চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ন্যায়সংগত দাবি মেনে নিতে হবে : সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২২

চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ন্যায়সংগত দাবি মেনে নিতে হবে : সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট

Manual2 Ad Code

নিজস্ব ডেস্ক: চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ন্যায়সংগত দাবিতে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

(১৭ আগস্ট) বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টায় আম্বরখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু জাফর এর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক প্রণব জ্যোতি পাল এর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য জাহেদ আহমদ, ইউসুফ আলী মনজুর আহমদ, মুন্না আহমদ, সৈকত আহমদ প্রমুখ।

Manual1 Ad Code

সমাবেশে বক্তারা চা শ্রমিকদের দ্বি-বার্ষিক চুক্তি সম্পাদনে দীর্ঘসুত্রিতার নিন্দা জানিয়ে ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং মজুরি বৃদ্ধিসহ চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিসমুহ মেনে নিয়ে অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে বলেন চা শ্রমিকরা দৈনিক নগদ মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ ৭ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে। চা শ্রমিকরা যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির জন্য আন্দোলন করছে সেই চুক্তির মেয়াদ শুরু হয়েছে ১ লা জানুয়ারী ২০২১ থেকে অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদের প্রায় ২০ মাস অতিক্রান্ত হতে চলেছে অথচ এখনো চুক্তিই স্বাক্ষর হয়নি। এর আগে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে “বাংলাদেশ চা সংসদ” ও “বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন” এর মধ্যে ২০১৯-২০ মেয়াদের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম চলমান অবস্থায় এত কম মজুরিতে চুক্তি করার মাধ্যমে মজুরি বোর্ড কে প্রভাবিত করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সেই সময়ও চা শ্রমিক ইউনিয়ন ৩০০ টাকা মজুরির দাবি করেছিল। মুদ্রাস্ফীতি, নিত্যপণ্যের মুল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার প্রকৃত মূল্য কমে গেলেও চা শ্রমিক ইউনিয়ন এখনো ৩০০ টাকার দাবিতে আটকে আছে। বিলম্বিত চুক্তির মাধ্যমে মালিকরা একদিকে শ্রমিকদের অন্তত একটার্মের মজুরি বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত করছে অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের পাওনা সময়মত পরিশোধ না করে সঞ্চয়ের সময়জনিত মুনাফার মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে।

Manual3 Ad Code

নেতৃবৃন্দ বলেন, চা শ্রমিকরা বছরে ৯ কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদন করে যার খুচরা বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। একজন চা শ্রমিক দিনে তোলা ২৩ কেজি পাতা থেকে প্রায় ৬ কেজি চা উৎপাদন হয়। ২৩ কেজি পাতা তুলতে একজন চা শ্রমিককে মজুরি হিসাবে দেওয়া হয় মাত্র ১২০ টাকা। যা দিয়ে বর্তমান বাজারে একজন মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ করা যায় না। অথচ ৫ লক্ষাধিক চা জনগোষ্টির বিপরীতে চা বাগানে স্থায়ী শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা এক লক্ষ কয়েক হাজার অর্থাৎ একজন চা শ্রমিকের উপর পরিবারের ৩ থেকে ৪ জন সদস্য নির্ভরশীল।

অর্থাৎ ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও বর্তমান বাজারে ৪ বা ৫ সদস্যের চা শ্রমিক পরিবারের জন্য খাদ্য বাবদ প্রয়োজনীয় ব্যয় পুরণ হওয়া কঠিন। বাংলাদেশে যে সময় চা শ্রমিকদের মাত্র ১২০ টাকা মজুরি দেওয়া হচ্ছে সেই সময় প¦ার্শ্ববর্তী আসামে চা শ্রমিকদের বর্তমান মজুরি দৈনিক ২৩২ রুপি যা বাংলাদেশি টাকায় ২৭৭ টাকা। সেখানে নিত্যপণ্যের মুল্য অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন করছে।

Manual4 Ad Code

চা উৎপাদনকারী অন্যান্য রাস্ট্রের শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন রাখেন, যে সময় সরকার মাথাপিছু আয় ৩০০৭ ডলার অর্থাৎ ৪ সদস্যের পরিবার প্রতি মাসিক আয় ৯৫ হাজার টাকা হওয়ার কথা বলছেন সেই সময় চা শ্রমিকদের পরিবার প্রতি মাসিক আয় মাত্র ৩৬০০ টাকা কিভাবে গ্রহণযোগ্য? চা শ্রমিক পরিবার কে ক্ষুধার্ত রেখে কিভাবে ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জিত হবে?
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মালিকের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি, মালিকদের অমানবিক মুনাফালিপ্সা আর চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্বের আপোষকামিতা বা অযোগ্যতার কারণে চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ বছর পরে ১৭০ টাকাও হয়নি। তাছাড়া কাজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মজুরি বাড়ার স্বাভাবিক রীতিও কার্যকর করা হয়নি।

 

ফলে যৌবনের পূর্ণ শক্তি ব্যয় করে শুধূ মাত্র খাদ্য সংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে না পারায় বার্ধক্যে অসহায় চা শ্রমিকরা পারিপাশ্বির্ক সমাজের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করতে বিনামূল্যে চিকিৎসা, আবাসন, ভর্তুকীমূল্যে রেশন ইত্যাদি নানা কারনের কথা বলা হয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে, কোনো প্রতিষ্ঠানের যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধির কাজ হলো আইন প্রাপ্ত সুবিধার তুলনায় বাড়তি কিছু আদায় করা অথচ চা শ্রমিকরা শ্রম আইনে প্রদত্ত সুবিধাবলি থেকেও বঞ্চিত। বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলা হলেও নামমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার কোনো উপকরণ থাকেনা।

চুক্তিপত্রে মজুরি ব্যাতিত অন্যান্য শর্তগুলি দিনের পর দিন অপরিবর্তিত থাকলেও বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। নেতৃবৃন্দ, চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান এবং মানবিকতা এবং সামাজিক ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে চা শিল্পের বিকাশে কোন ধরণের চাতুরি না করে চা শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায়ে সহযোগিতা করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান এবং চা শ্রমিকদের দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়াতে ভুমির অধিকারের স্বীকৃতি প্রদানের জোর দাবি জানান।

ক্রাইম সিলেট/রায়হান

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2022
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..