দুই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পিকে হালদারের ২৫ বার বিদেশ ভ্রমণ

প্রকাশিত: ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১

দুই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পিকে হালদারের ২৫ বার বিদেশ ভ্রমণ

Manual1 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ৭০ থেকে ৮০ বান্ধবীর কথা শোনা যায়। তবে তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন দুজন, যাদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তাদের নিয়ে পৃথক পৃথক ২০ থেকে ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড প্রমোদ ভ্রমণ করেছেন পিকে হালদার। বিশেষ দুই বান্ধবী হলেন- অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই।

এর মধ্যে নাহিদা রুনাইয়ের ছিল অসীম ক্ষমতা। তার ক্ষমতার উৎস ছিলেন পি কে হালদার। যার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটির টাকার লেনদেনের তথ্য রয়েছে।

শুধু তাই নয়, অবন্তিকা ও রুনাইয়ের মধ্যে ছিল পিকে হালদারকে নিয়ে চরম প্রতিযোগিতা। ওই সময়ে সবাই রুনাইকে বড় আপা এবং অবন্তিকাকে ছোট আপা বলে ডাকতেন। কারণ রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, আর অবন্তিকা চালাতেন পিপলস লিজিং।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার পিপলস লিজিংয়ে চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারক আতিকুল ইসলামের কাছে তিনি জবানবন্দি দেন। আদালত ও দুদক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

উজ্জ্বল কুমার নন্দী তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘পিকে হালদার বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্ন দেশে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাতেন। আমি তিনবার মালয়েশিয়া গিয়েছি। এর মধ্যে দুবার পিকে হালদারের সঙ্গে। আমার সঙ্গে অমিতাভ অধিকারী, রাজীব সোমও মালেয়শিয়া যান। মূলত ইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনার জন্য পিকে হালদারের সঙ্গে আমার মালয়েশিয়াতে যাওয়া। একবার ফ্যামিলি ট্যুরে গিয়েছিলাম। প্রতিবারই ভ্রমণের সব খরচ দিয়েছেন পিকে হালদার। আমি সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে দু-তিনবার গিয়েছি। এসব ভ্রমণে আমার সঙ্গী হতেন রাজীব সোম, অমিতাভ অধিকারী ও অবন্তিকা বড়াল।

জবানবন্দিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই। অবন্তিকা ও রুনাইয়ের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে তিনি ২০-২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে প্রমোদ ভ্রমণ করেছেন। অবন্তিকা ও রুনাইয়ের মধ্যে ছিল পিকে হালদারকে নিয়ে চরম প্রতিযোগিতা। যদি পিকে হালদার গোপনে অবন্তিকাকে নিয়ে সিঙ্গাপুর ঘুরতে যেতেন এবং এটা যদি কোনোভাবে রুনাই জানতে পারতেন তাহলে পিকে হালদারের ওপর শারীরিক নির্যাতনও চালাতেন নাহিদা রুনাই।

Manual4 Ad Code

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে উজ্জ্বল কুমার নন্দী তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘একবার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে গিয়ে পিকে হালদারের সঙ্গে নাহিদা রুনাই প্রচুর ঝগড়া করেন। রাতে পিকে হালদারের বাসায় গিয়ে তার রুম ভাঙচুর করেন নাহিদা রুনাই। তাকে না জানিয়ে গোপনে অবন্তিকার সঙ্গে মেলামেশা একদম সহ্য করতেন না তিনি। গোপনে সংবাদ পেয়ে একবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে পিকে হালদারকে ধরে ফেলেন রুনাই। তিনি অবন্তিকার সঙ্গে বিদেশে যেতে না দিয়ে পিকে হালদারকে ফেরত নিয়ে আসেন। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পিকে হালদার আলাদা আলাদা সময় কাটাতেন। আমরা সবাই রুনাইকে বড় আপা এবং অবন্তিকাকে ছোট আপা ডাকতাম। কারণ রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, অবন্তিকা পিপলস লিজিং। রুনাইয়ের অসীম ক্ষমতা একমাত্র উৎস ছিলেন পিকে হালদার। তাই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রুনাই। কয়েক বছরে তার বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে প্রায় ৭২ কোটির টাকার ট্রান্সজেকশন (লেনদেন) রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন নাহিদা রুনাই। যাকে ২৫ জানুয়ারি দুদকের দায়ের করা পাঁচ মামলার অন্যতম আসামি করা হয়। অন্যদিকে, অবন্তিকা বড়ালকে ২০১৬ সালে সাড়ে চার কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনে দেন পিকে হালদার। যে কারণে অবৈধ সম্পদের মামলায় আসামি হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন অবন্তিকা।

Manual6 Ad Code

জবানবন্দিতে উজ্জ্বল কুমার নন্দী আরও উল্লেখ করেন, পিকে হালদার রিলায়েন্স লিজিং থেকে বিভিন্ন কায়দায় ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় হাজার কোটি টাকা বের করেন এবং পরে চাপে পড়ে গেলে একই কায়দায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ বের করে রিলায়েন্সের দেনা পরিশোধের চেষ্টা করেন। এ কাজে আমি (উজ্জ্বল কুমার নন্দী), নাহিদা রুনাই, আল মামুন সোহাগ, রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, সৈয়দ আবেদ হাসানসহ প্রায় ৪০-৪২ জনকে তিনি ব্যবহার করেছেন।’

তিনি আরও স্বীকার করেন, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেন পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান। যার পুরো টাকাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ঋণের অর্থ দিয়ে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের বর্ণ’র নামে ঋণ হিসাব ও আরবি এন্টারপ্রাইজের দুটি ঋণ হিসাবে মোট ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়। এরপর ১৯টি চেকের মাধ্যম ২২ কোটি টাকা শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের কারওরান বাজার শাখায় নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির নামে পরিচালিত হিসাবে স্থানান্তরের পর পুনরায় বিভিন্ন হিসাবে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়। আর ঋণসীমার চেয়ে অতিরিক্ত ৮.৮১ কোটি টাকা বিতরণ এবং ঋণ গ্রহণের পর কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ঋণ নেওয়া হলেও এর পুরো অর্থ রিলায়েন্স ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন পিকে হালদার।

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হককে ২৪ জানুয়ারি সেগুন বাগিচা এলাকা থেকে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান গ্রেপ্তার করেন।

Manual7 Ad Code

ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পিকে হালদারের সহযোগী হিসাবে ৬২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পিকে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল। এছাড়া গত ২৫ জানুয়ারি পিকে হালদার কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৩ শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচ মামলা করে দুদক।

Manual3 Ad Code

মামলার অভিযোগে আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, মেসার্স বর্ণ’র নামে ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, রাহমান কেমিক্যালস লিমিটেডের নামে ৫৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ও মুন এন্টারপ্রাইজের নামে ৮৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এরই মধ্যে পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারি ও রাশেদুল হক ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728  

সর্বশেষ খবর

………………………..