সিলেটে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২৪

সিলেটে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

Manual4 Ad Code
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করা হয়েছে। রোববার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন শিশু হামদান মিরানের বাবা আমিনুর রহমান মুবিন।
ছাতকের হাজিপাড়া নোয়াগাও গনেশপুর গ্রামের মুবিন সংবাদ সম্মেলনে জানান তার ২২ মাস বয়সী ছেলে শিশু হামদান মিরান গত ৬ অক্টোবর থেকে আমাশয় রোগে ভূগছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ অক্টোবর রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেকটা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ভর্তি করাই। তাকে কোলে নিয়ে হাসপাতাল ঘুরে বেরিয়েছি। হাসপাতালেও খেলাধুলা করেছে সে।
হাসপাতালে আনার পর আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। কিন্তু তার রোগ নির্ণয় করা যায়নি। প্রাথমিকভাবে তার আমাশয় ও ডায়রিয়া এভাবেই চিকিৎসা চলছিল। গত ৯ অক্টোবর চিকিৎসাপত্রে কে-ওয়ান ইনজেকশন জিরো পয়েন্ট ৫ এমএম দেওয়ার কথা লিখে দেন চিকিৎসক। অথচ নার্স ফার্মেসী থেকে কেটি-ওয়ান ইনজেকশন এনে দেওয়ার শ্লিপ ধরিয়ে দেন। আমি তাদের কথামত ইনজেকশনটি এনে দেই। দুপুর সোয়া ২ টায় ইনজেকশনটি পুশ করা হয়।
ইনজেকশন যখন পুশ করা হয় তখন মিরান চিৎকার দিয়ে ওঠে। তারপরও নার্স আরো জোরে পুশ করে ইনজেকশনের পুরোটাই দিয়ে দেন। তার মুখ কালচে হয়ে যায়। নিস্তেজ হতে শুরু শুরু করে আমার সন্তানের পুরো শরীর। সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডে থাকা অসংখ্য লোক জড়ো হয়ে যান। অনেকেই বলাবলি শুরু করেন কিছুক্ষণ আগেও বাচ্চাটাকে সুস্থ দেখলাম।
এরপর নার্স বলেন, ডাক্তারকে বিষয়টা জানান। ডাক্তার এসে বলেন, আমার ছেলের অবস্থা ভাল নয়; তাকে আইসিউ সেবা দিতে হবে। এতে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা লাগবে। আমি বলেছি যত টাকা লাগে আমার সন্তানকে বাঁচান।
কিছুক্ষন পর তারা এসে আইসিউবেড খালি নেই জানিয়ে পাশে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই আমার সন্তানের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে পড়ে। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানালেন আমার সন্তান আর নেই।
এরপর আমার ঘোর কাটে। আমি সন্তানের মৃত্যুর কারন খোঁজতে থাকি। চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশন আর নার্সের লেখা কাগজটি মিলিয়ে দেখি রাত দিন ফারাক। চিকিৎসক লিখে দিয়েছেন কে-ওয়ান আর নার্স (ব্রাদার) লিখে দিয়েছেন কেটি-ওয়ান। হাসপাতাল কতৃপক্ষের এই ভুল ধরলে তারা সেটি অস্বীকার করেন।
হাসপাতাল কতৃপক্ষের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পরও বিষয়টি মানতে নারাজ তাই যে ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে আসি সেখানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ আমরা কালেকশন করি। তারা আমাদেরকে ফুটেজ না দিলেও ফুটেজটি নিয়ে চিকিৎসকদের দেখাই।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে আমি যে ইনজেকশন নিয়ে যাই সেটি কেটি-ওয়ান। তারপরও তারা সেটিও মানতে নারাজ। এরপর নার্সের লিখে দেওয়া শ্লিপটাও তাদেরকে দেখাই তারপরও তারা বিষয়টি মানতে রাজি হননি।
এরপর আমার স্ত্রীর ভাই ডা. তামিমকে বিষয়টি অবগত করি। তিনি বিষয়টি দেখে নার্সের ভুলের কারনে এমনটি হয়েছে বলে জানান। তিনি জানান, কেটি-ওয়ান ইনজেকশনটি মূলত পটাশিয়াম কমে গেলে দেওয়া হয়। আর এটি দিতে হয় খুব ধীরে ধীরে স্যালাইনের মাধ্যমে। এটা বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
এটি দিতে খুব সতর্ককতা অবলম্বন করতে হয়। অথচ আমার চোখের সামনে আমার সন্তানকে ওই ইনজেকশন দেওয়া হয়। তারপরও কতৃপক্ষ সেটি মানতে চায়নি। তারা বলেছে এটি তাদের চিকিৎসক বা নার্সের ভুল নয়।
সংবাদ সম্মেলনে মুবিন তার সন্তানকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ হত্যা করেছে দাবি করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মুবিন প্রশ্ন রাখেন, ছেলেটি যখন মৃত্যু শয্যায় তখন তাকে আইসিউ কেন দেওয়া হলনা। কেন দূরের একটি হাসপাতালে পাঠানো হল এমন প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, ভুল চিকিৎসায় শিশুটি মারা গেছে; দায় সরানোর কৌশল হিসাবে অন্য হাসপাতালে পাঠান বলে অভিযোগ করেন মুবিন।
সংবাদ সম্মেলনে মুবিন জানান, ওসমানী হাসপতালের পর রাগীব রাবেয়া সিলেটের দ্বিতীয় হাসপাতাল যেখানে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তারা কেন সেখানে চিকিৎসা না করেই অন্য হাসপাতালে পাঠাল সেটি আমার বোধগম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত  বর্তমান  সরকারের কাছে সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর পর বিচার না পাওয়ার যে সংষ্কৃতি তৈরী হয়েছে সেটি থেকে মুক্তি ও চিকিৎসার নামে যারা কসাইখানা খুলে বসেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সংবাদ সম্লেনে মুবিন বলেন, হামদান মিরানকে ফেরত পাবো না ঠিক, তবে রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরো অসংখ্য হামদান মিরান চিকিৎসা নিচ্ছে তারা কী আদৌও নিরাপদে সেবা নিচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নও রাখেন। ভবিষ্যতে যেনো আর কোনো মিরানকে চিকিৎসার নামে এমন প্রাণহানি না ঘটায়। সেদিকে সাচ্চার হওয়ার আহবান জানান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভুল চিকিৎসায় এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের স্বীকার না হয় সবাইকে সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মানববন্ধন, স্বাস্থ্য উপদেষ্ঠা, সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানান।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..