সিলেট ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:২২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
ক্রাইম প্রতিবেদক: সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক মো. শহিদুল হক। রেলওয়ের জমি দখল, অবৈধ পানির লাইন ও গ্যাস লাইন সংযোগ এবং ভারতীয় তীর জুয়ার বোর্ড সবই শহিদুলের নিয়ন্ত্রণে। রেলওয়ের জমি ইজারা দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এমনকি রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে দোকানকোটা বানিয়ে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এককভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে স্টেশন এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী, মাদকসেবী ও প্রতারক চক্রের সাথেও তার সখ্যতা রয়েছে। এদের কাছ থেকে নেন মাসোয়ারা।
শহিদুল হক বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সুপারভাইজার ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘদিন থেকে সিলেটে অবস্থান করায় পুরো রেলওস্টেশন এলাকা এখন শহিদুলের নিয়ন্ত্রণে। দলের নাম ভাঙিয়ে অপরাধ জগতের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তার কাছে জিম্মি খোঁদ রেলওয়ের কর্মকর্তারাও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন ও পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় একাধিক ভারতীয় তীর জুয়ার বোর্ড রয়েছে। এসব বোর্ড থেকে প্রতি সপ্তাহে বড় অংকের টাকা আদায় করেন শহিদুল। তাছাড়া রেলওয়ের জমি দখল করে দোকানকোটা ও কলোনী নির্মাণ করেছেন তিনি। এসব থেকে মাসে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন শহিদুল। এমনকি রেলওয়ের জমি ইজারা দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, অবৈধভাবে রেলওয়ের কলোনিতে সাপ্লাই পানির লাইন সংযোগ দিয়ে ৫০ হাজার টাকাও অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে ৪০ হাজার টাকা মাসোয়ারা আদায় করেন তিনি। রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবে দলের নাম ভাঙিয়ে রেলওয়ের জমির উপর অবৈধভাবে ১০টি দোকানকোটা নির্মাণ করেছেন তিনি। এসব দোকানকোটা থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া তুলেন শহিদুল। তাছাড়া রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং ভেঙ্গে অবৈধভাবে দোকানকোটা বানিয়ে সেখানে সেলুন ভাড়া দিয়ে মাসে ২৫ হাজার টাকা ভাড়া নেন তিনি।
সূত্র বলছে, রেলের টিকিট কালোবাজারিতেও রয়েছে শহীদুলের হাত। রেওলওয়ে কর্মচারীদের সাথে যোগসাজেশে কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগ রয়েছে শহীদুলের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন থেকে সিলেটে অবস্থান করায় তার কাছে জিম্মি খোঁদ রেলওয়ের কর্মকর্তারাও।
এদিকে রেলওয়ের কাঠ চুরিসহ সরকারি সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে শহীদুল হকের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল না করায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। আর এ সুযোগে রেলওয়ের গুদাম ও ভূমি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে একটি সিন্ডিকেট। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেই এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ সিন্ডিকেটের সাথে শহীদুল হকের নামও রয়েছে।
জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বন্ধ এ রেলপথে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। বন্যার পানির প্রবল স্রােতে অনেক স্থানে রেলপথ সরে গেছে। রেললাইনের নিচ থেকে রাস্তার পাশে স্তুপ হয়ে আছে কোটি কোটি টাকার কাটা পাথর। এতে ঝুলে আছে রেললাইন। বন্যার পানি কমে গেলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। অরক্ষিত এ লাইনের পাশে সরকারি জায়গায় দোকান কোঠা নির্মাণ করে ভাড়া, বালুর স্তুপ ও গাছ-গাছালি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সিলেটের আফজলাবাদ রেলস্টেশন থেকে ছাতক বাজার পর্যন্ত রেললাইনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গোবিন্দগঞ্জ রেলগেটের পাশে রেলের সরকারি জায়গা দখল করে অনেক দোকান নির্মিত হয়। তিনটি দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা পকেটস্থ করছেন আশরাফুল নামের এক গেটম্যান। গত ২ সেপ্টেম্বর রেলগেট সংলগ্ন ৩৯৮/৩ থেকে ৪ এর সীমানায় রেলের সরকারি জায়গায় দুই লাখ টাকা মূল্যের পাঁচটি অর্জুন গাছ কাটার ঘটনায় উপজেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
অভিযোগে জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ রেলগেটম্যান আশরাফুল ইসলামের যোগসাজশে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর লিজকৃত জায়গার সম্মুখের সরকারি পাঁচটি গাছ কাটার অলিখিত চুক্তি হয়। ইতোমধ্যে পাঁচটি গাছের মধ্যে তিনটি কেটে রাতের আঁধারে সরিয়ে নিলেও অর্ধেক কাটা অবস্থায় ঝুলে আছে আরও বড় দুটি অর্জুন গাছ। এসব আলামত ঢাকতে কাটা গাছের গোড়ায় ভিট বালু ও ময়লা দিয়ে রাখা হয়। এসব গাছের পাশ দিয়ে পিডিবির ও পলি¬বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। ঝড় বা বাতাসে গাছগুলো যেকোনো সময় পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এতে ঝুঁকিতে আছেন আম্বিয়া মার্কেট ও সেলিম বেডিংয়ের একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ছাতক বাজার পর্যন্ত অনেক স্থানে রেলপথ বাঁকা হয়ে ঝুলছে। রেলের স্লিপারের নিচের পাথরগুলো রাস্তার পাশে বিশাল স্তুপ হয়ে পড়ে আছে। ছাতক বাজার রেলকলোনিতে ২৩টির অধিক পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে। রোপওয়ের লাইন ও জায়গা দখল করে দীর্ঘদিন ধরে রাখা হয়েছে বিশাল বালুর স্তুপ।
সূত্র জানায়, কলোনিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের আওতায় আনার জন্য তালিকা তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। ছাতক এবং কোম্পানীগঞ্জে রয়েছে কয়েক শতাধিক একর মূল্যবান ভূমি। এখানে রেলওয়ের এসব সম্পদ পুঁজি করে কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত।
সূত্র বলছে, রেল বিভাগের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সুপারভাইজার শহিদুল হক ও গোবিন্দগঞ্জ রেলগেটম্যান আশরাফুল ইসলাম দিনে সিলেটে অফিস করলেও রাতে এদের নেতৃত্বে ছাতক এলাকায় নানা কৌশলে প্রকাশ্যে সরকারি মালামাল লুটপাট ও বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রোপওয়ের নিজস্ব বাংকারের পাথর, রেলওয়ে ছাতক, ছৈলাআফজলাবাদ, সৎপুর স্টেশন, গুদাম, রেলওয়ের লাইনের কোটি টাকা মূল্যের মালামাল বিভিন্ন সময়ে বিক্রি করছেন স্থানীয় লোকজনের কাছে। সব মিলিয়ে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত রেলওয়ের সকল অপকর্মের মূলে বারবার শহিদুলের নাম আসছে।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd