সিলেট ২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশ্যে গাড়ি আটকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামালকে। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহানগর যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান সম্রাট।
এ ঘটনার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছিল সিলেটের রাজনীতি। ৬ নভেম্বর হত্যাকান্ডের রাতে এ ঘটনার জের ধরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা উপলক্ষে টানানো তোরণ, ব্যানার ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের ব্যানার ফেস্টুন ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ।
কামাল হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিলেও শেষ পর্যন্ত নিরব রয়েছে সংগঠনটি। এ নিয়ে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর র্যাব-পুলিশ ৫ আসামীকে গ্রেফতার করলেও প্রধান অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান সম্রাট এখনো অধরা রয়েছে। সে দেশে আছে কি-না সে ব্যাপারেও নিশ্চিত নয় পুলিশ।
গত ৬ নভেম্বর রাতে প্রাইভেটকার চালিয়ে বালুচরস্থ বাসায় ফিরছিলেন বিএনপি নেতা ও সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক জিএস আ ফ ম কামাল। বড়বাজার এলাকায় আসার পর আজিজুর রহমান সম্রাটের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক মোটর সাইকেলে এসে প্রাইভেটকারটির গতিরোধ করে। পরে গাড়ির ভেতরে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে ফেলে যায় তারা। আর্তচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে কামালকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
কামাল হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় নগরীর রিকাবীবাজারে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে লাগানো ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুর করেন তারা। এ ঘটনার পর সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। ওই রাতেই বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করে কামাল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয়। এরপর ওই আল্টিমেটাম থেকে সরে এসে ১৯ নভেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষে কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষ হলেও কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হলে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের পর কামাল হত্যাকান্ডের ঘটনায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার আশ্বাস দেন নেতারা। কিন্তু ঢাকার সমাবেশ শেষ হলেও কর্মসূচি না পেয়ে সেই অসন্তোষ আরও বাড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘কেউ মারা গেলে দলে তার আর কোন মূল্য থাকে না। এজন্য দলের নেতারা কর্মসূচি নিয়ে টালবাহানা করছেন। অথচ কামাল ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির আদর্শের রাজনীতি করে আসছে। দলে তার অবদান অনেক। এভাবে চললে দলের জন্য কেউ কাজ করতে চাইবে না।’
তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই কামাল হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী। তিনি জানান, সিলেট ও ঢাকার গণসমাবেশের কারণে কর্মসূচি দেওয়া যায়নি। তবে শিগগিরই এই ইস্যূতে বিএনপি সিলেটের রাজপথে নামবে।
এদিকে, হত্যাকান্ডের পর র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ আসামীকে গ্রেফতার করে। এছাড়া উচ্চ আদালত থেকে দুই আসামী অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন নেন। কিন্তু এখনো অধরা রয়ে গেছে প্রধান আসামী আজিজুর রহমান সম্রাট। তাকে ধরতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়েছিল র্যাব-পুলিশ। কিন্তু তাকে ধরতে পারেনি। প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেও তার অবস্থান সনাক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, সম্রাটকে গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই তার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তাকে গ্রেফতারে সোর্স লাগানো হয়েছে। দেশ থেকে যাতে পালাতে না পারে সেজন্য সকল ইমিগ্রেশনে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd