লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কান্না : পাথর কোয়ারি খুলে দিতে মন্ত্রীর ডিও লেটার

প্রকাশিত: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কান্না : পাথর কোয়ারি খুলে দিতে মন্ত্রীর ডিও লেটার

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আধা-সরকারিপত্র পাঠিয়েছেন সিলেট-৪ আসনের সাংসদ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত বৃহস্পতিবার তাঁর স্বাক্ষরিত একটি ডিও (আধা-সরকারিপত্র) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, সরকারি নির্দেশনায় সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। পাথর কোয়ারী খুলে দিতে আন্দোলন করছেন স্থানীয় শ্রমিকসহ পরিবহণ শ্রমিকরা। পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন এই খাতে জড়িত হাজারো মানুষ। পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রির অন্যতম উপকরণ পাথরের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসব বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন সিলেট-৪ আসনের এমপি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
ডিও লেটারে মন্ত্রী লিখেছেন, ‘সিলেটের বিদ্যমান গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারিসমূহ ব্যবস্থাপনা এবং পাথর কোয়ারির তালিকা হালনাগাদ করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ যুগ্মসচিবকে (অপারেশন-২) আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট গঠিত কমিটি কোয়ারিসমূহ পরিদর্শন করে ইতোমধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করেছে মর্মে আমি জানতে পেরেছি। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আমার নির্বাচনী এলাকায় অধিকাংশ পাথর কোয়ারি জাফলং, বিছানাকান্দি, ভোলাগঞ্জ এবং শ্রীপুরসহ আরো অন্যান্য রকায়ারি অবস্থিত এবং এসব এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকা পাথর কোয়ারিরসাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।’
‘কোয়ারিসমূহ থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলেও বিগত কয়েক বছর যাবত সরকারি নির্দেশনায় তা বন্ধ রয়েছে। বন্ধের আগে দীর্ঘদিন যাবত কোয়ারিসমূহ সচল থাকায় অত্র এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কোয়ারি সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে জড়িত ছিল। বেশ কয়েক বছর কোয়ারি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়েছে।’
পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথাও উল্লেখ করে ইমরান আহমদ লিখেন, ‘আপনি অবহিত আছেন যে, কোয়ারিসমূহ ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় প্রত্যেক বছর পাহাড়ি ঢলের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানির সাথে প্রচুর পরিমাণ পাথর আসে। কয়েক বছর পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় ও পাথর উত্তোলন না করায় বর্তমানে অনেক পাথর নদীর প্রবেশপথে স্তূপাকার হয়ে আটকে আছে।
এর কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে জাফলং কোয়ারির পার্শ্ববর্তী খাসিয়াপুঞ্জি, বিছানাকান্দি কোয়ারির পার্শ্ববর্তী বগাইয়া ও বিছানাকান্দি মৌজার এবং ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির কালাইরাগ ও কালাসাদক মৌজাসহ নদীর তীরবর্তী আশপাশের গ্রামসমূহে ভাঙন রদখা দিয়েছে ও এলাকাসমূহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
‘পাথর কোয়ারির প্রবেশ মুখসমূহ উন্মুক্ত করার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিসহ নদীর পানির প্রবাহ ঠিক থাকবে এবং আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশন হবে। এরফলে হাজার হাজার একর জমির ফসল বন্যার পানি হতে রক্ষা পাবে।’
পত্রে কোয়ারি বন্ধ থাকায় বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং এর ফলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্যও তুলে ধরে মন্ত্রী লিখেছেন, “দীর্ঘদিন কোয়ারি বন্ধ থাকায় এবং বেকারত্ব তীব্র হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে অস্থিরতা, অসহায়ত্ব ও হতাশা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এতে সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে। কোয়ারি সমূহ খোলার দাবিতে শ্রমিক সংগঠন ও ব্যবসায়ীরা বছরব্যাপী সভা-সমাবেশ, অবরোধ, মানববন্ধন করে বিভিন্ন পর্যায়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসছে।
সর্বশেষ, কোয়ারি খোলার দাবিতে বিগত ১৭ ডিসেম্বর সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন সহ অবস্থান ধর্মঘট হয়েছে, যা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছে।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী ডিওতে লিখেছেন, ‘এছাড়া বর্তমান সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাথর আমদানি হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে নির্মাণ সামগ্রির অন্যতম উপকরণ পাথরের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এবং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই কোয়ারির পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিলে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
কোয়ারি বন্ধ থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী। তিনি লিখেনে, ‘কোয়ারিসমূহ থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি না দিলে আগামী নির্বাচনে সরাসরি এর বিরূপ প্রভাব পড়বে, যার জন্য আমাদেরকেই সবাই দায়ী করবে।’
সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..