সিলেটে জীবাণুমুক্ত না করে চিকিৎসাবর্জ্য ফের বিক্রি: সংক্রামক রোগের ঝুঁকি!

প্রকাশিত: ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২

সিলেটে জীবাণুমুক্ত না করে চিকিৎসাবর্জ্য ফের বিক্রি: সংক্রামক রোগের ঝুঁকি!

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক: হাসপাতাল-ক্লিনিকের চিকিৎসাবর্জ্য দুই ধরনের। ‘পুনঃব্যবহারযোগ্য’ ও ‘পুনঃচক্রায়নযোগ্য’। এর মধ্যে ‘পুনঃচক্রায়নযোগ্য’ চিকিৎসাবর্জ্য ধ্বংস বা নষ্ট করে ফেলতে হয়। আর ‘পুনঃব্যবহারযোগ্য’ বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা যায়।

তবে সিলেটসহ সারা দেশের অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য জীবাণুমুক্ত না করেই একটি চক্র বিক্রি করছে বাইরে। যা আবার নানা হাত ঘুরে স্থান করে নিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধের দোকান এবং হাসপাতাল-ক্লিনিকে।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) ‘চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সূত্র জানায়, দেশের ৩৮টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় এ জরিপ চালায় টিআইবি। এর মধ্যে সিলেটে সিটি করপোরেশন (সিসকি) এলাকাও ছিলো। সিলেট মহানগরের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এই জরিপ চালানো হয়।

Manual8 Ad Code

বিষয়টি মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন টিআইবি’র রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মওলা।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়- হাসপাতালের দুই ধরনের চিকিৎসাবর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি করা হয়, পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও পুনঃচক্রায়নযোগ্য বর্জ্য। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ (সিন্ডিকেটের অংশ) পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য যেমন, ব্যবহৃত কাচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও রাবার/প্লাস্টিক নল নষ্ট না করে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহকারীর (সিন্ডিকেটের অংশ) কাছে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিক্রি করে দেয়। এসব উপকরণ সঠিকভাবে জীবানুমুক্ত করা হয় না। ফলে এসব উপকরণ পুনঃব্যবহারে এইচআইভিসহ মারাত্মক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে।

একইভাবে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণ ইত্যাদি) নষ্ট/ধ্বংস না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙ্গারির দোকানে এবং রিসাইক্লিং কারখানাগুলোতে (সিন্ডিকেটের অংশ) বিক্রি করে দেয়। সংক্রমিত অবস্থায় এসব বর্জ্য পরিবহণ করার ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও রিসাইক্লিং কারখানার কর্মীদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ে। একটি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কেজি প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়- বর্জ্য সংরক্ষণ পাত্রে বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী কালার কোড থাকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালগুলোতে তা প্রতিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৯ শতাংশ হাসপতালের বর্জ্য সংরক্ষণের পাত্রে কালার কোড নেই এবং ৫১ শতাংশ পাত্রে সাংকেতিক চিহ্ন নেই।

Manual8 Ad Code

এছাড়া কোভিড-১৯ ও সাধারণ চিকিৎসাবর্জ্য একত্রে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী চিকিৎসা বর্জ্য পুনঃব্যবহার রোধে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিক নল ও বিভিন্ন ব্যাগ টুকরো করে কাটার নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৮ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিকের ব্যাগ কাটা হয় না এবং ৩১ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিকের নল কাটা হয় না। গাইডলাইন অনুযায়ী পুনঃব্যবহার রোধ করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহারের পরপরই ধ্বংস বা গলিয়ে দিতে হয়। দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ হাসপাতালে সূচ ধ্বংসকারী (নিডল ডেস্ট্রয়ার) যন্ত্রটি-ই নেই।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তারা বর্জ্য নষ্ট না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়।

Manual3 Ad Code

টিআইবি’র রিসার্চ ফেলো নেওয়াজুল মওলা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন- ‘আমাদের জরিপের সঙ্গে দেশের ৩৮টি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সম্পৃক্ত ছিলো। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনও ছিলো।’

তিনি বলেন- সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে আমরা জরিপ চালিয়েছি। তবে নির্দিষ্ট করে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করার নিয়ম নেই আমাদের। সামগ্রিকভাবে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা যায়। তাই আজ (মঙ্গলবার) এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে অবগত করা হয়েছে।

নেওয়াজুল মওলা আরও বলেন- আমরা জরিপকালে হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেছি। সারা দেশেই এসব প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে।

Manual5 Ad Code

বর্জ্য বিনষ্ট না করে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত না করে বিক্রির ফলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..