ছাতকের রেলওয়ে বিভাগ ধ্বংসের পথে: দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ১২:২১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২১

ছাতকের রেলওয়ে বিভাগ ধ্বংসের পথে: দেখার কেউ নেই

হাসান আহমদ, ছাতক :: সুনামগঞ্জের ছাতবাজার রেলওয়ে বিভাগটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আলো থেকে অন্ধকারে নিম্মজ্জিত হচ্ছে। রেলপথ, রোপওয়ে ও দেশের একমাত্র সরকারি কংক্রীট স্লীপার প্লান্টি ধ্বংসের পথে। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর ছাতকবাসী হারাতে বসেছে ঐতিহ্য। জনবল সংকট, কিছু কর্মকর্তার অনিয়ম-দূর্নীতিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ববহেলায় বিভাগটি আজ এমন দশায় পরিণত হয়েছে। সরকারের এ গুরুত্বপূর্ন বিভাগটি কখন অন্ধকার থেকে আলোর মূখ দেখবে এমনটাই মনে করছেন ছাতক উপজেলাবাসী।
জানা যায়, ১৯৫৪ইং সালে ছাতক-সিলেট ৩৫ কিলোমিটার রেলপথটি স্থাপিত হয়। ১৯৮৫ইং পর্যন্ত যাত্রী সেবায় ট্রেন ছিল একনিষ্ট। ছাতকবাজার রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন চারটি ট্রেন সিলেটে যাতায়াত করতো। এগুলোর সাথে মালামাল পরিবহনের জন্য ৪টি বগিতে সিমেন্ট, পাথর, চুনা পাথর, তেজপাতা ও কমলা লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কম খরচে পরিবহন করা হতো। এক সময় সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নদী পথে লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে লোকজন ছাতকে এসে জড়ো হতেন। এখানে রাতযাপন করে পরদিন সকালে ট্রেন যোগে সিলেটসহ সারা দেশে যাতায়াত করতেন। তেমনি সিলেট থেকে ট্রেন যোগে ছাতকবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ জেলাবাসী যাতায়াতের এক মাত্র প্রধান মাধ্যম ছিল এ ঐতিহ্যবাহী রেলপথ। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশের সাথে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। করোনাসহ ট্রেনের ইঞ্জিন সĽট দেখিয়ে ১১মাস পার হলেও প্রাচীনতম এ রেলপথে ট্রেন চালু করা হচ্ছে না। যাত্রীরাও ট্রেনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ট্রেন পরিবহনে স্বল্প ভাড়ার পরিবর্তে এ অঞ্চলের মানুষ সড়ক পথে গুনতে হচ্ছে অধিক ভাড়া।
লোকমুখে শুনা যাচ্ছে, ছাতকবাজার থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত নতূন রেলপথ চালুর পরিকল্পনাটি অন্য পথে হাটছে। ছাতকবাজার থেকে নতূন রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনাটি থাকলেও রহস্যজনক কারণে এটি গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্ট এলাকা থেকে রেলপথের কাজ শুরু হবে। তবে এ বিষয়ে সু-নির্দিষ্ট কোন তথ্য তাদের কাছে নেই বলে ছাতকবাজার রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এমন পরিকল্পনা হলে ছাতকবাজার রেলওয়ে বিভাগটি পুরোদমে মরা বিভাগে পরিণত হবে বলে মনে করছেন শহরবাসী। ট্রেন চলাচল ও রোপওয়ে বন্ধ থাকায় বিভাগের সকল কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।
ছাতকবাজার নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯৪ একর জায়গা রয়েছে রেলওয়ে বিভাগের। এখানে ৯৯টি সরকারী বাসা-বাড়ির মধ্যে ছাতকবাজারসহ বিভিনś স্থানের কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারির জন্য বরাদ্দ আছে ৫৪টি। অবৈধ বাসা-বাড়ির তালিকা রয়েছে ১০টি। অন্যান্য বাসা-বাড়িতে বসবাসের উপযোগি নয়। এ দপ্তরে মঞ্জুরীকৃত ১৫৩টি পদের মধ্যে আছেন ৩৪জন। শুন্য পদ রয়েছে ১১৯টি।
এদিকে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ইং সালে নির্মিত হয় ছাতক-ভোলাগঞ্জ ১৯ কিলোমিটার রোপওয়ে। নির্মাণের পর কিছুদিন চালু থাকলেও স্বাধিনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ রোপওয়ে পূনর্বাসন ও পূনরায় চালু হয়েছিল ১৯৮০ সালে। এর পর থেকে এটি চালু ছিল। কিন্তু মাঝে মধ্যে যান্ত্রিত ক্রটির কারণে বন্ধ হলেও পরবর্তীতে চালু করা হতো। এ রোপওয়ে ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর পরিবহন করা হতো। কিন্তু ২০১৩ সালে এসে থেমে যায় রোপওয়ে। দীর্ঘ ৯বছর ধরে আজও বন্ধ রয়েছে সরকারী লাভজনক এ প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর বন্ধ থাকা রোপওয়েটি ভাড়া হিসেবে চালু করে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে আবেদন করেছিল প্রাইম সিমেন্ট কোম্পানী। তাতেও সাড়া পায়নি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।
অপরদিকে ১৯৮৮ সালে ছাতকবাজার রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ৬ একর জায়গার উপর নির্মিত হয় প্রি-স্ট্রেসড (এমজি) কংক্রীট স্লীপার। এটি নির্মাণ করেন ইন্ডিয়ার ইরকম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণের পর টানা কংক্রীট স্লীপার প্লান্টটি চালু থাকলেও পরবর্তী সময়ে যান্ত্রিক ক্রুটিসহ বিভিন্ন অযুহাতে বন্ধ হয়ে পূনরায় চালু হচ্ছে। এমন অবস্থায় চলছে এ প্লান্টি। এ ব্যাপারে ছাতকবাজার রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মো. হাবিবুল্যাহ বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে রোপলাইনটি মেরামত করে পূনরায় চালু করা সম্ভব আছে। রোপলাইনকে রেল পর্যটন হিসেবে ব্যবহার করা হলে সরকার রাজস্ব খাতে লাভবান হবে। কংক্রীট স্লীপার প্লান্টি তিনি ডোয়েল গেজ করার জন্য প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন। অনুমতি পেলে তিনি কংক্রীট স্লীপার উৎপাদনে আলো দেখাতে চান।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..