২০ হাজার টাকায় উত্তরাধিকারী সনদ দিলেন সিসিক কাউন্সিলর!

প্রকাশিত: ৫:৪১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২২

২০ হাজার টাকায় উত্তরাধিকারী সনদ দিলেন সিসিক কাউন্সিলর!

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : উত্তরাধিকারী সনদপত্র দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। একজন গাড়িচালকের মাধ্যমে এ লেনদেনের একাধিক কথোপকথনের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আজ শনিবার সিলেটে তোলপাড় চলছে।
অডিও ক্লিপ ও ভিডিও বিশ্লেষণ ও খোঁজ নিয়ে জানা দেখা গেছে, যুক্তরাজ্য প্রবাসী কাউসার আহমদের উত্তরাধিকারী সনদপত্রের প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এসময় কাউন্সিলর ২০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানান। অজুহাত হিসেবে কাউন্সিলরকে বলতে শোনা যায়, ‘উত্তরাধিকারী সনদ জেলা প্রশাসন দিয়ে থাকেন। তাই টাকা জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে। ’ পরে প্রবাসীর প্রতিনিধিরা প্রথমে ১০ হাজার টাকা এবং পরে সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর আরো ১০ হাজার টাকা দেন।
ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনে নান্নু নামে এক ব্যক্তি কাউন্সিলর লায়েককে বলতে শোনা যায়, ‘কার নামে বিকাশ করা হবে তার নাম জানান। কারণ ওই দেশ (যুক্তরাজ্য) থেকে টাকা ছাড়তে হলে এসব লাগে। ’ তখন লায়েক দুইবার না, না বলেন। তিনি নান্নুকে বলেন, ‘তোমার বিকাশ নম্বরে আনাও (টাকা)। আমার নামে না। ’ পরের অডিও কথোপকথনে কল দাতা বলেন, ‘লায়েক ভাই নাকি?’ উত্তরের কাউন্সিলর বলেন, ‘অয়, অয়। ’ তখন কলদাতাকে বলতে শোনা যায়, ‘কাউসার ভাইয়ের কাগজের বিষয়ে যে কথা বলেছিলাম, উত্তরাধিকারীর কাগজের কথা। টাকা আমার বিকাশ নম্বরে তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কখন টাকা নিয়ে আপনার কাছে আসব। কাগজ কখন দেবেন। আপনার কাছে ফটোকপি আছে তো?’
উত্তরে কাউন্সিলর বলেন, ‘তুমি রাতেই দেখা করো। তাহলে সকালে নিয়ে যেতে পারবে। টাকা উঠাও বিকাশ থেকে। ’ এটুকু বলার পর থেমে গিয়ে বলেন, ‘এসব টাকা-পয়সার কথা আমার সঙ্গে বলো না। বুঝেছ। ’ তারপর বলেন, ‘তুমি পয়সা উঠিয়ে নিয়ে আসো, আমি ব্যবস্থা করে দেব নে। ’
এর পরের অডিও ক্লিপে দেখা যায় কাউন্সিলর কল দিয়ে ওই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করছেন, ‘তুমি কোথায়। ’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছাতকের একটা ট্রিপ (যাত্রী বহনের জন্য রিজার্ভ করা হয়েছে) পেয়েছি ভাই, নিয়ে যাচ্ছি। ’ কাউন্সিলর বিরক্তি নিয়ে বলেন, ‘তোমার কাগজের কাজ যখন আমি করব এখন তুমি চলে গেলে। ’ উত্তরে ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘সকালে আসবনে। ’ কাউন্সিলর লায়েক তখন বলেন, ‘আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হবে। কতক্ষণ লাগবে আসতে?’ ওপাশ থেকে, ‘তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা। ’
কাউন্সিলর বলেন, ‘ঠিক আছে, তুমি আসো আমি তোমার কাগজ রেডি করে রাখছি। ’ এদিন আরেকবার কথোকথন হয় তাদের মধ্যে। পরের দিন কাউন্সিলরের ফোনে কল দিয়ে জানতে চাওয়া হয় তিনি বাসায় আছেন কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, ‘২০ মিনিট পরে পাবে। ’ তখন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি এখন টানাটানি করে ১০ হাজার টাকা মিলিয়েছি। ’ কাউন্সিলর কথা থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এসে কথা বলো। ’
এরপর আরো কয়েক দফা কথোপকথন হয়। এ পর্যায়ে ওই লোক উত্তরাধিকারী সার্টিফিকেট দ্রুত দেওয়ার তাগাদা দিলে কাউন্সিলর বলেন, ‘আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলি, এটা আমরা ফ্রেশ বানিয়ে ডিসি অফিসে (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) জমা দেব। আজকে আর হবে না। আজকে সময় চলে গেছে। আজকে আরেকজনের করিয়ে এনেছি। ’ তখন ওই ব্যক্তি কৈফিয়ত দিয়ে বলেন, ‘আমার টাকা জোগাড় করতে একটু দেরি হয়েছে। ’ তিনি তখন বলেন, ‘আজ হবে না, অফিস টাইম আর নেই। ’ কথোপকথনের এক পর্যায়ে ‘টাকা গুণে নেওয়ার শব্দ শোনা যায়। ’ পরবর্তী সময়ে কাউন্সিলরের কার্যালয়ের রাহি নামে একজনের কাছে বাকি ১০ হাজার টাকা দিয়ে উত্তরাধিকারী সার্টিফিকেট বুঝে নিতে দেখা যায় লম্বা চুলের একজনকে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোবাইল ক্লিপের গলা কাউন্সিলর লায়েকের বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘গলা কাউন্সিলর লায়েকের। ’
এ বিষয়ে জানতে সিসিকের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম লায়েকের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তাঁর স্ত্রী কল রিসিভ করে বলেন, ‘আগের রাতে উনার গলায় অপারেশন হয়েছে। তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই। ’
উত্তরাধিকারী সনদপত্র পেতে কোনো ফি দিতে হয় না বলে জানিয়েছেন সিলেট সিসিকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলরই মূলত উত্তরাধিকারী সনদ দিয়ে থাকেন। তবে তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নাগরিককে দেওয়ার বিধান রয়েছে। ’
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। ’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..