জৈন্তাপুরে অবাধে টিলা কর্তন: প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে নোটিশ!

প্রকাশিত: ২:০৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২২

জৈন্তাপুরে অবাধে টিলা কর্তন: প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে নোটিশ!

Manual5 Ad Code

ক্রাইম প্রতিবেদক:
সিলেট জেলার পাশ্ববর্তী উপজেলার জৈন্তাপুর প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় চলছে অবাধে পাহাড় ও টিলা কর্তনের মহোউৎসব আর ধ্বংস হচ্ছে জৈন্তাপুরের প্রকৃতি ও খনিজ সম্পদ। প্রশাসনের লোক দেখানো আইওয়াশ অভিযানে পাহাড় ও টিলা কর্তন সাময়িকভাবে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও অদৃশ্য কারণে ফের পরিবেশ ধ্বংস করার এ কাজে লিপ্ত হচ্ছে একটি অসাধু ভূমিখেকো সিন্ডিকেট।

Manual5 Ad Code

অনুসন্ধানে ওঠে আসে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের হরিপুর ও শিকারখাঁ গ্রামে বেশ কয়েকটি বড় বড় টিলা কর্তনের মহোৎসবের দৃশ্য। জনগণের আইওয়াশ করতে টিলা কর্তন বন্ধে প্রশাসন নামে মাত্র লোক দেখানো একটি টিলায় অভিযান পরিচালনা করেই শেষ হয়ে যায় অভিযান কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আড়ালে থেকে যায় ৫ থেকে ৬টি টিলা। যার ফলে কোন অবস্থাতেই বন্ধ হচ্ছে না টিলা ও পরিবেশ ধ্বংসের এমন ধ্বংস লীলা। এমনকি এই উপজেলা জুড়ে টিলা কর্তনের উৎসব চলছে নির্ভয়ে এ যেনও দেখার কেউ নেই!

Manual8 Ad Code

অদৃশ্য কারণে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্ত থেকে এ উপজেলায় এমন ধ্বংস লীলা বন্ধে নেই কার্যকরী কোন ভূমিকা। তাদের পক্ষ থেকে এই উপজেলায় লোক দেখানো অভিযান হলেও অদৃশ্য কারণে ধরাছোয়ার বাহিরে রয়ে যায় প্রকৃত অপরাধী সিন্ডিকেট আর প্রতিনিয়ত বিপাকে পরেন আমজনতা।

Manual4 Ad Code

বলছি জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং ফতেপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শিকার খাঁ মৌজার জে, এল নং- ১৪২, দাগ নং- ৪, ৯ ও ১১, এই তিনটি দাগে মোট জায়গার পরিমাণ- ১৫৩ শতকের অধিক জায়গা জুড়ে রয়েছে একটি বেশ বড় পাহাড় ও টিলা। যার আশপাশে রয়েছে বসতবাড়ি। প্রকাশ্যে এই টিলা কর্তন করে দিনে এবং রাতে অনায়াসে পাড়ার ও টিলার লাল মাটি অন্যথায় বিক্রি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ভূমিখেকো সিন্ডিকেট। তবে এই টিলা কর্তন-কে কেন্দ্র করে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।

সরজমিনে স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান- উক্ত টিলার মৌরসি মালিক হচ্ছেন হরিপুর এলাকার মৃত হাজী নূর মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী গং। মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে তার এই মালিকানা পাহাড় ও টিলা হইতে শিকার খাঁ এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র এই উপজেলার চিহিৃত টিলা খেকো নামে ব্যাপক পরিচিত আব্দুল মালিক ওরফে টিলা মালিক, বালিপাড়া এলাকার আব্দুল জলিলের পুত্র মাটি খেকো মোঃ আলী আহমদ, একই এলাকার আব্দুল মালিকের পুত্র কবির আহমদ ও হরিপুর এলাকার চিহিৃত টিলা খেকো রাঙ্গা ওরফে মাটি রাঙ্গা উক্ত টিলা কর্তন করে মহরী আব্দুল মতিন, জৈন্তাপুর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমির উদ্দিন গংদের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট হরিপুরের ১০ নং গ্যাস কূপে অনায়াসে লাল মাটি বিক্রি করছে।

তারা আরোও জানান- উক্ত টিলা কর্তন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী কয়েক দফায় সেখানে কয়েক বার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালোনা করে এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের অর্থদন্ড প্রদান করলেও তাদের সঙ্গে সরকার দলীয় কিছু পাতি নেতা জড়িত থাকায় অদৃশ্য কারণে সেখানে স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না টিলা কর্তন।

Manual8 Ad Code

এদিকে উক্ত টিলার প্রকৃত মাটি কর্তনকারী সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো উক্ত টিলা কর্তনের অভিযোগে একই এলাকার নিরীহ, দিনমজুর ও পরিবেশ রক্ষায় যাদের ভুমিকা অতুলনীয় এমন কয়েকজন লোকের বিরুদ্ধে স্মারক নং- ২২.০২.৯১০০.৩১১.৫৮.৭৩৪.২২.৭৩৪ এর মাধ্যমে গত ২৮/১১/২২ ইং তারিখে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর হইতে পরিবেশ ক্ষতি সাধনের অপরাধে আগামী ০৭/১২/২২ ইং তারিখে সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে শুনানীতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন সিলেট বিভাগীয় পরিচালক এমরান হোসেন। উক্ত নোটিশপ্রাপ্ত ভুক্তভোগীরা হচ্ছেন- ১। আহমদ আলী (৬৮), পিতা- মৃত আব্দুর রহমান, পেশা- দিনমজুর, ২। ময়না মিয়া (৫৫), পিতা- মৃত কুদরত উল্লাহ, পেশা- দিনমজুর, ৩। ইন্তাজ আলী (৪০) ও ৪। তাজুল ইসলাম (৩৮), উভয় পিতা- মহছিম আলী, উভয় পেশা- ব্যবসা, সর্ব সাং- উমনপুর, সর্ব থানা- জৈন্তাপুর, জেলা- সিলেট। গত ৩০/১১/২২ ইং তারিখে তাদের নিকট সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তের পাঠানো উক্ত নোটিশ পৌঁছার পর পরই এই নোটিশকে কেন্দ্র করে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এমনকি উল্লেখিত টিলা কর্তনকারী সিন্ডিকেট ও নোটিশপ্রাপ্ত ভুক্তভোগীদের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এমন নোটিশের কারণে বর্তমানে এলাকায় তমতমে অবস্থা বিরাজমান।

এ ব্যাপারে নোটিশপ্রাপ্ত ভুক্তভোগীরা সাক্ষাতে জানান- তারা একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার। পরিবেশ ক্ষতিসাধনত দুরের কথা আমরা পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন সময় বর্ণিত টিলা থেকে টিলা মালিক ও তার সহযোগী টিলা খেকোদের টিলা কর্তনে বাধা-আপত্তি প্রদান করলে তারা আমাদের বাধা উপেক্ষা করে অবলীলায় ট্রাক দিয়ে ১০নং গ্যাসকূপসহ বিভিন্ন স্থানে মাটি বিক্রি করছে যা এখনও চলমান। আর আমাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে আমরা প্রায় সময়ই টিলা কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করে থাকি আর সে কারণে কয়েকবার উপজেলা প্রশাসন সরজমিন র্স্পটে এসে এই চক্রকে অর্থদন্ড প্রদানও করেছেন। তবে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাদের বিরুদ্ধে অযথা হয়রানি মূল নোটিশ প্রদানের পিছনে নৈপথ্যের মূল নায়ক হচ্ছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের এক অসাধু কর্মকর্তা। তিনি জৈন্তাপুরের খারুবিল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাধে তার যোগসুত্রেই উক্ত টিলাসহ জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে টিলা কর্তনের ধ্বংস লীলা এবং অবৈধভাবে টিলা খেকোদের নিকট হইতে তার পকেটে ডুকছে উৎকোচ। আমাদের দীর্ঘ বিশ্বাস আসল অপরাধী চক্রকে আড়াল করতেই আমাদের বলির পাঠা বানিয়েছেন তিনি। এ কারণেই হয়তো পরিবেশ কর্তারা চোখে কালো চশমা পড়ে আছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক বদরুল হুদার মুটুফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আমি এই নোটিশ করি নি নোটিশে দেখুন নোটিশ কে করছেন। আর যাদের বিরুদ্ধে নোটিশ করা হইছে সেই তথ্য আমাদের জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিয়েছেন। উনার তথ্যের ভিত্তিতে ৫টি চক্রকে নোটিশ করা হয়েছে এর মধ্যে ৩টি চক্রকে জরিমানাও করা হইছে। তবে কোন চক্র হেযারিংয়ে এসে হয়তো তাদের নাম বলেছে বিধায় তাদের নামে নোটিশ হইছে। যাইহোক হেয়ারিং হোক হেয়ারিং হলে এসব বুঝা যাবে। আর আপনাদের মাধ্যমে আমরা যে তথ্য পেয়েছি সেই তথ্য অনুযায়ী আমি এখন সেই র্স্পটে সরজমিনে যাচ্ছি এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করলেও এ রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া পযর্ন্ত শনিবার বেলা ০২:১০ ঘটিকায়ও পরিবেশ অধিদ্প্তরের কোন টিম সরজমিনে এই র্স্পটে যায় নি বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ এমরান হোসেনের মুঠুফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দুই বারই কল রিসিভ করেন কিন্তু রিসিভ করে কথা না বলায় বক্তব্য সংগ্রহ করা যায় নি।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক ড. আবদুল হামিদের মুঠুফোনে যোগাযোগ করলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী জানান- আমি ইতিমধ্যে কয়েকটি চক্রের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট প্রতিবেদন দিয়েছি। তবে যাদের বিরুদ্ধেই আমি প্রতিবেদন দিয়েছি তারা সবাই প্রকৃতপক্ষে টিলার মালিক। আপনারা জানেন ইউএনও স্যার ও আমি টিলা কাটার ঘুর বিপক্ষে। এমনকি আপনারা দেখেছেনও টিলা কাটার কোন সংবাদ পেলে রাত ২টা কিংবা ভোর ৪টায় ইউএনও স্যার ও আমি প্রায় সময়ই অভিযান পরিচালোনা করে থাকি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে টিলা কাটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হচ্ছেনা তা আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি। ডিসি স্যারের নির্দেশনায় টিলা কাটা কিংবা মাটি কাটা বন্ধে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..