সমন্বয়কদের নামে পল্লী চিকিৎসকের চাঁদাবাজি, সিলেটজুড়ে তোলপাড়!

প্রকাশিত: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২৪

সমন্বয়কদের নামে পল্লী চিকিৎসকের চাঁদাবাজি, সিলেটজুড়ে তোলপাড়!

Manual8 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্ট: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আসাদ বিন রনির নাম ভাঙিয়ে সিলেটে এক পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে, একাধিক গণমাধ্যম’র কাছে এসেছে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদানের বেশ কিছু স্ক্রিনশর্ট।

 

অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসকের নাম শরিফ উদ্দিন। তিনি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকেরগাঁয়ের বাসিন্দা। তাঁর মূল বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া। তবে তিনি কোম্পানীগঞ্জেই বড় হয়েছেন, বর্তমানে এখানেরই বাসিন্দা।

 

জানা গেছে, শরিফ উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. ফাতেমা আক্তার পারুল (৩৭) বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সিলেট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭ নং আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তাদের ছেলে শিহাব (১৭) ছাত্র-আন্দোলনকালে ৪ আগস্ট বিকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। মামলার এজাহারে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫-২০ জনকে।

 

Manual2 Ad Code

এদিকে, এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে ৭ নম্বরে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের মাঝেরগাঁয়ের বাসিন্দা- সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য তামান্না আক্তার হেনা (৪২)। তার কাছে ফোন করে বাদীর স্বামী পল্লী চিকিৎসক শরিফ উদ্দিন এক লাখ চাঁদা দাবি করেছেন- এমন একটি অডিও কল-রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিলেটজুড়ে হচ্ছে তোলপাড়।

 

রেকর্ডে অপর প্রান্ত থেকে শরিফ উদ্দিন তামান্না আক্তার হেনাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- ‘আপনার নাম আসছে, কেন্দ্র থেকে সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আসাদ বিন রনি আপনার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। আমি চাচ্ছিলাম না এসব করতে। আমার ছেলে আহত হয়েছে। চিকিৎসায় ৭ লাখ টাকা খরচ। এসব ঋণ আমি পরিশোধ করবো কী করে? এখন আপনি আমাকে বলুন- কাকে ধরলে, কার বিরুদ্ধে মামলা করলে টাকা মিলবে। আর আপনি আমাকে ১ লাখ দিবেন। আপনার কাছে ১০ লাখ টাকা চাচ্ছি না, তবে ১ লাখ টাকা দিতে হবে, এটি আমার দাবি। আমার ছেলেকে প্রতিদিন ২৫ হাজার দামের একেকটি ইঞ্জেকশন দেয় ডাক্তার, ৬ ঘণ্টা পর পর দেয়। দিনে লাগে এক লাখ টাকা। কেন্দ্রের (সমন্বয়কদের) কথা শুনলে মামলা দিতেই হয়। এত টাকা আমি পাবো কোথায়? তাই আপনাদেরকে টাকা দিতে হবে। সারজিস, হাসনাত ও রনি বাংলাদেশের প্রধান তিন সমন্বয়ক। তারা আমাকে বলেছেন- তুমি মামলা দাও, টাকা কীভাবে দেবে সেটা আমরা দেখবো। সেনাবাহিনী দিয়ে আটক করাবো। আসামিরা টাকা দিবে, বাপও ডাকবে।’

 

Manual8 Ad Code

তামান্না আক্তার হেনা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি শরিফ উদ্দিনকে ফোনে বলেন- ‘আপনার ছেলের চিকিৎসার্থে কোনো সুযোগ থাকলে জেলা পরিষদ থেকে অনুদান পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আমি কোনো টাকা দিতে পারবো না। মামলা দিয়ে দিলে কী আর করবো।’

Manual5 Ad Code

 

সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য তামান্না আক্তার হেনা বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যম-কে হোয়াটসআপ কলে জানান- ‘আমি ছাড়াও শরিফ উদ্দিন অন্তত ১০ জনের কাছে চাঁদা দাবি করেছেন। আমি জনপ্রতিনিধি হওয়ায় তার সঙ্গ আমি পূর্ব পরিচিত। আমার কাছ থেকে ভিন্ন কথা বলে বেশ কয়েকজনের ফোন নাম্বার চেয়ে নিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছি- তাদেরকেও মামলার ভয় দেখিয়েছেন এবং অনেকের কাছ থেকে ১০-২০ হাজার করে টাকা আদায় করেছেন। আমার কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন শরিফ। আমি দিতে রাজি না হওয়ায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাকে আসামি করেছেন তিনি। স্থানীয় সবাই জানেন- শরিফের ছেলে শিহাব আন্দোলনের সময় হামলায় আহত হয়নি, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।’

 

তিনি আরও বলেন- ‘মামলা দেওয়ার আগে আমিসহ বেশ কয়েকজনের কাছে চাঁদা দাবি করেছেন শরিফ। আমার কাছে কল দিয়ে ১ লাখ টাকা দাবি করেছেন ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে। আমাকে তিনি বিকাশ নাম্বারও দিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে। এছাড়া অনেকে যে টাকা দিয়েছেন- সে বিষয়টি পরে আমাকে অনেকে জানিয়েছেন। যারা টাকা দেয়নি তাদেরকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। শরিফ তার স্ত্রীকে দিয়ে ১ অক্টোবর মিথ্যা মামলাটি করিয়েছেন।’ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, কেন্দ্রীয় ও সিলেটের সমন্বয়ক এবং পুলিশ প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তামান্না আক্তার হেনা।

 

Manual4 Ad Code

অভিযোগের বিষয়ে পল্লী চিকিৎসক শরিফ উদ্দিন গণমাধ্যম-কে জানান- ‘মামলার বিষয়ে আমি অবগত নই। এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না আমি।’

 

কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান গণমাধ্যম-কে জানান- টাকা বা চাঁদা দাবির বিষয়টি আমরা অবগত নই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিবো। আর এখনো ওই মামলার কোনো আদেশ আমাদের থানায় আসেনি।

 

এদিকে, মামলার বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবি মো. জালাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যম-কে জানান- ‘আমার মক্কেলের স্বার্থ জাড়িত তাই এ মামলার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..