসেন মোহাম্মদ আজরফ জাবুর সিলেটের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশা মামলা করেন।
মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাদেক কাউসার দস্তগীরকে করা হয় মামলার মূল ঘাতক আসামি। আাদালতের আদেশে এসএমপির কোতায়ালী পুলিশ মামলাটি রেকর্ডে নিতে বাধ্য হলেও আসামীদের গ্রেফতারে নানা টালবাহানা শুরু করে। পরে মামলার তদন্ত পিবিআই সিলেটকে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের উপর মহলের নির্দেশে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর পিবিআই মামলার এজাহার নামীয় আাসামী সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সাদেক কাউসার দস্তগীর এবং কনেস্টবল উজ্জল সিংহকে গ্রেফতার করলেও আজোবধি অন্য কোনো আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
সাংবাদিক এটিএম তুরাব হত্যাকাণ্ডের একবছর অতিক্রান্ত হয়েছে গত ১৯ জুলাই। তুরাবের প্রথম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবিতে আবারও সেচ্চার হয়ে ওঠেন সিলেটের সাংবাদিকরা। এ উলক্ষে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবসহ মিডিয়াঙ্গনের কয়েকটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান মাসব্যাপি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd